• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯
সাত দফা না মানলে ধাপে ধাপে কর্মসূচি

রোববার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

সংরক্ষিত ছবি

রাজনীতি

বিএনপির জনসভায় মির্জা ফখরুল

সাত দফা না মানলে ধাপে ধাপে কর্মসূচি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০১ অক্টোবর ২০১৮

নির্বাচনের আগে দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দেওয়াসহ ৭ দফা দাবি আদায়ে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে আগামী ৩ অক্টোবর সব জেলায় বিক্ষোভ ও জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি এবং ৪ অক্টোবর সব মহানগরে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও বিভাগীয় কমিশনারকে স্মারকলিপি দেবে দলটি। গতকাল রোববার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি আয়োজিত জনসভায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কর্মসূচি দেন।

প্রায় এক বছর পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এ জনসভায় মির্জা ফখরুল নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, সরকার যদি দাবি মেনে না নেয় তাহলে ধাপে ধাপে আন্দোলন জোরদার করতে হবে। খালেদা জিয়ার ডাকে দেশবাসী এবং সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার ভীষণ ভয় পাচ্ছে। তারা এখন পদে পদে ষড়যন্ত্রের ভূত দেখতে শুরু করেছে। দুপুর ২টা ১০ মিনিটে কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জনসভা শুরু হয়। তবে দুপুর ১২টা থেকে ঢাকাসহ আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে জনসভাস্থলে আসতে থাকেন। তারা খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেন। জনসভায় আসা নেতাকর্মীদের মুখেও স্লোগান ছিল- ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, ‘খালেদা জিয়া এগিয়ে চলো আমরা আছি তোমার সাথে’। যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের অনেকের মাথায় ছিল লাল-সবুজ টুপি। পুলিশ, র্যাবসহ বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল আশপাশে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে জলকামানের গাড়ি, প্রিজন ভ্যান রাখা হয়।

দলের প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার’ গঠনসহ বিভিন্ন দাবিতে আয়োজিত জনসভায় সরকারের উদ্দেশে ৭ দাবি ও ১২ লক্ষ্য (অঙ্গীকার) ঘোষণার আগে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দুর্নীতি-লুটপাট করে আজ অর্থনীতিকে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। দলের অসংখ্য সহযোদ্ধাকে গুম ও হত্যা করেছে। প্রতিদিন কয়েক হাজার ‘গায়েবি মামলা’ দিচ্ছে।

সরকার ও পুলিশ প্রশাসনকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই ‘মিথ্যা মামলার’ জন্য ভবিষ্যতে জবাবদিহি করতে হবে। সব ঘটনার তদন্ত হবে। তখন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এই সরকারকে বিএনপির ভয়ে ধরেছে। তারা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান আতঙ্কে ভুগছে।

বিএনপির ৭ দাবি : ১. (ক) খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার। (খ) সব বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার। (গ) নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন মামলা না দেওয়ার নিশ্চয়তা। (ঘ) পুরনো মামলায় কাউকে গ্রেফতার না করা। (ঙ) কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের ন্যায্য আন্দোলন এবং সামাজিক ও গণমাধ্যমে মতপ্রকাশের অভিযোগে গ্রেফতার ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির নিশ্চয়তা প্রদান। ২. নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তফসিল ঘোষণার আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে দিতে হবে। ৩. রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি প্রার্থী হতে পারবেন না। ৪. আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। ৫. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে তাদের ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ না করা। ৬. সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ নিশ্চিত করা। নির্বাচনের এক মাস আগে থেকে নির্বাচনের পর ১০ দিন পর্যন্ত মোট ৪০ দিন সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে। ৭. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা ও পরিকল্পনা বাদ দিতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর যুগোপযোগী সংশোধন করতে হবে।

১২ লক্ষ্য : দাবি পেশের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে বিএনপি কী কী করবে সে বিষয়ে ১২টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। এগুলো হলো- ১. রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসন নিশ্চিত করা। ২. সব প্রতিহিংসার রাজনীতি অবসানে জাতীয় ঐকমত্য গঠন। ৩. রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দলীয়করণের ধারার বদলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। ৪. রাষ্ট্রক্ষমতায় গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা। ৫. স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা। ৬. স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীকে আরো আধুনিক, শক্তিশালী ও কার্যকর করা। ৭. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। ৮. দুর্নীতি প্রতিরোধে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথভাবে সংস্কার ও কার্যকর করা। ৯. সব নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা বিধান। ১০. সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় এ মূলনীতি অনুযায়ী জাতীয় মর্যাদা এবং স্বার্থ সংরক্ষণ করে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সৎ প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, বিনিয়োগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ। ১১. কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদকে মদত না দেওয়া এবং কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেওয়া। ১২. সর্বনিম্ন আয়ের নাগরিকদের মানবিক জীবন নিশ্চিত করে আয় বৈষম্যের অবসানকল্পে অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ এবং শ্রমজীবী জনগণের জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ। সারা দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং স্নাতক ও সমমান পর্যন্ত শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা।

জনসভার প্রধান বক্তা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘অবৈধ সরকার’ রাষ্ট্রের তিনটি ‘স্তম্ভ’ (আইন, নির্বাহী ও বিচার বিভাগ) ধ্বংস করে দিয়েছে। এটা ফ্যাসিস্ট সরকার। দুর্নীতি আর লুটপাট করে দেশের অর্থনীতি পঙ্গু করে দিয়েছে। খালেদা জিয়ার আহ্বানে বিভিন্ন দলমতের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য।

তিনি পুলিশ ও প্রশাসনকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা আওয়ামী লীগের চাকরি করেন না। এ দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় আপনারা বেতন পান। এখনো সময় আছে, আপনারা ‘নিরপেক্ষ’ দায়িত্ব পালন করুন।

খালেদার চেয়ার ফাঁকা রাখা হয় : জনসভার জন্য তৈরি মঞ্চে দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য একটি খালি চেয়ার রাখা হয়। বক্তারা বলেন, চেয়ারটি খালি থাকবে। যখন তিনি মুক্ত হয়ে ফিরে আসবেন তখন এই চেয়ারে বসবেন। সরকারের জুলুম-নির্যাতনের প্রতিবাদ হিসেবে এবং দলের নেত্রীর প্রতি সম্মান জানিয়ে এ আসন সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।

প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, সেলিমা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফজলুর রহমান, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, মাহবুবুর রহমান শাহীন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস আকতার, শামা ওবায়েদ প্রমুখ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads