হেফাজতের রক্তস্নাত পথ ধরেই জুলাইয়ের আন্দোলন সফল হয়েছে : সালাহউদ্দিন আহমেদ
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪৪
২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে তৈরি হেফাজতের রক্তস্নাত পথ ধরেই জুলাইয়ের আন্দোলন সফল হয়েছে এবং হেফাজতকে বাংলাদেশের মুসলিম সমাজকে নিয়ন্ত্রণকারী প্রভাবক শক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
গতকাল শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে শায়খুল হাদীস পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের শীর্ষ চার নেতা ‘আল্লামা শাহ আহমাদ শফী, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী ও আল্লামা নূরুল ইসলাম জিহাদীর নেতৃত্ব, ত্যাগ ও সংগ্রাম’ শীর্ষক কনফারেন্সে সালাহউদ্দিন আহমদ এসব কথা বলেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, কওমী মাদরাসার আলেমদের মসজিদ থেকে বের করে দেওয়ার ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এভাবে যারা আলেমদের অপবাদ দিচ্ছে, দেশের মুসলিম সমাজকে বিভক্ত করছে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
ইসলামের জন্য আলাদা বাক্সের দাবীকে তিনি বিভক্তিমূলক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আলেমদের পরামর্শেই জিয়াউর রহমান সংবিধানে বিসমিল্লাহ যুক্ত করেছেন। তাই বিএনপিকে ইসলামবিরোধী শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান তিনি।
এ সময় তিনি পার্শবর্তী দেশের যে কোনো ষড়যন্ত্রকে সম্মিলিতভাবে রুখে দাড়াবার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যই হবে আগামী দিনের মূল চালিকাশক্তি। আওয়ামীলীগের রাজনীতি এদেশে আর চলতে দেওয়া হবে না। ভারতকে আওয়ামী লীগের প্রভু দাবী করে তিনি বলেন, বিদেশে আমাদের কোনো প্রভু নেই বন্ধু আছে। যাদের প্রভু দেশের বাহিরে, সেখানেই তাদের দাফন হবে।
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর উপরে চলা নির্মম নির্যাতনের বিবরণ দিয়ে বলেন, বিভিন্ন প্রলোভন দেওয়া সত্ত্বেও তিনি সরকারের সামনে মাথা নত করেননি। তাদের প্রস্তাবকে উপেক্ষা করে আপসহীনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। আমাদেরও তার অনুসরণ করতে হবে।
কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীরে হেফাজত আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী হেফাজতের চার রাহবার সম্পর্কে বলেন, তাদের অনুসরণ করতে পারলেই আমরা সিরাতে মুস্তাকিমের উপর থাকব। প্রত্যেক নামাজের পরে সিরাতে মুস্তাকিমের উপর চলার জন্য দোয়া করারও আহ্বান জানান তিনি। কোরআনে সুলাহা-নেককারদের অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। সুলাহাদের প্রথম স্তরই হলো সাহাবায়ে কেরাম। এখন কোনো দল যদি বলে ও মনে করে, সাহাবারা সত্যের মাপকাঠি না, তারা অবশ্যই বিভ্রান্ত।
হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গানের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। তা না হলে হেফাজতে ইসলাম আবার কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
উলামায়ে কেরামের মাঝে ইসলামবিরোধী শক্তি বিভক্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে উল্লেখ করে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাদের উলামায়ে কেরামকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ইসলামের বিধিনিষেধগুলো মানার কারণে দেশের মানুষকে যাতে আর অন্যায়, জুলুমের শিকার হতে না হয়, সেই শপথ নিয়েই বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হবে।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন শায়খুল হাদীস পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মাওলানা মাহফুজুল হক। সঞ্চালনা করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হাসান জুনায়েদ, সহ–সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক এবং প্রচার সম্পাদক আল আবিদ শাকির। এতে আরও বক্তব্য দেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল কাইয়ুম, যুগ্ম মহাসচিব ফজলুল করীম কাসেমী ও আজিজুল হক ইসলামাবাদী, আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।
ডিআর/আইএইচ

