মির্জা ফখরুল
ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমে আগ্রহের পাশাপাশি হতাশাও তৈরি হচ্ছে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫, ১৪:০৬

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : বাংলাদেশের খবর
জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠিত কমিশনগুলোর কার্যক্রম নিয়ে জনমনে যেমন আগ্রহ ও প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি হতাশা ও উৎকণ্ঠাও তৈরি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (৬ জুলাই) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল জানান, বিএনপি ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিটিতেই সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। প্রতিদিনের আলোচনায় দলীয় প্রতিনিধিরা গঠনমূলক ভূমিকা রাখছেন। বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা বারবার ছাড় দিয়ে আলোচনাকে এগিয়ে নিচ্ছেন।
তবে কমিশনগুলোর আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দীর্ঘ আলোচনার পর যখন একটি প্রস্তাবে ঐকমত্য তৈরি হয়, তখনই নতুন প্রস্তাব এনে আলোচনাকে জটিল করা হচ্ছে। এতে কমিশনের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, এখনো পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে প্রকাশ্য আলোচনা হয়নি। তবে র্যাব বিলুপ্তিসহ অধিকাংশ বিষয়ে প্রতিনিধিদের মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে বলে তাদের দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দুদক সংস্কার কমিশনের ৪৭টি সুপারিশের মধ্যে ৪৬টিতেই আমরা একমত। কেবল ২৯ নম্বর সুপারিশে আমরা মতভেদ রেখেছি, কারণ এতে আদালতের অনুমতির পরিবর্তে সরাসরি আইনের মাধ্যমে ক্ষমতা দেওয়ার যে প্রস্তাব এসেছে, তাতে দুদকের কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।’
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ২০৮টি সুপারিশের মধ্যে ১৮৭টিতে বিএনপি একমত, ৫টিতে আংশিক ও ১১টিতে ভিন্নমত দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনসংক্রান্ত ২৪৩টি সুপারিশের মধ্যে ১৪১টিতে একমত, ১৪টিতে আংশিক ও ৬৪টিতে শর্তসাপেক্ষে একমত হয়েছে দলটি।
তিনি বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলোর সঙ্গেও বিএনপি অনেকাংশে একমত। ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণ, প্রধান বিচারপতির নিয়োগ ও সংসদীয় কমিটিতে বিরোধী দলের সক্রিয় অংশগ্রহণের মতো বিষয়েও আমরা ছাড় দিয়েছি।’
মির্জা ফখরুল আরও জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল, ন্যায়পাল আইনের আধুনিকায়ন, নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্বিন্যাসসহ সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদগুলোতে পরিবর্তনের বিষয়ে দলটির পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
তবে শেষ পর্যন্ত ঐকমত্যের নামে এমন সব নতুন প্রস্তাব আসছে, যেগুলো রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘এসব প্রস্তাব যদি জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সহায়ক হয়, তাহলে তা অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু রাষ্ট্রের মালিক জনগণকে উপেক্ষা করে বড় কোনো পরিবর্তন আনার অধিকার কোনো ব্যক্তি, দল কিংবা কমিশনের নেই।’
এএইচএস/এমবি