Logo

রাজনীতি

কলকাতায় ‘গোপন কার্যালয়’ খুলে কার্যক্রম চালাচ্ছে আ.লীগ

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৫, ০৮:১৮

কলকাতায় ‘গোপন কার্যালয়’ খুলে কার্যক্রম চালাচ্ছে আ.লীগ

ঢাকায় আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে এখন এরকম ব্যানার ঝুলতে দেখা গেছে। ছবি : সংগৃহীত

কলকাতায় বাণিজ্যিক ভবনে গোপন কার্যালয় খুলে কার্যক্রম চালাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। শুক্রবার (৮ আগস্ট) সকালে প্রকাশিত বিবিসি নিউজ বাংলার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী লাগোয়া এক উপনগরীর একটি কমপ্লেক্সের পেছনের দিকের ভবনের অষ্টম তলায় খোলা হয়েছে এই কার্যালয়। তবে বাইরে থেকে কোনো সাইনবোর্ড, ছবি বা রাজনৈতিক পরিচিতি না থাকায় সাধারণ মানুষের কাছে এটি বাণিজ্যিক অফিসই মনে হয়।

দলটির এক নেতা জানিয়েছেন, ঘরটি প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ বর্গফুটের, যেখানে ৩০-৩৫ জন বসে বৈঠক করতে পারেন, তবে কিছুটা চাপাচাপি করে বসতে হয়। ছোট বৈঠক এখনও নেতাদের বাসায় হয়, আর বড় বৈঠকের জন্য ভাড়া নেওয়া হয় রেস্তোরাঁ বা ব্যাংকোয়েট হল। এই দফতরে শেখ হাসিনা বা বঙ্গবন্ধুর কোনো ছবি নেই, এমনকি দলীয় ফাইলও রাখা হয় না— সবই সচেতনভাবে গোপন রাখা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ ও মধ্যম পর্যায়ের বহু নেতা ভারতে চলে আসেন। কলকাতা ও আশপাশে ভাড়া বাসায় রয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, জেলা সভাপতি-সম্পাদক, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়রসহ অন্তত ২০০ জন নেতা। বর্তমানে প্রায় ৮০ জন দ্বাদশ সংসদের এমপি এবং আগের ১০-১২ জন সাবেক এমপি ভারতে আছেন। কেউ কেউ সপরিবারে, আবার কেউ কয়েকজন মিলে একসঙ্গে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন। কয়েকজন কলকাতা থেকে তৃতীয় দেশে গিয়েছেন।

দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারাও কলকাতার কাছাকাছি অবস্থান করছেন এবং প্রয়োজনমতো এই অফিসে আসেন। একজন নেতা জানান, অফিস খোলার নির্দিষ্ট সময় নেই, প্রয়োজন অনুযায়ী নেতারা আসেন। সাধারণ মানুষের কাছে এই কার্যালয়ের খবর অজানা হলেও ভারতীয় গোয়েন্দারা বিষয়টি জানে এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কার্যক্রম সম্ভব হতো না।

দলের কার্যক্রম ভার্চুয়াল মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। শেখ হাসিনা দিল্লির কাছাকাছি অবস্থান করছেন এবং বড় অংশ কলকাতার কাছে। শীর্ষ নেতারা নিয়মিত হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম গ্রুপ ও লাইভ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখেন। ৩১ জুলাই দিল্লিতে শেখ হাসিনা শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

প্রাক্তন এমপি পঙ্কজ দেবনাথ বিবিসিকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে যুক্ত করা হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন উঠছে, মাঠপর্যায়ের কর্মীরা দেশে গ্রেপ্তার ও হামলার শিকার হচ্ছেন, আর শীর্ষ নেতৃত্ব ভারতে কেন? জবাবে তিনি বলেন, ১৯৭১-এর মতোই কখনও বিদেশ থেকে দল চালিয়ে শক্তি সঞ্চয় করে দেশে ফেরার নজির আছে। দেশে থাকলে নেতাদের জেলে যেতে হতো বা প্রাণনাশের ঝুঁকি থাকত।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থাসহ সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ আখ্যা দেন। তার দাবি, এখন মানুষ তাদের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে এবং অনেকে বলছে শেখ হাসিনার সময়ই ভালো ছিল।

বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনও গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ভারতে আছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী পরিবারের শিক্ষার্থীদের ক্লাস, পরীক্ষা ও সনদ বঞ্চিত করা হচ্ছে; এমনকি অনেকে এইচএসসি পরীক্ষাও দিতে পারেনি।

অর্থায়ন প্রসঙ্গে ওবায়েদুল কাদের বলেন, দেশে-বিদেশে থাকা শুভাকাঙ্ক্ষীরাই সহযোগিতা করছেন। পঙ্কজ দেবনাথ জানান, জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হয়েছে— ঢাকায় গাড়ি ছাড়া না-চলা নেতারা এখন কলকাতায় গণপরিবহন ব্যবহার করছেন, কয়েকজন মিলে ফ্ল্যাটে থাকছেন। খরচ বাঁচাতে বাস, ট্রেন, মোটরসাইকেল বা ভাগাভাগি করে ট্যাক্সি ব্যবহার করছেন।

কতদিন এভাবে দেশ ছাড়া অবস্থান চলবে, সে প্রশ্নে ওবায়েদুল কাদের বলেন, রাজনৈতিক লড়াইয়ের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা যায় না; লড়াই ছাড়া উপায় নেই।

এমএইচএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আওয়ামী লীগ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর