চরমোনাই পীর
রাখাইনে ‘মানবিক করিডোর’ প্রতিষ্ঠার আগে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে হবে

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:৪১
-6810c8e6bb61d.jpg)
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, রাখাইন রাজ্য নিয়ে আমাদের অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা রয়েছে। বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে রাখাইনের রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য করে আসছে। বর্তমানেও বাংলাদেশে ১৪-১৫ লক্ষ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট মানবিক পরিস্থিতির প্রতি আমরা সংবেদনশীল। তা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন রাজনৈতিক অস্থিরতা, সশস্ত্র যুদ্ধ ও জাতিগত হানাহানিতে বিপর্যস্ত এই রাজ্যের জন্য ‘মানবিক করিডোর’ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি কেবলই মানবিক না; বরং এর সাথে দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত হয়ে পড়েছে। তাই বিস্তর বোঝাপড়া এবং রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ছাড়া এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।
বুধবার (২৯ এপ্রিল) কুমিল্লা মহানগরের শূরা সম্মেলনের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এম এম বিল্লাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নগর শূরা সম্মেলনে চরমোনাই পীর আরও বলেন, বিপর্যস্ত মানুষের জন্য মানবিক করিডোর প্রতিষ্ঠা জরুরি, কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতা বলে, এই ধরনের করিডোর কেবল ‘মানবিক’ রাখা যায় না। এর সাথে সামরিক ও নিরাপত্তা প্রশ্ন জড়িয়ে যায়। ফলে মিয়ানমারের ভেতর দিয়ে বা অন্য বিকল্পগুলোকেই বিবেচনা করা উচিৎ। কারণ, এই ধরনের ক্ষেত্রে মায়ানমার বা আরাকান আর্মি বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য কোনো অংশীদার না। তাই এই বিষয়ে তাড়াহুড়ো না করে বুঝে-শুনে সকলের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, একটি রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেলো কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ও চরিত্রে সেই অর্থে কোনো পরিবর্তন হলো না। ক্ষমতার জন্য উদগ্রীব, ব্যাকুলতা, প্রতিহিংসা, হানাহানি ও কূটকৌশল এখনো চলমান। এই পরিস্থিতে নির্বাচনের চেয়ে ব্যক্তি, দল ও রাষ্ট্রে সংস্কারই প্রধান মূখ্য হওয়া উচিৎ।
তিনি বলেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে তা আমাদের বোধ-বিশ্বাস ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে সাংঘর্ষিক। তাই এই প্রস্তাবনাকে প্রত্যাখ্যান করতেই হবে। একইসাথে কমিশনকে বাতিল করতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যারা চাঁদাবাজী ও সিন্ডিকেট করে মূল্যস্ফীতি ঘটাচ্ছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
চরমোনাই পীর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্বৈরতন্ত্র পতনে যে ব্যক্তি জীবন দিলো তার কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে তার মেয়েকে ধর্ষণ করা হলো। সেই মেয়ে পরে আত্মহত্যাও করলো। এরচেয়ে কষ্টদায়ক ঘটনা আর কী হতে পারে? নিপীড়িত মেয়েটাকে কেন রাষ্ট্র রক্ষা করতে পারলো না- সেই জবাব সংশ্লিষ্টদের দিতে হবে। একইসাথে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সারা দেশে নিহত ও আহতদের পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এবং অবশ্যই পতিত স্বৈরাচারের বিচার করতে হবে।
কুমিল্লা মহানগরের শূরা অধিবেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্মমহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ জয়নাল আবেদীন, ইসলামী আইনজীবি ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এডভোকেট হারুনুর রশিদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের এসিসটেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল ছাত্র নেতা ইমরান হোসাইন নুর প্রমুখ।
ডিআর/বিএইচ