ক্ষমতায় গেলে গণমাধ্যম সংস্কারে অগ্রাধিকার দেবে বিএনপি : মির্জা ফখরুল
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:৪২
ছবি : সংগৃহীত
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দলটি স্বাধীন গণমাধ্যম দেখতে চায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের কমিটমেন্ট খুব পরিষ্কার। আমরা একটা স্বাধীন গণমাধ্যম দেখতে চাই এবং আমরা সেটাকে তৈরি করতে চাই।’
সোমবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) আয়োজিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল জানান, ক্ষমতায় গেলে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে। ‘সরকার পরিচালনার দায়িত্ব যদি জনগণের মাধ্যমে পাই, আমরা নিঃসন্দেহে এটাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখব,’ তিনি বলেন। তবে ফখরুল এও মন্তব্য করেন, সংস্কার কার্যকর করতে হলে সেটিকে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে এবং পরিবর্তনের ইচ্ছা থাকতে হবে।
তিনি আরও স্মরণ করান, ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা হলে সব পত্রিকা বন্ধ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে একটি মুক্ত ও স্বাধীন সংবাদপত্রের ব্যবস্থা করেন। বিএনপি যখনই দায়িত্বে এসেছে, তখনই গণমাধ্যমকে উন্নত ও উপযোগী করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়।
মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের সতর্ক করে বলেন, সাংবাদিকদের স্বতন্ত্র ও স্বাধীন থাকতে হবে। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে অনেক সাংবাদিক ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করেছেন, তাই সাংবাদিকদের অঙ্গীকার প্রয়োজন যাতে তারা স্বাধীন সাংবাদিকতা চালাতে পারেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একটা কথা না বলে পারছি না, আপনাদের সাংবাদিকদের তো অনেকগুলো ইউনিয়ন আছে— বিএফইউজে, ডিইউজে। আবার দুই দলের দুই ভাগ আছে, তিন ভাগ। নিজেরাই তো আপনারা দলীয় হয়ে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক দলগুলো আপনাদের পকেটে ঢুকতে দিতে চায় না, কিন্তু আপনারাই যদি পকেটে ঢুকে যান, তখন কিন্তু দ্যাট বিকামস্ অ্যা প্রবলেম।’
মতবিনিময় সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, আমার বাংলাদেশ পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বিজেসি সভাপতি রেজোয়ানুল হক সভার সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সদস্যসচিব ইলিয়াস হোসেন। প্রধান প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নির্বাহী মিলটন আনোয়ার। এছাড়া ট্রাস্টিদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন তালাত মামুন ও ফাহিম আহমেদ। অনুষ্ঠান আয়োজনের সহায়তা করে বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন।
বিজেসির আট দফা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে— সম্প্রচারমাধ্যমের জন্য আলাদা আইন প্রণয়ন, স্বাধীন জাতীয় সম্প্রচার কমিশন গঠন, টিভি চ্যানেলকে পে-চ্যানেল ঘোষণা ও সম্প্রচারমাধ্যমকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি, সাংবাদিকদের জন্য ‘কোড অব এথিকস’, টিভি লাইসেন্স নীতিমালা ও মালিকানার ধরন নির্ধারণ, পরিচালনা পর্ষদে কর্মীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, দলীয় প্রভাবমুক্ত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা, স্বাধীন অ্যাক্রেডিটেশন কর্তৃপক্ষ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সাংবাদিকতার নীতিমালা প্রণয়ন।
বিজেসি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, গণমাধ্যম কমিশনের সুপারিশ ও সাংবাদিকদের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের অনিশ্চয়তায় রয়েছে। তবে তারা আশা করছে, রাজনৈতিক দলগুলো এই সুপারিশগুলো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করবে এবং দ্রুত বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেবে।
এমএইচএস

