Logo

রাজনীতি

সমমনা ১৭ দলকে ২৭ আসনে ছাড় দিতে চায় বিএনপি

Icon

এম ইসলাম

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২০

সমমনা ১৭ দলকে ২৭ আসনে ছাড় দিতে চায় বিএনপি
  • জামায়াত জোটের তৎপরতা রুখতে আগেভাগে আসন বণ্টনে বিএনপি 
  • চূড়ান্ত নয়, তবে জোর তৎপরতা চলছে - সেলিমা রহমান
  • চিন্তার দিক দিয়ে বিএনপির কাছাকাছি থাকলেও কার সঙ্গে জোট করছি এখনো চূড়ান্ত নয় - মান্না

দীর্ঘদিনের মিত্র বা সমমনা ছোট ছোট ১৭টি রাজনৈতিক দলকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৭টি আসনে ছাড় দিতে ইতিবাচক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। বিগত সময়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত এসব দল ও প্রার্থীর ব্যাপারে বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে বলে দলটির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ও সমমনারা ভিন্ন যে জোট গঠনের চিন্তা করছে সেদিকে শরিকরা বা সমমনারা যেন ঝুঁকে না পড়ে সেজন্য বিএনপি এবার আগেভাগে আসন বণ্টনে তৎপর।

আসনের ব্যাপারে নিশ্চিত না করলেও ছোট দলের অনেকের প্রতি বিএনপির ইতিবাচক চিন্তা স্পষ্ট। এসব দলের অনেকে বিএনপির সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আবার অনেকে লাভ-ক্ষতির সমীকরণে এখনই অবস্থান পরিষ্কার করছেন না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান দৈনিক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, যারা দীর্ঘদিন বিএনপির সঙ্গে মাঠে ছিল তাদের মূল্যায়ন করা হবে। সমমনাদের আসন বণ্টন এখনো চূড়ান্ত না হলেও বিষয়টি নিয়ে জোরেশোরে আলোচনা চলছে। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, 'আমরা চিন্তার দিক দিয়ে বিএনপির কাছাকাছি। দলটির সঙ্গে আগেই আমরা আন্দোলনে ছিলাম। তারপরও নানা হিসাব-নিকাশ রয়েছে। তাই এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছি না কার সঙ্গে জোট হচ্ছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, ৫২টির বেশি দল বা সংগঠন তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যুক্ত ছিল। তাদের মধ্যে ভোট করে জিতে আসতে পারে এমন নেতাদের আসন ছাড় দেওয়া হবে। আগামী সপ্তাহ থেকে ফের দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করবে বিএনপি। দলটি চূড়ান্তভাবে সমমনাদের চাহিদা ও মনোভাব বুঝতে চাইছে। জানা গেছে, বিগত সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির সঙ্গে থেকে আন্দোলনে ছিল ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট।

এছাড়া সমমনা দলের মধ্যে কর্নেল অলি আহমদের লেবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ববি হাজ্জাজের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম), আন্দালিব পার্থের বাংলাদেশে জাতীয় পার্টি (বিজেপি) এবং নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) মাঠে ছিল। আন্দোলনে সক্রিয় ছিল- আসম আব্দুর বর ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন গণতন্ত্র মঞ্চও।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত আলাদা নির্বাচনি জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। সমমনা বা শরিকরা যেন জামায়াতের জোটের দিকে ঝুঁকে না পড়ে সেজন্য বিএনপি এবার বেশ তৎপর। তাই বিএনপি এখন মিত্রদের নিয়ে জোটবদ্ধ ভোটবদ্ধ করতে তোড়জোড় শুরু করেছে। তখন গত মঙ্গলবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সমমনাদের মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনাও হয়েছে।

অনুসন্ধান বলছে, সমমনা দল কর্নেল অলির এলডিপিকে ৩টি আসন ছাড়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত বিএনপির। চট্টগ্রাম-১৪ আসনে এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, কুমিল্লা-৭ আসনে দলটির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ ও চট্টগ্রাম-৭ আসনে প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল আলম তালুকদার রয়েছেন। গণঅধিকার পরিষদকে ২টি আসে আসনে ছাড় দিতে পারে। যার মধ্যে পটুয়াখালী-৩ আসনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও ঝিনাইদহ-২ আসনে দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান রয়েছেন।

ঢাকা-১৩ আসনে এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজকে। বিজেপির সভাপতি আন্দালিব পার্থকে ঢাকা-১৭ এ এবং দলটির মহাসচিব আব্দুল মতিন সাউদকে ঢাকা-৫ আসনে, গণফোরামের একাংশের নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীকে ঢাকা-৬ আসনে ছাড় দিতে পারে বিএনপি। বিএনপির সঙ্গে ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে থাকা ১২ দলীয় জোটের ৫টি দলকে ৭টি আসন দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

এর মধ্যে রয়েছে- জাতীয় পার্টি (জাফর) ২টি, বাংলাদেশ জাতীয় দল ১টি, বাংলাদেশ এলডিপি একটি, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরামের নেতৃত্বে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ২টি ও ইসলামী ঐক্যজোটকে একটি আসন।

এই জোটের শরিকদের মধ্যে পিরোজপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার ও কুষ্টিয়া-২ আসনে দলটির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন। বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম লক্ষ্মীপুর-১ আসনে ও কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে রয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা উল্লেখযোগ্য। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটে বিএনপি ১টি আসন ছাড়তে পারে। সেটি হচ্ছে- নড়াইল-২ আসনে জোটপ্রধান ও এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ।

এছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চের ৬টি দলের মধ্যে ৪টি দলকে ৪টি আসনে ছাড় দিতে চায়। গণতন্ত্র মঞ্চের যুক্ত জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবকে ১টি, বগুড়া-৪ আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা-৮ আসনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিকে মনোনয়নে ইতিবাচক বিএনপি।

এছাড়া পিরোজপুর-২ আসনে মোস্তাফিজুর রহমান ইরানকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির।

একাধিক সূত্র বলছে- এখন পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের দলগুলো বিএনপির সঙ্গে জোট করবে কিনা সেটি নিশ্চিত নয়। এছাড়া কর্নেল অলি আহমদের অবস্থানও পরিষ্কার নয়।

গণঅধিকার পরিষদ ও এবি পার্টি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি মিলে একটি জোট গঠনের চেষ্টা করছে। শেষ পর্যন্ত এবি পার্টি ও গণঅধিকার বিএনপি জোটে নাও থাকতে পারে। তবে, লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তফিজুর রহমান ইরান বলেছেন, তার সঙ্গে বিএনপি নেতাদের আলোচনা চলছে। বিএনপি তার প্রতি ইতিবাচক। জানা গেছে, মাসখানেক আগেই ছোট ছোট দলের কাছে নেতাদের আসনের চাহিদা চেয়েছিল বিএনপি।

বিকেপি/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বিএনপি

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর