Logo

মতামত

এই মুহূর্তে কেন ‘ধুরন্ধর’ নির্মিত হলো

Icon

রফিক সুলায়মান

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:২৯

এই মুহূর্তে কেন ‘ধুরন্ধর’ নির্মিত হলো

ধুরন্ধর সিনেমাটি তারকাসমৃদ্ধ। আর মাধবন, অক্ষয় খান্না, সঞ্জয় দত্ত, অর্জুন রামপাল এবং রণবীর সিং— পাঁচ জন গ্রেট অভিনেতার মাঝখান থেকে সমস্ত আলো কেড়ে নিয়েছেন ‘রহমান ডাকাইত’ অক্ষয় খান্না। কিছুদিন আগেই চাভা সিনেমা দিয়ে দর্শকদের মাতোয়ারা বানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সম্রাট আওরঙ্গজেব চরিত্রে তার অভিনয় ভোলার মতো নয়। সেই রেশ বেঁচে থাকতেই এবার এসেছেন বালুচ ক্যারেক্টার রহমান ডাকাইত নিয়ে। ভারত জুড়ে অক্ষয়-বন্দনা চলছে এখন।

এনিম্যাল দিয়ে কামব্যাক করেছিলেন লর্ড ববি দেওল। চাভা দিয়ে অক্ষয় খান্না। আর ধুরন্ধর দিয়ে স্থায়ী চিহ্ন এঁকে গেলেন।

রহমান ডাকাইত একটি বাস্তব চরিত্র। কয়েক বছর আগে পুলিশ হেফাজতে তিনি নিহত হন। তার স্ত্রী-পুত্র এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছিলেন। কিন্ত অজস্ত্র অভিযোগের ভীড়ে এটি চাপা পড়ে যায়। বিজেপি পন্থী চলচ্চিত্রকার আদিত্য ধর টানটান উত্তেজনাকর একটি স্পাই থ্রিলার বানানোর বাসনায় এই চরিত্রটি ঘিরে প্লট সাজান। ভারতের সেরা অভিনেতাদের বুফে লাগিয়ে দেন এতে। ভারতের গোয়েন্দা প্রধান, পাকিস্তানের ইন্টিলিজেন্স, পাকিস্তানের আঞ্চলিক মন্ত্রী, পাকিস্তানের পুলিশ সুপার, গোপন অস্ত্র ব্যবসা, জাল ব্যাংক নোট কারখানা, মাত্রাতিরিক্ত নৃশংসতা— এর মাঝে ফালুদার উপর ভেসে থাকা আনারদানার মতো সামান্য রোমান্স। সব মিলিয়ে ‘ধুরন্ধর’।

অপারেশন ধুরন্ধর একটি ইন্ডিয়ান স্পাই প্রজেক্ট। এতে নেতৃত্ব দেন রনবীর সিং, সিনেমায় ছদ্মনাম আলী হামজা মুজাহিদ। সে আফগানিস্তান সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে জাতীয় নিরাপত্তা প্রধানের ইশারা অনুযায়ী কাজ করতে থাকে। এই চরিত্রটি রূপায়ণ করেছেন আর মাধবন। গেট আপ ১০০ শতাংশ অজিত দোভালের। 

এনিম্যাল সিনেমায় যেমন সব আলো কেড়ে নিয়েছিলেন ববি দেওল, ধুরন্ধরেও সব আলো অক্ষয় খান্নার। তার লুক, অভিব্যক্তি আর নৃশংসতা অতুলনীয়। 

একটু পিছিয়ে যাই। হিটলারকে গৌরবান্বিত করার জন্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে কয়েকটি সিনেমা বানিয়েছিলেন লেনি রিফানস্তাল (১৯০২-২০০৩)। হিটলারের পরিচিতি বাড়াতে সিনেমাগুলো দারুণ কার্যকর হয়েছিলো। তার নির্মিত দুটো সিনেমা আজো আলোচিত-সমালোচিত। প্রপাগাণ্ডা ফিল্ম Olympia এবং Triumph of the Will হিটলারকে ক্ষমতাধর এবং স্বৈরশাসক হয়ে উঠতে সাহায্য করেছিলো। আদিত্য ধরও একটি প্রপাগাণ্ডা ফিল্ম উপহার দিলেন। পর্দায় মহিমান্বিত করলেন অজিত দোভালকে।

‘ধুরন্ধর’ সিনেমা এই সময়ে নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য — ১. কংগ্রেস খারাপ শাসক ছিলো এটা মনে করিয়ে দেওয়া। ২. ওদের সময় পার্লামেন্টে এটাক হয়। এমনকি ২৬/১১র মতো নারকীয় হত্যাযজ্ঞ হয়। ৩. ভারতের শার্লক হোমস-রবিনহুড খ্যাত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালকে মহিমান্বিত করা। ৪. পাকিস্তানের নিগৃহীত কওম বালুচদের মধ্যে স্বাধীনতার মন্ত্র উসকে দেওয়া।— প্রাথমিকভাবে এগুলো আমার পর্যবেক্ষণ।

তবে অক্ষয় খান্নাকে আলাদা করে ধন্যবাদ দিতেই হয়। এই সিনেমা তাকে অমর করে রাখবে।

লেখক : শিল্প-সমালোচক ও এডমিন, প্রসঙ্গ নজরুল-সঙ্গীত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর