‘হিজাব পরায় শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে দেওয়া ধর্মীয় স্বাধীনতার চরম লঙ্ঘন’

ডিজিটাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৫৭
-68ad30c351af0.png)
ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখায় গত রোববার ষষ্ঠ শ্রেণির প্রায় ২২ জন ছাত্রীকে হিজাব পরার কারণে ক্লাস থেকে বের করে দেয়ার ঘটনাকে ইসলামবিদ্বেষী ও ন্যক্কারজনক আখ্যা দিয়েছেন বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ। গতকাল ২৫ আগস্ট দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট শিক্ষিকাকে বহিষ্কার এবং আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ : সম্প্রতি ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ধর্মপ্রাণ হিজাবি ছাত্রীদের ‘জঙ্গি’ অপবাদ দিয়ে ক্লাস থেকে বের করে দেয়া এবং হবিগঞ্জে দাড়ি রাখায় তিন পুলিশকে শাস্তি প্রদানের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা সাজেদুর রহমান গতকাল এক বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা ঘটনা দুটোকে মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার চরম লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করে ইসলামবিদ্বেষ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, সম্প্রতি ভিকারুননিসা নূন স্কুলে একজন নারী শিক্ষিকা কর্তৃক ধমপ্রাণ ২২ হিজাবি ছাত্রীকে ‘জঙ্গি’ অপবাদ দিয়ে ক্লাস থেকে বের করে দেয়া এবং হবিগঞ্জে দাড়ি রাখায় ধর্মপ্রাণ তিন পুলিমকে শাস্তি প্রদান করা ধর্মীয় স্বাধীনতার চরম লঙ্ঘন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং কাঠামোগত ইসলামবিদ্বেষ রোধ করার স্বার্থে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে গ্রেফতার করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর আহ্বান জানাচ্ছি।
হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইসলামবিদ্বেষ ছড়াতে বিভিন্ন কায়েমি বাম-প্রগতিশীল গোষ্ঠী আবারো তৎপর হয়ে উঠেছে। সংখ্যালঘুদের অধিকারের ব্যাপারে তারা সব সময় সরব থাকলেও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব হলে তারা বেমালুম চুপ থাকেন। এটাই তাদের কথিত লিবারেল সেক্যুলারিজম! বিদ্যমান কাঠামোগত ইসলামবিদ্বেষ তাদের এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড চরিত্র নির্মাণে ভূমিকা রেখেছে বলে আমরা মনে করি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় মহিলা ইউনিট : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভানেত্রী মিসেস নুরুল সাবিহা, সহ-সভানেত্রী কোহিনুর বেগম, সহ-সভানেত্রী জাকেরা রহমান ও সমন্বয়কারী হাফেজা বুশরা এক বিবৃতিতে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজিবিষয়ক শিক্ষিকা ফজিলাতুন নাহার কর্তৃক ষষ্ঠ শ্রেণির ২২ জন শিক্ষার্থীকে ক্লাস থেকে বের করে দেয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং শিক্ষিকাকে আইনের আওতায় নেয়ার দাবি জানান।
এক বিবৃতিতে নেত্রীরা আরো বলেন, হিজাব পরা একজন শিক্ষার্থীর ধর্মীয় ও সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। একজন শিক্ষিকা ইসলামের অমোঘ বিধান পর্দা ও হিজাবকে কটাক্ষ করে শিক্ষার্থীদের সাথে আপত্তিকর ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করা, জঙ্গি সম্বোধন করা এটি ফ্যাসিবাদী মানসিকতার পরিচায়ক। ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী কালচার দেশবাসী দেখতে চায় না। তাঁরা আরো বলেন, উক্ত শিক্ষিকা স্কুলের ড্রেস কোড পরিপালনের অজুহাতে ইসলামের ড্রেস কোড অবজ্ঞা ও কটাক্ষ করে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। শিক্ষার্থীদের তিনি মাদরাসার ছাত্রী বলে কটাক্ষ করেছেন, যা একজন শিক্ষিকার জন্য বেমানান ও ইসলাম বিরোধিতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এ বিষয়ে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে আর কোথাও এ জঘন্য ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ : জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি শাইখুল হাদিস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ও মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি একযুক্ত বিবৃতিতে বলেন, হবিগঞ্জে তিনজন পুলিশ সদস্যকে শুধু ইসলাম ধর্মের অনুশাসন অনুযায়ী দাড়ি রাখার কারণে শাস্তি প্রদান করার ঘটনা শুধু ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘনই নয়, বরং এটি একজন মুসলমানের সাংবিধানিক ও ধর্মীয় অধিকার কেড়ে নেয়ার শামিল। এ ধরনের ঘটনা ইসলামের বিরুদ্ধে প্রশাসনের এক প্রকার ন্যক্কারজনক আচরণ। এ ধরনের সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাবমর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ইসলামের অনুশাসন দাড়ি নিয়ে উসকানিমূলকভাবে তিনজন পুলিশ সদস্যকে শাস্তি দিয়েছে সেসব কুলাঙ্গার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। নেতৃদ্বয় ভিকারুননিসা নূন স্কুলে হিজাব পরায় ক্লাসরুম থেকে বের করে দেয়ার ঘটনায় দায়ী শিক্ষিকাকে গ্রেফতারপূর্বক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস : ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখায় ষষ্ঠ শ্রেণির প্রায় ২২ জন ছাত্রীকে হিজাব পরার কারণে ক্লাস থেকে বের করে দেয়ার ঘটনাকে ‘ইসলামবিদ্বেষী ও ন্যক্কারজনক’ আখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। তিনি এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট শিক্ষিকাকে বহিষ্কার এবং আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ২৪ বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও প্রকাশ্য ইসলামবিদ্বেষ কোনোভাবেই সহ্যযোগ্য নয়। হিজাব মুসলিম নারীর ঈমানি পরিচয় ও আল্লাহ প্রদত্ত ফরজ বিধান। একজন শিক্ষক হয়ে এই বিধানের বিরুদ্ধে কটূক্তি করা সরাসরি ইসলামের প্রতি শত্রুতা প্রদর্শনের শামিল। সরকারকে অবিলম্বে উক্ত শিক্ষিকাকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকারকে অবশ্যই ইসলামবিদ্বেষী এই চক্রকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। নতুবা এরা দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ধ্বংস করে দেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি : বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি ও ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রকিব অ্যাডভোকেট যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মো. ইলিয়াস আতহারী এক যৌথ বিবৃতিতে ভিকারুননেসা নূন স্কুলে হিজাববিরোধী শিক্ষিকার অবিলম্বে বহিষ্কার কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। ইসলাম ও দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার হনন করে মুসলমানদের হৃদয়ে চরম আঘাত হেনেছে। অবিলম্বে এই শিক্ষিকাকে বহিষ্কার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় দেশের তাওহিদী জনতা ইসলামবিরোধী নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে।
ডিআর/আইএইচ