ছবি : বাংলাদেশের খবর
নির্বাচনী প্রস্তুতি, প্রশাসনিক রদবদল ও গণভোটসংক্রান্ত নানা প্রশ্ন তুলে নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসনে যেসব বদলি হয়েছে— বিশেষ করে ডিসি-এসপি পর্যায়ে— তা উদ্দেশ্যমূলক এবং পরিকল্পিত মনে হচ্ছে। হঠাৎ করে ২০ দিনের মাথায় একজন ডিসি বদলি হওয়া কিংবা মাত্র এক সপ্তাহে একাধিক রদবদল হওয়া নিয়ে জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলো উদ্বিগ্ন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) সকালে নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।
গোলাম পরওয়ার মনে করিয়ে দেন, তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ ইসির হাতে চলে আসে। তাই নিরপেক্ষতার স্বার্থে লটারির মাধ্যমে বদলির পুরোনো পদ্ধতিতে ফিরে যেতে হবে, যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে। তিনি বলেন, ‘আগে রাতারাতি ডিসি-এসপি বদলি হয়েছে— কিন্তু তখন অভিযোগ ছিল না। এখনকার রদবদলে স্পষ্ট প্রশ্ন উঠছে।’
জুলাই সনদ ও গণভোটকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে আয়োজনের সিদ্ধান্তও অযৌক্তিক ও অস্পষ্ট বলে মনে করেন গোলাম পরওয়ার। তার মতে, ভোটারদের জানতে হবে জুলাই সনদে কোন সংস্কার প্রস্তাব আছে, তারা কোনগুলোতে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলবে। ‘জাতির সামনে সনদের বিষয়বস্তু পরিষ্কারভাবে প্রকাশ না করলে ভোটার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না,’ মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ওয়েবসাইটে তথ্য প্রকাশ, প্রচারপত্র, ব্যাখ্যা-বই এবং জনসচেতনতামূলক উপকরণ সরবরাহের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
গোলাম পরওয়ার বলেন, প্রবাসীদের ভোট নিয়ে ইসির প্রেজেন্টেশনে গণভোটের একটি বিষয়ও স্পষ্ট করা হয়নি। জাতীয় নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারলেও গণভোটে তারা কীভাবে ভোট দেবেন— সে নির্দেশনা অনুপস্থিত। আবার এনআইডি সমস্যার কারণে অনেক প্রবাসী আবেদন করতে পারছেন না। তাদের বিকল্প পরিচয়পত্র হিসেবে পাসপোর্ট গ্রহণের দাবি পুনরায় তুলে ধরেন তিনি।
আচরণবিধিতে একটি নির্বাচনী এলাকায় মাত্র তিনটি লাউডস্পিকার ব্যবহারের বিধানকে ‘অবাস্তব’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি এলাকায় ১৫-২০টি ইউনিয়ন থাকে, সেখানে তিনটি লাউডস্পিকার দিয়ে প্রচারণা করা অসম্ভব। তাই এই বিধান পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানান তিনি।
গোলাম পরওয়ার জানান, বর্তমান ভোটার তালিকার প্রিন্টেড ছবিগুলো স্পষ্ট নয়, ফলে ভোটার চিহ্নিত করতে সমস্যা হতে পারে। এটি নির্বাচনী ঝামেলা বাড়াতে পারে। তাই দ্রুত উন্নতমানের ছবি ব্যবহার জরুরি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রতি কেন্দ্রে কমপক্ষে ৫ জন সেনা সদস্য মোতায়েনের দাবি জানান তিনি। তার মতে, ‘একজন বা দুইজন সেনা সদস্য দিলে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু ৫ জন থাকলে ভোটারও সাহস পাবে, নাশকতাকারীরাও সাহস পাবে না।’
তিনি আরও জানান, দলের অঙ্গীকারনামা নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে— এমন উল্লেখ থাকলেও কোথায় জমা হবে তা পরিষ্কার নয়। মনোনয়ন যেহেতু স্থানীয় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হয়, তাই দলীয় অঙ্গীকারনামা ঢাকায় ইসি কার্যালয়ে দিতে হবে কি না— সে বিষয়েও ইসিকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিতে হবে।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হলে প্রক্রিয়া, নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত— সবকিছুতেই স্বচ্ছতা থাকা জরুরি।’
এসআইবি/এমএইচএস

