জুলাই কেন ‘মানি-মেকিং মেশিন’ হবে? : উমামা ফাতেমা

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৫, ২০:০৮
-68878475c9d11.jpg)
উমামা ফাতেমা। ছবি : সংগৃহীত
জুলাই কেন ‘মানি-মেকিং মেশিন’ হবে?—প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।
রোববার (২৭ জুলাই) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দুই ঘণ্টা ২৪ মিনিটের একটি লাইভে এসে তিনি এ কথা বলেন। লাইভে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ নানা দুর্নীতি, ব্যক্তিগত হতাশা ও প্ল্যাটফর্ম থেকে সরে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন তিনি।
উমামা বলেন, আমি মুখপাত্র হওয়ার পরই প্রথম বুঝতে পারি, এই আন্দোলন ঘিরে নানা রকমের টাকা-পয়সা ইনকামের খেলা চলছে। টেন্ডার, তদবির, ডিসি নিয়োগে প্রভাব— সবকিছুতেই কিছু মানুষ জড়িত। খুব রেগুলার বেসিসেই এসব হয়েছে। আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। ভাবিনি, এই আন্দোলনটা কেউ এমনভাবে ব্যবহার করবে।
তিনি প্রশ্ন করেন, জুলাইয়ের মতো একটা অভ্যুত্থান কেন কারও কাছে ‘মানি-মেকিং মেশিন’ হয়ে উঠবে? এটা তো ছিল ছাত্রদের স্বপ্ন, দেশের মানুষের আশা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটা ভিন্ন খাতে মোড় নিয়েছে।
সমন্বয়ক পরিচয়ের অপব্যবহার নিয়ে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পরদিন থেকেই শুনতে পাই, একেকজন ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে একেক জায়গা দখল করছে, চাঁদাবাজি করছে। তখন আমার মনে হয়েছিল, কী ব্যাপার, রক্ষী বাহিনীর মতো ‘সমন্বয়ক বাহিনী’ গড়ে উঠছে নাকি। আস্তে আস্তে সব জায়গায় গিয়ে দখল করতেছে তারা।এমন তো হওয়ার কথা ছিল না!
উমামা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ হতো ‘হেয়ার রোড’— উপদেষ্টাদের বাসভবনে থেকে। সেখানে বসে যা সিদ্ধান্ত হতো, তা-ই বাস্তবায়ন করতে হতো। আমার নিজের বলার মতো কিছুই ছিল না। আমি ধীরে ধীরে প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিলাম।
চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চাঁদাবাজি, স্বজনপ্রীতি ও দখলের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু চট্টগ্রামের ঘটনা তদন্ত করতে গেলেই অনেকের মুখোশ খুলে যেত। আরও অনেক জেলার ঘটনা রয়েছে। কিন্তু এসব বললেই মানুষ শত্রু হয়ে যায়।
উমামা ফাতেমা বলেন, ন্যূনতম আত্মসম্মানবোধ যাদের আছে, তারা এই প্ল্যাটফর্মে টিকতে পারে না। আমি দায়িত্ব নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু কেউ কেউ আমাকে ব্যবহার করেছে টিস্যু পেপারের মতো। আমি টিস্যু নই, আমি একজন মানুষ। আমার পরিবারও আমাকে এমনভাবে দেখে না।
লাইভে তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্ট ছিল এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। আমাদের স্বপ্ন ছিল দেশের জন্য কিছু করার, কিন্তু অনেকের স্বপ্ন ছিল চাঁদাবাজি করা। আমি যদি একা কিছু করতাম, তাহলে হয়তো ভালো কিছু করতে পারতাম।
উল্লেখ্য, উমামা ফাতেমা ছিলেন ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর তিনি ফেডারেশন থেকে পদত্যাগ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে মুখপাত্রের দায়িত্ব পান। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি প্ল্যাটফর্ম থেকে সরে দাঁড়ান।