Logo

রাজনীতি

পিআর পদ্ধতি ছাড়া আগামী নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না : চরমোনাই পীর

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৪৫

পিআর পদ্ধতি ছাড়া আগামী নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না : চরমোনাই পীর

সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি (পিআর) ছাড়া আসন্ন জাতীয় নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর সৈয়দ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, দেশের প্রচলিত পদ্ধতির নির্বাচনে একদলীয় আধিপত্যের সৃষ্টি হয়।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ছাত্রসমাবেশে এ কথা বলেন সৈয়দ রেজাউল করীম।

প্রচলিত নির্বাচনব্যবস্থার সমালোচনা করে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, এ দেশে বারবার দেখা গেছে দিনের ভোট রাতে বাক্সে ভরে দেওয়া হয়। নির্বাচনী এলাকায় পেশিশক্তি ও অর্থবিত্তের দাপটে সাধারণ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে ভয় পান। তাঁর ভাষায়, এ ধরনের নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে শান্তি আসে না, বরং খুন-গুম, চাঁদাবাজি আর অর্থপাচার বেড়ে যায়।

সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘আমরা আর সেই কালো টাকার দৌরাত্ম্য, পেশিশক্তির গুন্ডাদের তাণ্ডব এবং দিনের ভোট রাতে বাক্সে ভরে দেওয়ার নির্বাচন চাই না। এতে দেশ আবার সন্তানহারা হবে, টাকা বিদেশে পাচার হবে, সর্বত্র চাঁদাবাজি চলবে। এ ধরনের নির্বাচন আমরা চাই না, হতে দেওয়া হবে না।’

স্বাধীনতার পর থেকে দেশের রাজনৈতিক যাত্রাপথ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ‘গত বছরের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে হাজারো মানুষ প্রাণ দিয়েছেন; অনেকে পঙ্গু হয়েছেন, চোখ হারিয়েছেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল বৈষম্যহীন ও সুন্দর একটি দেশ গড়া। কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। বরং স্বার্থান্বেষী মহল এখনো দেশকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নানা নীলনকশা আঁকছে।’

সংস্কার ও বিচারের প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ইসলামী আন্দোলনের আমির। তিনি বলেন, সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে নির্বাচনের আগে সংস্কার করবে এবং খুনিদের বিচার নিশ্চিত করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা হয়নি।

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ছাত্র সমাবেশ থেকে সাত দফা দাবিসংবলিত ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ২০২৪ পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে কোনো স্বৈরাচার, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যেন রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণের মাধ্যমে ধ্বংস করতে না পারে, সেজন্য জরুরি ভিত্তিতে মৌলিক রাষ্ট্রসংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থার মৌলিক সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।

এ ছাড়া ঘোষণাপত্রে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তরুণ প্রজন্মের প্রতিটি ভোটের মূল্যায়ন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ এবং জাতীয় সরকার গঠনে সংসদের উভয় কক্ষে আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।

সমাবেশ থেকে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা বাস্তবায়নে বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা ও এর আইনগত ভিত্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বৈষম্য মুক্তির আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে ইনসাফভিত্তিক কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়।

ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির নামে অপরাজনীতি ও সন্ত্রাস রোধ, রাজনৈতিক সহনশীলতা নিশ্চিত এবং শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ গঠনে সকল ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। একই সঙ্গে ডাকসু, জাকসু ও রাকসুসহ ঘোষিত ছাত্র সংসদগুলোতে নির্ধারিত তফসিল অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন দিতে হবে।

পতিত ফ্যাসিবাদ ও পিলখানা, শাপলা এবং জুলাইসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিদেশে পালাতক অপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার ও শাস্তি নিশ্চিতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদারের দাবি এবং দেশে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও খুনোখুনি রোধে প্রশাসনকে কার্যকর ভূমিকা পালন করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ইউসুফ আহমাদ মানসুরের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম, মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোসাদ্দেক বিল্লাহ, আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান প্রমুখ।

আইএইচ/

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর