Logo

রাজনীতি

প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরে পেল জামায়াত

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫, ১৮:৩৪

প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরে পেল জামায়াত

ছবি : সংগৃহীত

দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী'র নিবন্ধন পুনর্বহাল করে করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে, গত ১ জুন রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। দলটির পক্ষে করা আপিল গ্রহণ করে রায় দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। দলটির নিবন্ধন ফিরিয়ে দিলেও জামায়াতের দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানায় আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের নির্দেশে ইসি দলটিকে তাদের হারানো প্রতীক ফিরিয়ে দেয়।

প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, যেহেতু ‘রিপ্রেজেনটেশন অব দ্যা পিপল অর্ডার’ ১৯৭২ এর আওতায় রাজনৈতিক দল হিসাবে নিবন্ধনের জন্য উক্ত আদেশের আর্টিক্যাল ৯০বি এর শর্তানুযায়ী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নামীয় দল কর্তৃক নিবন্ধনের আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নামীয় দলকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ৫ নভেম্বর ২০০৮/২১ কার্তিক ১৪১৫ তারিখের নিকস/প্র-৩/রাদ/৫(৪৪)/২০০৮/১১৪১ সংখ্যক প্রজ্ঞাপনমূলে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল (নিবন্ধন নম্বর-০১৪, তারিখ: ০৪ নভেম্বর ২০০৮); এবং যেহেতু, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এর মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত রিট পিটিশন নম্বর-630 of 2009 এর প্রদত্ত রায়ের সূত্রে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ১৩ কার্তিক ১৪২৫/২৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখের প্রজ্ঞাপনমূলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করা হয়।

যেহেতু, সিভিল আপিল নম্বর.১৩৯ অব ২০১৩ উইথ সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নম্বর ৩১১২ অব ২০১৩ এ মাননীয় আপীল বিভাগ কর্তৃক মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত রিট পিটিশন নম্বর-630 of 2009 এর প্রদত্ত রায় বাতিলপূর্বক দলটির নিবন্ধন পুনর্বহালের আদেশ দিয়েছে; সেহেতু, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এর মাননীয় আপীল বিভাগের Civil Appeal No. 139 of 2013 with Civil Petition For Leave To Appeal No. 3112 of 2013 এর প্রদত্ত রায়ের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নামীয় দলের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত ২৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখের প্রজ্ঞাপনটি এতদ্দ্বারা বাতিলক্রমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী'র নিবন্ধন দলীয় প্রতীকসহ পুনর্বহাল করা হলো।

এর আগে গত ১৪ মে এ মামলায় আপিল শুনানি শেষে রায়ের জন্য ১ জুন দিন ধার্য করেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। ওইদিন আদালতে জামায়াতের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।

২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের পক্ষে কোনও আইনজীবী আদালতে উপস্থিত না থাকায় আদালত আপিল মামলাটি খারিজ করে দেন। এরপর আপিলটি পুনরুজ্জীবনের জন্য আবেদন করা হয়। গত বছরের ২২ অক্টোবর আদালত বিলম্ব মার্জনা করে আপিলটি শুনানির জন্য রিস্টোর করেছেন অর্থাৎ পুনরুজ্জীবন করেছেন। এরপর ৩ ডিসেম্বর আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়েছিল। চতুর্থ দিনের মতো শুনানি শেষে মামলার রায়ের দিন ধার্য করা হয়।

২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া হয়। পরের বছর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির তৎকালীন মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন।

রিটে জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নির্বাচন কমিশনসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়। তারা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের আর্জি জানান।

এ রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক (পরে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের (বর্তমানে অবসর) হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন। নিবন্ধন নিয়ে রুল জারির পর ওই বছরের ডিসেম্বরে একবার, ২০১০ সালের জুলাই ও নভেম্বরে দু’বার এবং ২০১২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে দু’বার তারা গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয় জামায়াত। এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’করা হয়।

২০১৩ সালের ১২ জুন ওই রুলের শুনানি শেষ হয়। একই বছরের ১ আগস্ট জামায়াতকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অবৈধ বলে রায় দেন বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন (বর্তমানে অবসর), বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম (পরে আপিল বিভাগের বিচারপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন) ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের (১৯ নভেম্বর পদত্যাগ করেন) সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ। সে সময় সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলেন, এ নিবন্ধন দেওয়া আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। একইসঙ্গে আদালত জামায়াতে ইসলামীকে আপিল করারও অনুমোদন দিয়ে দেন।

তবে এ রায়ের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন একই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। পরে একই বছরের ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে। ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।

এরপর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে টানা চতুর্থ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। তবে গত বছর জুলাই মাস থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা কোটা প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। এ আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগে ছাত্র-জনতা সরকার পতনের দাবি তোলে। এর মধ্যে ১ আগস্ট সরকার অঙ্গসংগঠনসহ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের আবেদন বাতিলের উদ্যোগ নেয়। গত ২৮ আগস্ট সরকার আগের নিষিদ্ধের আদেশ বাতিল করে। এরপর আপিল বিভাগে নিবন্ধন মামলাটি পুনরায় শুনানির জন্য আবেদন করে জামায়াত।

এসআইবি/এমআই

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন কমিশন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর