Logo

রাজনীতি

ফরিদপুর-১ আসনে নতুন সমীকরণ

৮ দল ঘুরে ফের বিএনপিতে ফিরছেন শাহ আবু জাফর!

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৯:৫৭

৮ দল ঘুরে ফের বিএনপিতে ফিরছেন শাহ আবু জাফর!

সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। ছবি : সংগৃহীত

প্রবীণ রাজনীতিবিদ সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর বিএনপিতে ফিরছেন বলে জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। বিএনপিতে ফিরতে আবেদনের পাশাপাশি ক্ষমাও প্রার্থনা চেয়েছেন তিনি। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হওয়া ডামি নির্বাচনে আবু জাফর বিএনপি ছেড়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে (বিএনএম) যোগদান করেন এবং ওই নির্বাচনে বিপুল ভোটে হেরে জামানত খোয়ান।

ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতির হাতেখড়ি শাহ মো. আবু জাফরের। রাজনৈতিক জীবনে ফরিদপুর থেকে আওয়ামী লীগ, বাকশাল, জাতীয় পার্টি (জাপা) ও বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন। সর্বশেষ গত বছর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। আবার দল পরিবর্তন করে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নতুন দল জনতা পার্টি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন তিনি।

ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা) আসনের স্থানীয় রাজনীতিতে ফের নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সদা মিষ্টভাষী সাবেক এই সংসদ সদস্য। সম্প্রতি বিএনপিতে তার ফিরে আসার সম্ভাবনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোর গুঞ্জন উঠেছে। যদিও আবু জাফর এখনো স্পষ্ট করে কিছু বলেননি, তবুও তার রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে মাঠ পর্যায়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।

ফরিদপুর-১ আসনে শাহ্ আবু জাফরের দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে। ৮০ ও ৯০-এর দশকে তিনি একাধিকবার নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়নমূলক কাজে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। স্থানীয় রাজনীতিতে এখনো তার ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা ও প্রভাব অটুট বলে মনে করেন অনেক বিএনপি নেতা-কর্মী।

দলের অনেক তৃণমূল নেতাকর্মী মনে করছেন, খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বিএনপি বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ একজন নেতার নেতৃত্বে দল ঐক্যবদ্ধ হতে পারে, আর সে জায়গায় শাহ্ আবু জাফরই উপযুক্ত ব্যক্তি বলে মনে করছেন অনেকে।

বিশেষ করে কৃষকদের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরের কর্মকাণ্ড বিএনপির ভাবমূর্তিকে চরমভাবে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। কারণ ছয়বার দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কৃত নাসিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সাংবাদিক নির্যাতন থেকে শুরু করে স্থানীয় ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দলে ভেড়ানো, কমিটি বাণিজ্য, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে সংগঠনে বিভাজন সৃষ্টি করছেন। এতে দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতারা উপেক্ষিত হচ্ছেন, বাড়ছে ক্ষোভ ও বিভক্তি। নাসিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। যেখানে ফরিদপুর–১ আসনে ‘দলীয় বিভাজন’ ও ‘হাইব্রিড প্রভাব’ বাড়ার আশঙ্কা তুলে ধরে তদন্তপূর্বক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

স্থানীয় ত্যাগী নেতাকর্মীরা বলছেন, নাসিরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের মোটা অঙ্কের বিনিময়ে বিএনপিতে যোগদান করিয়ে বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পদে বসাচ্ছেন। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় জাসদ ছাত্রলীগের মাধ্যমে। ১৯৭১ পরবর্তী সময়ে রাজাকারদের সঙ্গে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন বলে দাবি স্থানীয়দের।

বিএনপি ও জাতীয় পার্টির টিকিটে একাধিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত খন্দকার নাসিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অতীতে ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধেও অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে সরকারি রাস্তার গাছ কেটে আত্মসাৎ করার অভিযোগে এলাকায় তিনি ‘গেছো নাসির’ নামে পরিচিতি পান।

এদিকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় এবং দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আবু জাফরের অবদান বিএনপির জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনতে পারে। এতে দলটির ভোটব্যাংক পুনরুদ্ধারের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।

সূত্রমতে, আবু জাফর সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং ‘শেষবারের মতো’ ধানের শীষের পতাকাতলে ফিরতে চান বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এতে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার জন্য সহানুভূতিশীল পরিবেশ তৈরি হতে পারে। তবে বার দল পরিবর্তন করায় অনেকেই তার রাজনৈতিক অবস্থানকে অস্থির ও সুবিধাবাদী বলে সমালোচনা করছেন।

এলাকার তরুণ ভোটারদের একটি অংশ মনে করে, পুরোনো মুখ দিয়ে নতুন রাজনৈতিক পরিবেশে বিএনপি সফল হতে পারবে না। তারা নতুন নেতৃত্বে পরিবর্তন দেখতে চান।

এদিকে গত ৩ নভেম্বর প্রাথমিকভাবে ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। যেখানে ফরিদপুর-১ আসনে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি দলটি। একাধিক সূত্র জানিয়েছে- আসনটি মূলত শরিক দলের জন্য রাখা হয়েছে। শরিক দলের পক্ষে একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ও সিনিয়র সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন আসনটিতে নির্বাচন করতে পারেন বলেও জানা গেছে। স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় আরিফুর রহমান দোলন নিজ এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসা, মন্দির অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। যা এলাকায় প্রশংসিত।

তবে আবু জাফর বলেছেন, ‘বিএনপিতে ফিরলেই কি মনোনয়ন পাওয়া যাবে-তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।’ অর্থাৎ তার পুনরাগমন দলের ভেতরে নিশ্চয়তা বা স্থিতিশীলতা আনবে কি না, তা অনিশ্চিত।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ফরিদপুর-১ আসনটি ঐতিহ্যগতভাবে আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি। এই আসনে বিএনপি শেষবার জিতেছিল প্রায় ২৫ বছর আগে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির একাধিক গ্রুপিং, দ্বন্দ্বের কারণে আসনটি পুনরুদ্ধার কঠিন হবে।

  • এমআই

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বিএনপি সংসদ নির্বাচন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর