সংসদীয় সীমানা
২০০১ নির্বাচনের আসন পুনর্বহালের দাবি বিএনপি নেতাদের

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ১৬:৩৪

২০০১ নির্বাচনের আসন পুনর্বহালের দাবি বিএনপি নেতাদের। ছবি : বাংলাদেশের খবর
আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনের সময়ের আসনসীমানা পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির কয়েকজন নেতা। একই সঙ্গে তারা দ্রুত ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা সংক্রান্ত খসড়া প্রকাশের দাবি জানান।
বুধবার (২৫ জুন) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের বিএনপির নেতাসহ বিভিন্ন আসনের অন্তত এক ডজন প্রতিনিধি ইসির সঙ্গে বৈঠকে এসব দাবি জানান।
সিইসির সঙ্গে এ বৈঠক শেষে কুমিল্লার প্রতিনিধি, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, ১৯৮৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত যেভাবে নির্বাচনী আসন ছিল, আপনারা সেভাবে পুনর্বহাল করুন—এটা আমাদের সার্বজনীন দাবি। আমরা কমিশনের কাছে খসড়া তালিকা প্রকাশের জন্য আবেদন করেছি। নির্বাচন কমিশন আমাদের জানিয়েছে, তারা কাজ করছে। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের আশা পূরণ হবে।
বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দলটি বৈঠক করেনি বলে দাবি করেন তিনি। ‘আমরা বিভিন্ন আসন থেকে প্রতিনিধিরা এসেছি। আমাদের সবার দাবি হচ্ছে ২০০১ সালের সীমানা অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ করা।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ২০০১ সালে যেভাবে নির্বাচন হয়েছে, যেভাবে আমরা আসনভিত্তিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম, এবারও ঠিক সেভাবে এলাকাভিত্তিক আসনগুলো যেন পুনর্বিন্যাস করা হয়।
তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে সিইসি, নির্বাচন কমিশনার ও সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও আশ্বস্ত করেছেন—অনৈতিকভাবে আসন বণ্টন হবে না, জনগণের চাহিদা মোতাবেক আসন বিন্যাস করে উপহার দেওয়া হবে।’ বিএনপির এ নেতা মুন্সিগঞ্জের প্রতিনিধি হিসেবে ইসির সঙ্গে বৈঠক করেন বলে জানান।
এদিন কুমিল্লা-২ আসন পুনর্বহালের দাবিতে নির্বাচন কমিশনের সামনেও মানববন্ধন করেছে কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম ভূঁইয়ার সমর্থকরা।
মানববন্ধনে আগত ছয় নম্বর নিলখী ইউনিয়ন পরিষদ যুবদলের আহ্বায়ক রাসেল মাহমুদ বলেন, ১৯৫৪ সাল থেকে হোমনা-মেঘনা এক আসনেই ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের তৎকালীন নির্বাচন কমিশন এটি আলাদা করে। ২০১৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত সেভাবেই ভোট হয়। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে কুমিল্লা-২ আসনটি ফের আগের মতো করা হয়।
অর্থাৎ হোমনা-মেঘনাবাসী পুনরায় এক আসনে চলে আসে। কিন্তু বর্তমানে অনেকেই আবার ২০০৮ সালের অবস্থায় ফিরে যেতে চান। তাই আমরা সেটা যাতে না করা হয় সে জন্য এ কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। কুমিল্লা-২ আসনে হোমনা-মেঘনা বহাল রাখার আবেদন করেছি।
উল্লেখ্য, বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও ২০০৮–২০২৩ সালের সীমানা নির্ধারণে বিতর্কের বিষয়টিও তুলে ধরেছে। সংস্কার কমিশন বলেছে, ২০০১ সালের নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বিশেষ কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যাপকভিত্তিক সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ করা হয় ২০০৮ সালে। এ সময় জাতিসংঘের সহায়তায় একজন আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারণ বিশেষজ্ঞকে নিয়োগ দিয়ে একটি গবেষণা করা হয়। যদিও ওই গবেষণার সব পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন সীমানা সংক্রান্ত সংশোধন অধ্যাদেশ হাতে পাওয়ার পর কাজও শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ৭৫টি আসনের ছয় শতাধিক আবেদনও জমা পড়েছে। সংসদীয় এলাকার জিআইএস (জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম) সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ উপাত্ত না পাওয়ায় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ইসি।
সবশেষ ১৯ জুন বৃহস্পতিবারের কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, সময়ের অভাবে এবং কিছু উপাত্ত এখনও বাকি থাকায় আলোচনাটা আজ আমরা এগিয়ে নিতে পারিনি। আশা করছি, আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ সংসদীয় আসনের বিষয়টা সম্পন্ন হবে।
এসআইবি/এমবি