আ.লীগ নেতা শিমু কি বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন লঙ্ঘন করেছিলেন?

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৫, ২১:০৬

সামসুদ্দোহা শিমু। ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অমান্য করে চাকরির পাশাপাশি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন মো. সামসুদ্দোহা শিমু। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন অনুযায়ী ব্যাংক কর্মকর্তারা সরাসরি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। কিন্তু সেই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাজনীতির মাঠ দাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন বৈষম্যবিরোধী মামলার পলাতক এই আসামি।
জানা গেছে, সামসুদ্দোহা শিমু ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য। এছাড়াও ঢাকা মহানগর দক্ষিণেরও বিভিন্ন পদে ছিলেন। শিমু শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা ছিলেন। পরে তিনি অবসরে যান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘চাকরির পাশাপাশি ব্যাংকারদের রাজনীতি করার সুযোগ নেই। হয়ত শিমু যখন ব্যাংকে চাকরি করেছেন তখন রাজনীতির বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন। এটাতে তিনি সুস্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন করেছেন। ওই ব্যাংকের উচিত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।’
ব্যাংক কর্মকর্তা হয়ে শিমু কীভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হলেন জানতে চাওয়া হয় আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকরাম হোসেনের কাছে। তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান ও সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার অনুরোধে তাকে উপদেষ্টা করা হয়। আর ব্যাংক কর্মকর্তারা যে দলীয় দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না সেটা আমি জানতাম না। শিমু দলীয় কর্মসূচিতে সব সময় উপস্থিত থাকতেন এবং সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল।’
অভিযোগ রয়েছে, শিমু শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে যখন কর্মরত ছিলেন তখন বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ব্যাংকে বিভিন্ন জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। এসব টাকায় রাজধানীর ভাটারায় পাঁচতলা সুবিশাল বাড়ি করেছেন। নিজের ও স্ত্রী-সন্তানদের নামে করেছেন অনেক সম্পদ। তাছাড়া সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার অবৈধ সম্পদ নিজের হেফাজতে রেখেছেন এই শিমু।
সম্প্রতি শিমুকে ধরতে রাজধানীর ভাটারা থানার সাইদনগর হাউজিং এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। সাবেক প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ও ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমানের ঘনিষ্ঠ শিমুকে গ্রেপ্তারে তিন ঘণ্টা ধরে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে বাসার বাতি নিভিয়ে কৌশলে পালিয়ে যান তিনি। বর্তমানে শিমুকে গ্রেপ্তারে গোয়েন্দারা মাঠে কাজ করছেন। তিনি যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারেন সেজন্য বিমানবন্দর ও সকল স্থলবন্দরে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত এই শিমু।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলো জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতা শিমুর বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহ চলছে। শিগগিরই শিমুকে গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার ইবনে মিজান।
ডিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) তালেবুর রহমান জানান, পলাতক আসামি গ্রেপ্তার পুলিশের একটি রুটিন কাজ। পুলিশ আসামি ধরবে, সে যত বড় অপরাধীই হোক না কেন। আর সামসুদ্দোহা শিমুর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অপরাধের তথ্য পুলিশের কাছে আছে। তাই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। পালিয়ে যেখানেই যাক না কেন পুলিশ তাকে খুঁজে বের করবে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ নেতা ও আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা সামসুদ্দোহা শিমু ছাত্রজীবনে অধুনা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের তোলারাম কলেজের নেতা ছিলেন। নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার কথা নিজেই সবসময় প্রচার করতেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার ওসি ইফতেখার হাসান বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট বছিলা ব্রিজের সন্নিকটে হত্যার উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে গুরুতর জখম ইস্যুতে হুকুমের আসামি এই শিমু। তিনি এই মামলার এহাজারনামীয় ৩৮ নম্বর আসামি। তাকে ধরতে পুলিশ গোয়েন্দা নজরদারি চালাচ্ছে। এরইমধ্যে এই মামলায় অনেক আসামি গ্রেপ্তার আছেন। শিমুর বর্তমান অবস্থা শনাক্তে আমরা কাজ করছি। তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।’
পুলিশ সদরদপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন) মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘অপরাধী শনাক্তে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। হত্যাচেষ্টার আসামি হয়ে তার রক্ষা পাওয়ার সুযোগ নেই। তিনি যেখানেই আত্মগোপনে থাকুন তাকে গ্রেপ্তার করা হবেই।’