
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি : বাংলাদেশের খবর
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা পুরোনো খেলায় কোনো নতুন খেলোয়াড় হতে আসিনি। আমরা খেলার নিয়ম বদলে দিতে এসেছি। খেলার নিয়ম বদলাতে হবে। রাজনীতির নিয়ম বদলাতে হবে।
শনিবার (৫ জুলাই) দুপুরে বগুড়ার সাতমাথায় আয়োজিত জুলাই পথযাত্রায় তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়েছে এই বগুড়া। বগুড়ার নাম শুনলেই কোনো চাকরি দেওয়া হতো না। বগুড়ার নাম শুনলেই তাকে কোথাও জায়গা দেওয়া হতো না। বগুড়াবাসীকে নির্বিচারে মামলা দেওয়া হতো।
তিনি বলেন, আমরা চাই রাজনৈতিক গণঅভ্যুত্থানের পরে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সবাই সমান সুযোগ পাবে। আমরা কোনো বিশেষ সুবিধা চাই না। আমরা কোনো বৈষম্য চাই না। আমরা চাই, যার যতটুকু প্রাপ্য, যে এলাকা যতটুকু পিছিয়ে আছে, সেই এলাকায় ততটুকু উন্নয়ন করতে হবে। উন্নয়নের সুষম বণ্টন করতে হবে।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, বগুড়া একটি ঐতিহাসিক অঞ্চল। মহাস্থানগড়, পুন্ড্রনগর থেকে বঙ্গ সভ্যতার যাত্রা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখন এই এলাকা দেখলে কেউ বলবে না যে এখানে একসময় সভ্যতার সূতিকাগার ছিল। এই এলাকা একসময় শিক্ষা, দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে পুরো পৃথিবীর মধ্যে বিশেষ এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। আমরা বগুড়ার সেই হারানো ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা বগুড়ায় এসে শুনতে পেয়েছি, বগুড়ার প্রশাসন এখনো নিরপেক্ষভাবে আচরণ করছে না। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পরে আমাদের দাবি—নিরপেক্ষ পুলিশ, প্রশাসন ও নিরপেক্ষ আদালত নিশ্চিত করতে হবে। যদি কেউ সেই পুরোনো কায়দায় আচরণ করে, তার পরিণতিও ফ্যাসিস্ট মুজিববাদী যশোরদের মতোই হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, এই গণঅভ্যুত্থানের কথা আপনারা যদি ভুলে যান- ছাত্রজনতার ক্ষমতা কতটুকু, তাহলে আপনারা ভুল করছেন। এই বগুড়ায় কোনো দলবাজ প্রশাসক, দলবাজ পুলিশ অফিসারের স্থান হবে না। সবাইকে নিরপেক্ষ হতে হবে। কোনো দলের অধীনে থাকা যাবে না। সবসময় জনগণের পক্ষে থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, বগুড়া এলাকাটি সিটি করপোরেশন হওয়ার কথা থাকলেও এখন এই এলাকা অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্ন। নাগরিকরা নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা চাই, অনতিবিলম্বে বগুড়াবাসী যেন সব নাগরিক সুবিধা পায়—সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সব সুবিধার জন্য লড়াই করবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা পুরোনো খেলায় কোনো নতুন খেলোয়াড় হতে আসিনি। আমরা খেলার নিয়ম বদলে দিতে এসেছি। খেলার নিয়ম বদলাতে হবে। রাজনীতির নিয়ম বদলাতে হবে। ভালো ও গ্রহণযোগ্য মানুষদের, যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশের হাল ধরার জন্য—এই বগুড়ার হাল ধরার জন্য।
‘গণঅভ্যুত্থানের পরে আমরা বলেছি—নতুন বাংলাদেশ চলবে নতুন সিস্টেমে, নতুন আইন-কানুন লাগবে। আপনাদের পুরোনো খেলায় আমরা অংশগ্রহণ করব না। আপনাদের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী রাজনীতিতে আমরা অংশগ্রহণ করব না।’
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি এই বগুড়ায় যারা গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছিলেন, যারা আহত ও শহীদ হয়েছেন। আমরা শুনেছি, আহত ভাইয়েরা এখন ভালো চিকিৎসা পাচ্ছেন না—এটা মেনে নেওয়া যায় না। অনতিবিলম্বে আমাদের আহত ভাইদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন, শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়ান। তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা দিন।
বগুড়াবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, এই জুলাই পদযাত্রা জেলা থেকে জেলায়, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। নতুন বাংলাদেশে নতুন নেতৃত্ব এসেছে। আপনাদের সামনে বিকল্প এসেছে—যে বিকল্পের খোঁজে আপনারা গত ৫৪ বছর ধরে অপেক্ষায় ছিলেন। এই বগুড়াতে তথা বাংলাদেশে দল কেবল একটি নয়, দুটি নয়—নতুন দল এসেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি এসেছে, বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়বে বলেই।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, জুলাই সনদ নিয়ে তালবাহানা হচ্ছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই—আজকের এই বগুড়া থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র অবশ্যই, অবশ্যই নতুন সংবিধানের যুদ্ধ হবে। জুলাই কেবল কোনো আবেগের বিষয় নয়, জুলাই আমাদের রাজনৈতিক ইশতেহার, আমাদের রাজনৈতিক গন্তব্য। এই জুলাইয়ের পথেই আগামীর বাংলাদেশ পরিচালিত হবে।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় বগুড়ার পর্যটন মোটেলে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরে দুপুর ১২টায় বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করেন।
পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা, যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সারওয়ার নিভা, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাকিব মাহদী প্রমুখ।
জুয়েল হাসান/এমবি