ভারতের অখণ্ডতা রক্ষায় বাংলাদেশও গুরুত্বপূর্ণ : নাহিদ

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১৯:১৩

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি : বাংলাদেশের খবর
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বন্ধুত্ব চাই মর্যাদা, সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে। ভারত যেন না ভোলে—তার অখণ্ডতা রক্ষায় বাংলাদেশও গুরুত্বপূর্ণ।’
বুধবার (০৯ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টায় চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ হাসান চত্বরে আয়োজিত ‘জুলাই পদযাত্রা’য় তিনি এসব কথা বলেন।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘২০২৪ সালের রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের পতন ঘটে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেই অভ্যুত্থানে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা নিজেই। এই হত্যাকাণ্ডের দায় তাকেই নিতে হবে। বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন, যেখানে ভারত সরকার একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের নেতাকর্মীদের আশ্রয় দিয়েছে।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সীমান্তে একের পর এক বাংলাদেশি কৃষককে হত্যা করছে বিএসএফ। দর্শনায় এক কৃষকের মরদেহ সাত দিন পর ফেরত দিয়েছে। বিএসএফ এখন আর সীমান্তরক্ষী নয়, বরং একটি খুনি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গত ৫৪ বছরে ভারতীয় আধিপত্য আমাদের সার্বভৌমত্ব, মানবিক মর্যাদা ও স্বাধীনতাকে বারবার অপমান করেছে। পানি চুক্তি, অর্থনৈতিক শোষণ, সাংস্কৃতিক দমন—সবক্ষেত্রে বৈষম্য স্পষ্ট। অথচ কোনো সরকারই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি।’
এনসিপির আহ্বায়ক আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার ১৬ বছর ধরে ভারতীয় সমর্থনে গুম-খুন চালিয়েছে। এখন আর চুপ থাকা চলবে না। দেশের তরুণরা সীমান্ত ও দেশের মানচিত্র রক্ষার দায়িত্ব নিচ্ছে। এনসিপি সেই দায়িত্বে তাদের পাশে রয়েছে।’
চুয়াডাঙ্গা প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এই জেলার সীমান্তে গত পাঁচ দশকে অন্তত ২০০ মানুষ বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে। গরু পাচারের অভিযোগে গরিব কৃষককে মেরে ফেলা হচ্ছে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি—আরও কঠোর হোন। আর আমরা জনগণের শক্তিতেই প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।’
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বন্ধুত্ব চাই মর্যাদা, সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে। ভারত যেন না ভোলে—তার অখণ্ডতা রক্ষায় বাংলাদেশও গুরুত্বপূর্ণ।’
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা বৈষম্যহীন একটি বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু এখনো দখল, দুর্নীতি ও প্রহসনের রাজনীতি চলছে। এই অবস্থা বদলাতে হবে। জনগণের পক্ষের রাজনীতি গড়ে তুলতে হবে।’
এর আগে দুপুরে মেহেরপুর থেকে আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া এলাকায় গাড়িতে বসেই স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এনসিপি নেতারা।
পথযাত্রার সময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্কুলশিক্ষার্থীদের দেখে কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘তোমাদের এখন ক্লাসে থাকার কথা। এখানে এসে সময় নষ্ট করা উচিত হয়নি।’ পরে তিনি বলেন, ‘তোমাদের ভালোবাসা দেখে মন কেঁপে উঠেছে। মন দিয়ে পড়াশোনা করো, আমাদের চেয়েও বড় কিছু করো।’
এরপর পদযাত্রাটি আলমডাঙ্গা শহরের আল-তায়েবা মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে পরিণত হয়। বক্তব্য দেন সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও সারজিস আলম।
আখতার হোসেন বলেন, ‘এনসিপি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমাদের শহীদ ভাইদের রক্ত আমরা বৃথা যেতে দেবো না।’
সারজিস আলম বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর আমাদের রাজনীতিতে আসার কথা ছিল না। কিন্তু চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের প্রতাপ ঠেকাতেই আমরা রাজপথে নেমেছি।’
পরে পদযাত্রা দর্শনায় গড়ায়। সারাদিন বৃষ্টির মাঝেও চুয়াডাঙ্গার পাঁচটি পয়েন্টে এনসিপির নেতাদের স্বাগত জানান সাধারণ মানুষ। পদযাত্রায় অংশ নেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, ডা. তাসনিম জারা ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
ফেরদৌস ওয়াহিদ/এমবি