গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর
নিজেদের পাশাপাশি সমমনাদের শক্তি কাজে লাগিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসনে জেতার টার্গেটে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করছে জামায়াতে ইসলামী ও সমমনারা। ঐক্যে জোর দিয়ে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়েই ওই তালিকা করছে দলগুলো।
জোটে আটটি দল থাকলেও ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলার সক্ষমতা রয়েছে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের। দল দুটির সমন্বয়ে জোট গঠনের খবরে তৃণমূলেও প্রভাব পড়েছে। যার প্রতিফলন ঘটতে পারে আগামী নির্বাচনের ফলাফলে।
এ জোটে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন ছাড়াও রয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি। দলগুলোর নেতারা বলেন- বেশির ভাগ দলের ঘোষিত প্রার্থীরা মাঠে থাকলেও তফশিল ঘোষণার আগে জোটগতভাবে প্রতি আসনে একজনকে চূড়ান্ত করা হবে।
এক্ষেত্রে কে কতটি আসন পাচ্ছে তার চেয়ে ইসলামী দলগুলোর ভোট যেন ‘একবাক্সে’ পাঠানো যায় তা নিশ্চিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন- ‘তফশিলের আগেই আমাদের সঙ্গে থাকা দলগুলোর জনপ্রিয় প্রার্থীদের সমন্বয়ে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। পরিবর্তনের অঙ্গীকারে আমরা এবার তরুণদের বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। ভালো প্রার্থী পেলে অমুসলিদেরও প্রার্থী করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ আমরা আন্দোলনে রয়েছি। তাই আমরা এ বিষয়ের চেয়ে আন্দোলনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। কাকে কতটি আসন দেওয়া হবে সেটি নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি।’ নেতারা স্বীকার না করলেও দলগুলোর বিশেষ সূত্র বলছে- জামায়াতকে ১৫০ আসন, ইসলামী আন্দোলন ৮০ আসনে এবং মামুনুল হকের বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এবং আহমদ আব্দুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিসসহ অন্য ছয় দলের জনপ্রিয় ৪০ জনকে জোটগতভাবে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে আলোচনা চলছে।
এছাড়া বিশেষ চমক দেখাতে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, অমুসলিম এবং বিশেষ স¤প্রদায়ের ১০ জনকে মনোনয়ন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ইসলামী দলগুলোর।
সমঝোতা হলে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), গণতন্ত্র মঞ্চের ৬ দল এবং গণঅধিকার পরিষদের জ্যেষ্ঠ নেতাদের ২০টি আসনে ছাড় দেওয়া হতে পারে। আগামী দিনে দলগুলোর আচরণ বা গতিবিধি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। সেই হিসেবে আগামী ডিসেম্বর তফশিল ঘোষণা করতে হবে। তাই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মতভিন্নতাসহ নানা দাবি-দাওয়া থাকলেও দলগুলোতে নির্বাচনী প্রস্তুতি চলছে। গত সোমবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২৩৭ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর প্রার্থী তালিকার বিষয়টি ফের আলোচনা এসেছে।
মঙ্গলবার জামায়াতের আমির যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে শফিকুর রহমান দেশে ফিরে এয়ারপোর্টে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সেখানে তিনি বলেন, ‘যথাসময়ে কয়েকটি দলের সমন্বয়ে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।’ যদিও জামায়াতে ইসলামী আরো প্রায় ৬ মাস আগেই ৩০০ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে জোরেশোরে মাঠে রয়েছে। দলটির প্রার্থীদের বেশিরভাগ এবার নতুন। যাদের বড় অংশ নানা ক্ষেত্রে পেশাজীবী। বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাও রয়েছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক। সমাজে নিজস্ব অবস্থান রয়েছে এমন ব্যক্তিদের টার্গেট করে প্রার্থী করেছে কৌশলী জামায়াত। জামায়াতের প্রার্থী তালিকা পর্যবেক্ষণ বলছে- দলটি সারাদেশে প্রাথমিক যে তালিকা করেছে তাতে ৭৮ শতাংশ প্রার্থী নতুন। যাতে বিশেষ স্থান পেয়েছেন তরুণরা।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। দলটি দলীয় নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশার লোকজনকে প্রাধান্য দিয়েছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন- ‘কে কতটি আসন পাবে সেটি আমরা ভাবছি না। আমরা চাই ইসলামী দলগুলোর ভোট একবাক্সে পাঠাতে। এ বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ ছাড় দিচ্ছি। কারণ দেশের মানুষ এখন ইসলামী দলগুলোকে ক্ষমতায় দেখতে চান। তাই আমরা বিচ্ছিন্ন হব না।’
এছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও খেলাফত মজলিসসহ বেশিরভাগ দল প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। জানা গেছে- জোটে আটটি দল থাকলেও মূলত জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের সারাদেশে সব আসনে কার্যক্রম রয়েছে জোরেশোরে। অন্যান্য দলগুলোর প্রার্থী থাকলেও তাদের জনসমর্থন ভোটে খুব একটা প্রভাব ফেলার মতো নয়। তাই বিশেষ করে এই দুই দলের জনপ্রিয় প্রার্থীরা বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায়। এবার প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে গতানুগতিক ধারার বাইরে থাকতে চায় দল দুটি।
গত ৩ অক্টোবর খুলনায় এক অনুষ্ঠানে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছিলেন, ‘আগামী নির্বাচনে ইসলামী দলগুলোর জোট হবে। তাদেরকে ১০০ আসন ছেড়ে দিতে হতে পারে। তিনি বলেছিলেন, এবার আমরা হিন্দু ব্যক্তিকেও প্রার্থী করব।’
এদিকে, এই আটটি দল জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ ৫ দফা দাবিতে গত দুই মাস ধরে যুগপৎ আন্দোলন করছে। বৃহস্পতিবারও তাদের গণমিছিলের কর্মসূচি রয়েছে। দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলন ও নির্বাচনী জোট গড়ার খবরের প্রভাব পড়েছে তৃণমূলেও। যশোর জেলা জামায়াতের আমির ও যশোর-৪ আসনে জামায়াতের প্রাথমিক মনোনয়প্রাপ্ত অধ্যাপক গোলাম রসুল বলেছন- ‘ইসলামী দলের জোট হচ্ছে এরকম খবরে সংশ্লিষ্ট সব দলের নেতারাও এখন ইতিবাচক। কেন্দ্র চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নিলে আমরা ইসলামী দলের একজন প্রার্থীর পক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়ব সে মানসিকতা সবার মাঝে তৈরি হয়েছে।’ জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের তৃণমূলের নেতারা বলেন- সবাই মিলে একজন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলে অভাবনীয় ফলাফল আসতে পারে। স¤প্রতি অনুষ্ঠিত কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফলাফলকে সামনে এনে তারা দাবি করছেন, মানুষ ইতিপূর্বে যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের আর চাইছেন না। যার নেপথ্যে রয়েছে- দলগুলোর অপশাসন আর চাঁদাবাজিসহ নানা কারণ।
বিকেপি/এমএইচএস

