Logo

অন্যান্য

দুর্নীতির বরপুত্র যুগ্ম-কমিশনার মারুফুর

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:৪৮

দুর্নীতির বরপুত্র যুগ্ম-কমিশনার মারুফুর

দেশের বৃহৎ রাজস্ব আদায়কারী সংস্থা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে দুর্নীতির আতুরঘরে পরিণত করেছেন যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ মারুফুর রহমান। তার অনিয়ম ও দুর্নীতি নির্বিঘ্ন করতে তৈরি করেছেন একাধিক সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি টাকা আদায় করেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)সহ বিভিন্ন সংস্থায় বারবার অভিযোগ দেওয়া হলেও সকল অভিযোগ অঙ্কুরেই বিনাশ করেন অদৃশ্য ক্ষমতাবলে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাস্টমসের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, মারুফুর রহমান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে দুর্নীতির আতুরঘরে পরিণত করেছেন। ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুদক ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থায় একাধিক অভিযোগ দেওয়া হলেও অদৃশ্য ক্ষমতাবলে তিনি এসব অভিযোগ তদন্ত শুরুর আগেই শেষ করে দিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের সবচেয়ে বড় রাজস্ব আদায়কারী সংস্থা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দুর্নীতির আতুরঘরে পরিণত হয়েছেন যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ মারুফুর রহমান। তিনি দুর্নীতি নির্বিঘ্ন করতে তৈরি করেছেন একাধিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তার অধীনে চলা একটি সিন্ডিকেটে রয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে একজন সহকারি কমিশনার, একজন রাজস্ব কর্মকর্তা ও তিনজন সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা। এ সিন্ডিকেট মদ ও সিগারেটের বিভিন্ন চালান থেকে প্রতি আদায় করেন ২–৪ কোটি টাকা ঘুষ।

আরেকটি সিন্ডিকেটে রয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা নাজমুল হাসান এবং সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল, রেজাউল ও ‘ফালতু’ রাজু। এ সিন্ডিকেট প্রতি সপ্তাহে ১ কোটি টাকা ঘুষ সংগ্রহ করে মারুফকে দেন। এছাড়া গ্রীণ চ্যানেল থেকে রাজু অবৈধ ফেব্রিক্স আমদানির চালান প্রতি ২ লাখ টাকা সংগ্রহ করে মারুফকে দেন। শুল্কায়ন গ্রুপের রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম সজিবের মাধ্যমেও প্রতি সপ্তাহে ঘুষের টাকা সংগ্রহ করা হয়, যা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ওপেন সিক্রেট।

তাছাড়া অফডকে কর্মরত রাজস্ব কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেনের মাধ্যমে প্রত্যেকটি রফতানি চালান থেকে ১ লাখ টাকা ঘুষ নেন এই কর্মকর্তা। বন্দরে আসা সমুদ্রগামী জাহাজ বন্দর ত্যাগের আগে তিন সংস্থা থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। এ তিনটি সংস্থা হলো নৌবাণিজ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রাম কাস্টমস। সমুদ্রগামী জাহাজের সব মাশুল পরিশোধ সংক্রান্ত নথিপত্র জমা দেওয়ার পর ছাড়পত্র দেওয়া হয়। ছাড়পত্র পেতে দেরি হলে জাহাজগুলো বন্দর ত্যাগ করতে পারে না। সময়মতো ছাড়পত্র না দিলে বাড়তি মাশুল গুনতে হয়। এটিকে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে নিয়ে ছাড়পত্র দিতে মোটা অংকের টাকা নেন মারুফুর রহমান।

তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে পছন্দ করেন। এক সময় এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের শ্যালক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। এ পরিচয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপে রাখতেন। বর্তমানে এনবিআরের দুই মেম্বারের নাম ভাঙিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে দুর্নীতির মাফিয়া হয়ে উঠেছেন। এছাড়া তিনি বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যানের নিকট আত্মীয় বলেও সব জায়গায় নিজেকে প্রকাশ করেন।

তার ব্যক্তিগত ২০১৮ এবং ২০২২ মডেলের দুটি প্রিমিও গাড়ি রয়েছে। এছাড়া নতুন করে তিনি একটি হ্যারিয়ার গাড়ি ক্রয় করেছেন। এ গাড়িতে করে উঠতি বয়সি নানা মডেলদের নিয়ে ঘুরে বেড়ান।

মারুফুর রহমানের নারী ঘটিত কারণে তার প্রথম স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যান। তার বর্তমান স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে লন্ডনে বসবাস করেন। এমনকি স্ত্রীকে লন্ডনে বাড়ি কিনে দিয়েছেন এবং সন্তানরা লন্ডনে পড়ালেখা করছে।

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর