‘নিষিদ্ধ’ আ.লীগের হরতাল, পুরোনো ঘটনা ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা
-(36)-687d0c73c2202.jpg)
গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুরোনো ভিডিও ছড়িয়ে শনিবার (১৯ জুলাই) রাত থেকে আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ‘হরতাল’ কর্মসূচির নামে কেবল বিভ্রান্তিই ছড়িয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের চার সংগঠন। নিষিদ্ধ সংগঠন চারটির নেতাকর্মীদের কাউকেই রাজপথে সক্রিয় হয়ে হরতাল পালন করতে দেখা যায়নি।
তবে আত্মগোপনে থাকা দলটির নেতাকর্মীরা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে দিনভর নানা স্লোগানে পুরোনো মিছিল আর বাস পোড়ানোর পুরোনো ভিডিও ছড়িয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা করে। যদিও আতঙ্কিত নয়, বরং ফেসবুকের ভিডিও দেখে বিভ্রান্তই হয়েছে সাধারণ মানুষ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বলছে, রাজধানীর গুলিস্থান ও আজিমপুরে দুটি বাস পোড়ানোর ভিডিও ছড়িয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দু-একটি গণমাধ্যমেও ভিডিও দুটি আজকের হরতালের উল্লেখ করে প্রচার করা হয়। কার্যত ঘটনাস্থল দুটিতেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সারাদিনই ছিল স্বাভাবিক। যান চলাচল থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সবই ছিল স্বাভাবিক। কোনো ধরনের সহিংস ঘটনাই ঘটেনি সেখানে। কুচক্রী মহলের এমন অপপ্রচারে নগরবাসীকে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধও জানিয়েছে ডিএমপি।
এদিকে রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে দিনের শুরু থেকেই রাজপথে হরতাল বিরোধী অবস্থান নিতে দেখা যায় ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের। এরমধ্যে কুমিল্লার রাজপথে মোটরসাইকেলে শোডাউন করে নিষিদ্ধ সংগঠন যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদর রাজপথেই নামতে দেয়নি। তবে বিচ্ছিন্নভাবে দু-চারটি জেলায় চোরাগোপ্তা অবস্থান নিয়ে ক্ষণিকের ঝটিকা মিছিল বের করে বড়জোর রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে পালিয়ে যায় সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।
গোপালগঞ্জ, সিলেট, মাদারীপুর, কক্সবাজারের চকরিয়াসহ দেশের বেশকটি জেলায় হরতালের সমর্থনে ক্ষণিকের ঝটিকা মিছিল বের করে নিষিদ্ধ দলের নেতাকর্মীরা। তবে কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আবার কোথাও কোথাও বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধাওয়ায় রাজপথে দাঁড়াতেই পারেনি নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কিছু কিছু জেলায় রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়া, বিভিন্ন স্লোগানে মিছিল বের করার ভিডিও কেবল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই দেখা গেছে। যা কেবলই রাজপথে নামতে না পেরে জনমনে হরতালের নামে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা বলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ।
রোববার দুপুরে সচিবালয়ের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, হরতালের মধ্যে দু’টি গাড়ি পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে, যা নাশকতা হিসেবে বিবেচিত। তবে আগে হরতালের সময় যেসব নাশকতা হতো, এবার তার তুলনায় পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।
জানতে চাইলে ডিএমপির মুখপাত্র মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, গুলিস্তান ও আজিমপুরে বাস পোড়ানোর ভিডিও পুরোনো এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে হরতালের দৃশ্য উল্লেখ করে প্রচার করা হয়। কারণ ঘটনাস্থলে এ ধরনের ঘটনার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এটা কেবলই তাদের অস্তিত্বের জানার দেয়ার জন্যই ফেসবুকে ছড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টকারী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তৎপর রয়েছে। অপপ্রচারকারীদের এমন কর্মকাণ্ডে নগরবাসীকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্যও বলেন তিনি।
এদিকে ঢাকার রাজপথে হরতালের বাস্তব পরিস্থিতি ছিল একেবারেই শান্ত ও স্বাভাবিক। রাজধানীজুড়ে যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খোলা ছিল স্বাভাবিক সময়ের মতো। সকাল ১১টায় গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, যাত্রাবাড়ী, ফার্মগেট, নিউ মার্কেট ও মিরপুর এলাকায় ঘুরে দেখা যায়- কোথাও হরতালের তেমন প্রভাব পড়েনি।
তবে শ্যামপুর থানাধীন ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের খন্দকার রোড এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে আগুন দেয়ার চেষ্টাকালে সিয়াম নামে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের এক কর্মীকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসময় তার সহযোগী রাফসান পালিয়ে যায়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সিয়াম জানায়, নাশকতার উদ্দেশ্যে যুবলীগ নেতা শাকিল বিন সামস ওরফে রাব্বির নির্দেশে বাসে আগুন দেয়ার চেষ্টা করে তারা।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলটির নেতাকর্মীদের ছড়ানো ভিডিও থেকে দেখা যায়, ঢাকার বাইরে শুধুমাত্র নড়াইলে একটি বাসে আগুন জ্বলছে। যা ঘিরে সাধারণ মানুষের জটলা তৈরি হয়েছে, ভিডিও ধারণ করছে। তবে কোনো স্লোগান দিতে শোনা যায়নি ভিডিওতে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওটি গত মার্চ মাসের। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুর উপজেলায় গ্রিন লাইন পরিবহনের একটি বাসে দুর্ঘটনাবশত অগ্নিকাণ্ডের পুরোনো ভিডিও এটি। জানতে চাইলে নড়াইলের পুলিশ সুপার এহসানুল কবীর বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আজ সারা দিনে নড়াইলে বাস পোড়ানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি।
উল্লেখ্য, বুধবার (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশ কর্মসূচি ঘিরে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজন নিহত হওয়ার খবর এসেছে।
এনসিপির অভিযোগ, জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে তাদের সমাবেশ মঞ্চ ও গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে ‘নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের লোকজন। আওয়ামী লীগের চার সংগঠনের অভিযোগ, গোপালগঞ্জে ‘নির্বিচারে’ গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তাদের দেয়া বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকেও ‘অবৈধ’ দাবি করে সংগঠনগুলো ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছে। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগ দাবি করে ‘আসন্ন মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আজ হরতাল ডাকার কথা বলেছে সংগঠনগুলো।
- এমআই