
জাতীয় পার্টি (জাপা) কি নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে— রাজনৈতিক মহলে এখন সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন এটি। রোববার (৩১ আগস্ট) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর বৈঠকে সরাসরি জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ উঠে আসে।
বৈঠক শেষে দলগুলো পৃথকভাবে সাংবাদিকদের জানায়, জাপার অতীত ভূমিকা ও বিতর্কিত অবস্থানের কারণে তাদের কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘গত তিনটি অবৈধ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর মতোই ভূমিকা নিয়েছে জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগ ও জাপার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।’
একই অবস্থান জানায় জামায়াতও। বৈঠক শেষে দলের নায়েবে আমীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টি আসলে আওয়ামী লীগের সহযোগী দল হিসেবে কাজ করেছে। তাদের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম স্থগিত হওয়া উচিত।’
তবে এই দাবির বিষয়ে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট নয়। যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি ইস্যুতে কোনো আলোচনা হয়নি।
এর আগে রোববার দুপুরে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জাতীয় পার্টি বিষয়ে বলেন, ‘তারা আজ রাজনীতি নিয়ে কথা বলছে, এটা অবাক করার মতো। শেখ হাসিনার আমলে নির্বাচনের জন্য জিএম কাদের ভারতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে বলেছিলেন, ভারতের অনুমতি ছাড়া কিছু বলা যাবে না। যে ব্যক্তি নিজের দেশের ওপরই বিশ্বাস করে না, সে আবার রাজনীতি করছে। জনগণের সন্দেহ হচ্ছে তারা নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উস্কানি দিচ্ছে।’ তবে জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি দলীয় সিদ্ধান্ত।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ হলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। বিশেষত আসন্ন নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় দলটির ভবিষ্যৎ টিকে থাকা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে।
এদিকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার চৌধুরী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘অনেক মহল জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলছে। কিন্তু আমরা কোনো সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত নই, কিংবা আরপিওর আওতায় আমাদের নিবন্ধন বাতিল করার মতো কোনো অপরাধ করিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা এই দাবি তুলছে, তারা অযৌক্তিক দাবি তুলছে। আমরা আশাবাদী, সরকার এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।’
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আহ্বান জানান, ‘দেশের প্রতিটি নেতাকর্মী প্রস্তুত থাকবেন। আমাদের ওপর যদি কোনো আঘাত আসে, আমরা তার জবাব দেব। প্রয়োজনে সবাইকে ঢাকায় আসতে হবে।’
এনএমএম/এমএইচএস