Logo

রাজনীতি

শাপলার প্রতি এনসিপির আগ্রহ কেন?

Icon

বিবিসি

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫, ১৩:১৪

শাপলার প্রতি এনসিপির আগ্রহ কেন?

নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সঙ্গে চাওয়া হয়েছে দলীয় প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা ফুল’। এই দাবির পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় বিতর্ক।

একপক্ষ বলছে, শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক, তাই এটি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক হওয়া উচিত নয়। অপরপক্ষ বলছে, জাতীয় প্রতীকে ধানের শীষও আছে, সেটিও বিএনপির প্রতীক, তাই শাপলাও হতে পারে।

এনসিপি নেতাদের ব্যাখ্যায়, শাপলা বাংলাদেশের নদী-নালা ও প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের নদী, প্রকৃতি ও জলাশয়ের সাথেই জড়িয়ে আছে শাপলা। আমরা চাই রাজনীতিতেও এর প্রতিফলন থাকুক।’ 

তিনি মনে করেন, গ্রামবাংলার মানুষের সঙ্গে এই প্রতীকের একটি আবেগগত সংযোগ আছে, যা এনসিপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

দলটির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘প্রতীক হওয়া উচিত এমন কিছু যা জনমানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। শাপলা হচ্ছে নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি—প্রতিটা প্রান্তে যার উপস্থিতি আছে। মানুষ এর সঙ্গে কানেক্ট করতে পারে।’

সরকারবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আত্মপ্রকাশের প্রায় চার মাস পর নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের আবেদন করেছে এনসিপি। আবেদন জমা দেওয়ার সময় তারা প্রথম পছন্দ হিসেবে চায় শাপলা ফুল, আর বিকল্প হিসেবে কলম ও মোবাইল ফোন প্রতীক চাওয়া হয়েছে।

আবেদন জমা দেওয়ার পর সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন দলের শীর্ষ নেতারা। বেরিয়ে এসে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রথম পছন্দ শাপলা। আমরা বিশ্বাস করি এটা জনগণের মার্কা, গণঅভ্যুত্থানের মার্কা, গ্রামবাংলার প্রতীক। আশা করি এনসিপি এই প্রতীক পাবে।’

শাপলা ফুলকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয় মূলত এটি জাতীয় প্রতীকের অংশ হওয়ায়। অনেকেই বলছেন, জাতীয় প্রতীক হিসেবে শাপলা থাকায় এটি কোনো রাজনৈতিক দলকে বরাদ্দ দেওয়া অনুচিত। 

বাংলাদেশের সংবিধানে বলা আছে, ‘প্রজাতন্ত্রের জাতীয় প্রতীক হচ্ছে, উভয় পার্শ্বে ধান্যশীর্ষবেষ্টিত পানিতে ভাসমান জাতীয় পুষ্প শাপলা, তাহার শীর্ষদেশে পাটগাছের তিনটি পরস্পরসংযুক্ত পত্র, তাহার উভয় পার্শ্বে দুইটি করিয়া তারকা।’

এর ব্যাখ্যায় সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘ফ্ল্যাগ অ্যান্ড এমব্লেম অর্ডার ১৯৭২ এ বলা আছে আমাদের জাতীয় প্রতীক হবে শাপলা। এতে ধানের শীষ ও পাটের কুড়ি থাকলেও শাপলাটাই হচ্ছে মূল।’

সাবেক সচিব ও নির্বাচন বিশ্লেষক আবু আলম শহীদ খান বলেন, ‘জাতীয় প্রতীকে আরো অনেক কিছু থাকলেও শাপলাটাই মূল। কেননা জাতীয় প্রতীকে শাপলাকে যতটা বড় করে দেখা যায় অন্য বিষয়গুলো অতটা ভালোভাবে বোঝা যায় না।’

অন্যদিকে, কেউ কেউ যুক্তি তুলছেন—জাতীয় প্রতীকে যেহেতু ধানের শীষও আছে, যা বিএনপির প্রতীক, তাই শাপলাও দলীয় প্রতীক হতে পারে। 

সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা জেসমিন টুলী বলেন, জাতীয় ফুল বলে কাউকে শাপলা দেওয়া যাবে না—এই যুক্তিও টেকে না, কারণ কাঁঠাল জাতীয় ফল হলেও একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতীক।

শাপলাকে কেন্দ্র করে প্রতীক নিয়ে টানাটানিও দেখা যাচ্ছে। এনসিপির আবেদন জমা দেওয়ার মাত্র তিনদিন আগে নাগরিক ঐক্যও তাদের কেটলি প্রতীক পরিবর্তন করে শাপলা (বা দোয়েল) চেয়ে ইসিতে আবেদন করে। 

দলটির নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না জানান, ‘প্রথমে আমরা দ্বিধায় ছিলাম, পরে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিই।’

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে ৫০টি।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সংসদ নির্বাচনের জন্য বর্তমানে ইসির তফসিলভুক্ত ৬৯টি প্রতীকের মধ্যে ৫০টি প্রতীক বরাদ্দ রয়েছে রাজনৈতিক দলের জন্য। যার মধ্যে স্থগিত হওয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগেরও প্রতীক রয়েছে।

কিন্তু আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে এরই মধ্যে প্রায় দেড়শ রাজনৈতিক দল ইসির কাছে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে।

চূড়ান্ত যাচাই বাছাই শেষে এর মধ্যে যেসব দল ইসির নিবন্ধন পাবেন তাদেরকেও প্রতীক বরাদ্দ দিতে হবে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্যও রাখতে হবে নতুন প্রতীক।

যে কারণে ৬৯টি থেকে ইসির তফসিলভুক্ত প্রতীকের সংখ্যা বাড়িয়ে ১১৫টি প্রতীকের খসড়া প্রস্তুত করেছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশনের অন্তত দুইজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এই খসড়া তালিকায় শাপলা ফুলকে দলীয় প্রতীক হিসেবে রাখা হয়। তবে সেটি এখনো চূড়ান্তভাবে ইসির অনুমোদন পায়নি।

প্রশ্ন উঠেছে যদি চূড়ান্তভাবে শাপলা দলীয় প্রতীক হিসেবে তফসিলভুক্ত হয়, তাহলে সেটি কোন রাজনৈতিক দলকে দেয়া যাবে?

জবাবে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বিবিসি বাংলাকে জানান, প্রতীক তালিকায় সংশোধন এনে শাপলা অন্তর্ভুক্ত না করা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘শাপলা যদি অন্তর্ভুক্ত করা হয় তখন আমরা দেখব এটার দাবিদার কে কে? তখন অনেক দাবিদার হলে কার দাবিটা বেশি অগ্রগণ্য সেটা দেখব। তবে এ নিয়ে আগে থেকেই কিছু বলা যাচ্ছে না।’

ওএফ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

জাতীয় নাগরিক পার্টি নির্বাচন কমিশন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর