সমাবেশ থেকে নতুন জোটের পরিকল্পনা : রাজপথে বিভাজনের আভাস

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৫, ২১:৪২
-687bbcf49980b.jpg)
দীর্ঘ দুই যুগ পর রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ করে আবারও সাংগঠনিকভাবে নির্বাচন কেন্দ্রিক সক্রিয় হওয়ার বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে এই সমাবেশকে শুধু একটি দলের কর্মসূচি নয়, বরং দেশের ডান ও মধ্য-ডান রাজনৈতিক অঙ্গনের ভেতর নতুন একটি পুনর্বিন্যাস ও বিভাজনের আভাস হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সমাবেশে বিএনপির অনুপস্থিতি এবং জামায়াতের পক্ষ থেকে এনডিপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রমুখ দলের নেতাদের উপস্থিতি কিংবা আমন্ত্রণ নতুন একটি রাজনৈতিক সংলাপের সূচনা করেছে। জামায়াত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, সমাবেশ থেকেই কোনো জোট গঠনের ঘোষণা দেওয়া না হলেও, ভবিষ্যতের জোট রাজনীতির একটি রূপরেখার আভাস এতে আছে।
সূত্রটি আরও জানায়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও সম্ভাব্য আন্দোলনকে সামনে রেখে একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর প্রস্তুতি চলছে। প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি ও রাজপথে যৌথ অবস্থানের মধ্য দিয়ে এই প্রক্রিয়া এগোবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সমাবেশে জামায়াত নেতাদের বক্তব্যে ‘স্বতন্ত্র অবস্থান’-এর প্রতি যে ইঙ্গিত এসেছে, বিশ্লেষকদের মতে তা বিএনপির প্রতি একটি রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেই প্রকাশিত হয়েছে। দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ইসলাম ও স্বাধীনতা রক্ষায় সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। নতুন ধারা গড়তে পুরোনো গোঁড়ামি ছাড়তে হবে।’
জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘স্বৈরাচারের ভাষা পরিহার না করলে বুঝে নিতে হবে, ফ্যাসিবাদ তাদের মনেও বাসা বেঁধেছে। আগামী নির্বাচনে লড়াই হবে দুর্নীতি ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে।’
অন্যদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখই ঘোষণা হয়নি, অথচ এখনই ‘পিআর-পিআর’ করে সমাবেশ হচ্ছে। বিএনপি রাজপথে বাস্তব সংগ্রামের পক্ষে—মিডিয়া স্টান্ট দিয়ে আন্দোলন হয় না।’
জোট রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের অংশীদার জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে মতপার্থক্য আগেও দেখা গেছে। তবে এবারের পৃথক অবস্থান সেই দূরত্বকে আরও স্পষ্ট করেছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
জাতীয় গণতান্ত্রিক দলের চেয়ারম্যান আবু তাহের ভূঁইয়া বলেন, ‘আলোচনা চলছে। সময় হলে আমরা একসঙ্গে পথ চলার ঘোষণা দেব। ইসলাম ও জাতীয়তাবাদকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ঐক্য অনিবার্য।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াতের এই সমাবেশ শুধু তাদের সাংগঠনিক সক্রিয়তা নয়, বরং একটি বিকল্প ডানপন্থী জোট গঠনের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইসলামপন্থী রাজনীতিতে নতুন একটি শক্তি বিন্যাসের চেষ্টাও স্পষ্ট।
তারা আরও বলেন, রাজপথে এখন দুটি ভিন্নমুখী ডানপন্থী জোটের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে—একটি বিএনপি-কেন্দ্রিক, অন্যটি জামায়াত-কেন্দ্রিক। এই বিভাজন যদি বাস্তবে রূপ নেয়, তাহলে বিরোধী রাজনীতির বৃহত্তর ঐক্যে প্রভাব পড়তে পারে এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের কার্যকারিতা খণ্ডিত হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে।
তবে এসব পরিবর্তনের স্থায়িত্ব নির্ভর করবে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক সমঝোতা, রোডম্যাপ এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ওপর। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজকের সমাবেশ তাই ‘একক লড়াই’ নয়, বরং ‘বিভক্ত প্রতিযোগিতা’র একটি রাজনৈতিক চিত্রও তুলে ধরেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এনএমএম/এমএইচএস