জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চাঁদাবাজি, দখলবাজি এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে জোরালো ক্যাম্পেইনে নামছে জামায়াত ও সমমনা আট দল। পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে সুশাসন নিশ্চিতের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে বলেও দলগুলো প্রচারণা চালাবে। এছাড়া বাংলাদেশে ভারতীয় আশীর্বাদপুষ্ট কোনো দল যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে সে ব্যাপারে জনমত গড়ে তুলতে চায় দলগুলো।
মূলত বিএনপিকে টার্গেট করেই এ প্রচারণা চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে ইসলামী দলগুলো। অবশ্য বিএনপির নেতাদের কাছে ইসলামী দলগুলোর এমন প্রচারণা চালানোর সম্ভাবনার বিষয়টির তথ্য রয়েছে। দলটির নেতারা বলছেন, তারাও দলের অপপ্রচারের জবাব দিতে প্রস্তুত হচ্ছেন।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার দৈনিক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমরা দুর্নীতিবিরোধী জোরালো স্লোগানে অলরেডি নেমে পড়েছি। আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে সেটি বৃহৎ আকারে প্রচার করা হবে। সরকার পতনের পর একটি বড় দল দুর্নীতি আর দখলবাজি শুরু করেছে; মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করেছে। ওই দলটিকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। ক্ষমতায় গেলে সুশাসন নিশ্চিত করা হবে।
জানা গেছে, জামায়াতসহ আন্দোলনরত আট ইসলামী দল আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাত বিভাগে সমাবেশের ডাক দিয়েছে। এ সমাবেশ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটে হ্যাঁ-এর পক্ষে জোরালো প্রচারণা চালানো হবে। সংস্কার বাস্তবায়নের গুরুত্ব¡ বোঝাতে গিয়ে এসব দলের শীর্ষ নেতারা সরকার পতনের পর চাঁদাবাজি ও দখলবাজির বিষয়টি সামনে আনবেন। এছাড়া আগামীতে তারা ক্ষমতায় গেলে সুশাসন নিশ্চিত করা হবে বলেও প্রচারণা চালানোর চিন্তা করা হচ্ছে। দলগুলো মনে করছে- সুশাসন এবং চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে দেশে ইতিবাচক অবস্থা ফিরবে।
আওয়ামী লীগের ক্ষমতার চারটার্মে বাংলাদেশে গণতন্ত্রহরণে ভারতের সহযোগিতার বিষয়টি তুলে ধরা হবে। কার্যত এসব বিষয় ভোটারদের সামনে তুলে ধরার বড় কারণ হচ্ছে, বিএনপিকে নেতিবাচকভাবে সামনে আনা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান দৈনিক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ইতোমধ্যে কিছুদল বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেছে। সামনে যার প্রবণতা আরও বাড়তে পারে। কিন্তু বিএনপির জনভিত্তির কাছে এসব অপপ্রচার টিকবে না। তারপরও বিএনপি সঠিক তথ্য তুলে ধরার ব্যবস্থা করব। দল এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে।
ইতোমধ্যে বিএনপি ও জামায়াত নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রায়ই সভা-সমাবেশে একাত্তর ইস্যুতে জামায়াতের ‘বিতর্কিত’ ভূমিকাকে সামনে আনছেন। আবার জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বিএনপির দুর্নীতির বিষয়ে প্রায়ই কথা বলছেন।
সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি (জাপা) নিষিদ্ধে কৌশলী অবস্থানে থাকা বিএনপির বিরুদ্ধে ইসলামী দলগুলো প্রকাশ্যে কথাবার্তাও বলতে শুরু করে। তাদের অভিযোগ হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে ভারতের অনুকম্পা নিয়ে ক্ষমতায় আসতে দল দুটিকে নিষিদ্ধ চায় না বিএনপি।
এছাড়া দেশের গতানুগতিক ধারার সংস্কারে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিএনপি আন্তরিক নয় বলেও দলগুলোর অভিযোগ। ইসলামী দলগুলোর মতে, বিএনপি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের বিপরীত গিয়ে গণভোটে ‘না’ ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। এছাড়া সরকার পতনের পর থেকে সারা দেশে চাঁদাবাজি আর দলখবাজির নেপথ্যেও বিএনপি রয়েছে। জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতারা এসব বিষয়ে প্রকাশ্যে প্রতিদিন সভা সমাবেশে কথা বলছেন।
আট দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, বিভাগীয় সমাবেশে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শাসনামলের নানা দিক তুলে ধরবেন তারা। অন্তত একটিবার ‘ইসলামী শক্তি’র পক্ষে ভোট কামনা করতে তিনদলের শামনামল সামনে আনবেন তারা।
আন্দোলনরত আট দলের শরিক দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ বলেন, স্পেসিপিক কোনো দলের বিরুদ্ধে নয়, যারাই চাঁদাবাজি ও অনিয়য়ের সঙ্গে জড়িত আমরা তাদের আমরা বিরুদ্ধে কথা বলবো। সেটি কোনো একটি দলের বিপক্ষে গেলে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা দেশে আগামীতে সুশাসন কায়েম করতে চাই। দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর সুশাসনের উপর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একজন নেতা বলেন, সভা-সমাবেশ ছাড়াও ডিজিটাল দুনিয়ায় বিএনপি বা যে দলের লোক চাঁদাবাজিতে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও প্রচারণা চালাতে নানামুখী উদ্যোগ নেবে ইসলামী দলগুলো। বিএনপির কয়েকজন হেভিওয়েট নেতার অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয়ে নানা মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রচারণা চলছে। আগামীদিনে এটি বৃহৎ আকারে প্রকাশ পাবে।
এদিকে বিএনপির মিডিয়া সেলের একটি সূত্র বলছে, ইসলামী দলগুলো ক্ষমতায় গেলে দেশে মৌলবাদ চাঙা হতে পারে বা কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য বাড়তে পারে। পররাষ্ট্র ইস্যুতে দলগুলো আফগানিস্তানের তালেবানী চেতনা বাস্তবায়নের পথে হাঁটবে। এছাড়া ওইসব দলের রাষ্ট্র পরিচালনায় নির্দিষ্ট কোনো ভিউ জাতির কাছে পরিষ্কার নয়। পাশাপাশি জামায়াতের ১৯৭১ সালের ভূমিকাকে সামনে আনতে চায় বিএনপি। ডিসেম্বরে শুরুতেই বা তফসিলের পরপরই এসব বিষয় সামনে এনে প্রচারণায় নামতে পারে দলটি।
ইসলামী দলগুলোর প্রচার-প্রচারণাকে পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি মিডিয়া বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
নির্বাচনে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ বা প্রচারণা নতুন নয়, তবে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে দলগুলোর পাল্টাপাল্টি প্রচার বা অপপ্রচারে ভোটারদের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। যার ফলে, সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশও বিঘিœত হতে পারে। যদিও নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চত করা হবে।
বিকেপি/এমবি

