ছবি : বাংলাদেশের খবর
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতীক ব্যবহারের নতুন বিধান এবং স্থানীয় বিএনপির অসহযোগিতায় শরিকদের জন্য ছেড়ে দেওয়া আসন নিয়ে সংকটে পড়তে যাচ্ছে বিএনপি। খোদ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি দলটির শরিক দলের নেতারাও বিষয়টি স্বীকার করছেন।
তাদের মতে, সংশোধিত আরপিওতে জোট করলেও নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার বিধান চালু করায় ছোট দলের প্রার্থীরা চাপে পড়েছেন। কারণ, বেশির ভাগ ছোট দলের নেতার চাওয়া থাকে জোটে গিয়ে বড় দলের প্রতীক ব্যবহার করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া। যার নেপথ্যে রয়েছে, প্রতীকের পরিচিতি এবং বড় দলের প্রতিনিধিত্বের পরিচয় বহন করার বিষয়।
ছোট দলকে নিয়ে নানা শঙ্কায় শুরু থেকেই আরপিও সংশোধনের বিরোধিতা করে আসছে বিএনপি। সবশেষ ১৯ নভেম্বর ইসির সঙ্গে বৈঠকে সংশোধিত আরপিও এ বিধানের বিরুদ্ধে কথা বলেন বিএনপির প্রতিনিধিরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান দৈনিক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘নিজস্ব প্রতীকে ভোট করতে বাধ্য করায় ছোট দলের প্রার্থীদের পাস করানো চ্যালেঞ্জ হবে। তারপরও জোট শরিকদের জন্য ছেড়ে দেওয়া আসন জেতাতে বিএনপি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। দীর্ঘদিন ওইসব আসনের মাঠে থাকা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঝে কষ্ট থাকলেও দলের স্বার্থে তারা কাজ করবেন।’
তবে, শীর্ষ নেতারা যাই বলুক না কেন শরিকদের আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি নেতারা তা মানতে নারাজ। তারা বলছেন, দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর হামলা-মামলার শিকার এসব নেতা কেন শরিকদের পক্ষে কাজ করবেন? কারণ, শরিক দলের বেশির ভাগ নেতা বিএনপি নেতাকর্মীদের খোঁজখবর রাখেননি।
দলগুলোর একাধিক সূত্র বলছে, গত ৩ নভেম্বর ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭ আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে বিএনপি। বাকি ৬৩ আসন তখন ফাঁকা রাখা হয়। এসব আসনে দলের নেতাদের পাশাপাশি জোটের জন্যও আসন রেখেছে বিএনপি।
বিএনপির কাছে ১৬৮ জনের প্রার্থী তালিকা জমা দিয়েছে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা। যার মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চের ছয় দলের মধ্যে পাঁচটি দলের ৪০ জন, ১২ দলীয় জোট ২১ জন, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ৯ জন, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ১৯ জন, এলডিপি ১৩ জন, গণ অধিকার পরিষদের ২৫ জন, গণফোরাম ১৬ জন, ন্যাশনাল ডেমক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম) ১০ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) পাঁচজন, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ছয়জন এবং বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি) চারজনের প্রার্থী তালিকা দিয়েছে।
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের কতটি আসন দেবে নিয়ে দলটির উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। কারণ, ইতিমধ্যে এসব আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজ দলীয় প্রার্থী পেতে বেশ তৎপরতা চালাচ্ছে।
ফাঁকা রাখা আসনে যুগপথের শরিক বা সমমনা দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন না দিলে কাজ না করার ঘোষণাও দিয়েছেন অনেক নেতা। আবার কোনো কোনো আসনে জোটের প্রার্থীদের ‘সবুজ সংকেতে’ স্থানীয় বিএনপিতে ব্যাপক অসন্তোষ চলছে।
জানা গেছে, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে পটুয়াখালী-৩ আসনে থেকে বিএনপি মনোনয়ন দিতে পারে। এ খবরে সেখানকার বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী ছাত্রদলের সাবেক নেতা হাসান মামুনের সমর্থকরা শক্ত মনোভাব দেখাচ্ছেন। মনোনয়ন স্থগিত রাখা এ আসনে নুরকে মনোনয়ন দিলে বিএনপি নেতাকর্মীরা তার পক্ষে কাজ করবেন না বলে সভা-সমাবেশে জানান দিচ্ছেন।
স্থগিত রাখা ব্রাক্ষণবাড়িয়া-২ আসনে জমিয়তে ওলামা ইসলামের নেতা জুনায়েদ আল-হাবীবকে মনোনয়ন দেওয়ার গুঞ্জন চলছে। এ খবরের পর স¤প্রতি একটি টকশোতে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ও দলটির আলোচিত নেতা রুমিন ফারহানা বলেছেন, দল মনোনয়ন না দিলে ভোটাররা চাইলে তিনি প্রার্থী হতে পারেন।
বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে প্রার্থী করার খবরে সেখানকার মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শাহে আলমের সমর্থকরা ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তারা এখানে জোটের কোনো প্রার্থীর পক্ষে ভোট না করার ঘোষণা দিয়েছেন।
যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনে জমিয়তে ওলামা ইসলামের রশিদ ওয়াক্কাসকে বিএনপির প্রার্থী করা হতে পারে এমন গুঞ্জনে দলটির নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী দিতে ইতিমধ্যে স্থানীয় নেতারা দলের তিনজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের দাবি, ১৭ বছরে একদিন কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন না রশিদ ওয়াক্কাস। তাই তাকে প্রার্থী করা হলে আসনটিতে পরাজয়ের শঙ্কা তাদের।
লক্ষ্মীপুর-১ আসনে এরই মধ্যে সবুজ সংকেত পেয়েছেন ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম। সেখানে বিএনপি নেতা হারুন-অর রশীদ মনোনয়ন প্রত্যাশী। সেলিমকে মনোনয়ন দিলে শেষ পর্যন্ত স্থানীয় বিএনপি তার পক্ষে কাজ করবে কিনা ইতিমধ্যেই সংশয় তৈরি হয়েছে।
ঢাকা-১৭ আসনে বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থকে, ঢাকা-১৩ আসনে এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিকে প্রার্থী করায় চিন্তায় বিএনপির কাউকে এখনো প্রার্থী করা হয়নি। এসব আসনের প্রায় সব কয়টিতেই বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যাপক ক্ষুব্ধ।
এসব আসনে শিগগিরই মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে বিএনপি। দলটির চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণার পর ক্ষুব্ধ অনেকেই শরিকদের আসনে স্বতন্ত্র ভোট করতে পারেন বলেও জানা গেছে। ফলে, শরিক দলের প্রার্থীদের জয় কঠিন হতে পারে।
বিএনপির সমমনা ন্যাশন্যাল পিপলস পার্টি (এনসিপি) চেয়ারম্যান ও নড়াইল-২ আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ফরিদুজ্জামান ফরহাদ দৈনিক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘দলীয় প্রতীক ব্যবহারে বাধ্যবাধকতায় ছোট দলগুলো অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, ছোট দলের প্রতীক সম্পর্কে অনেকে এখনো ইতিবাচক না। ফলে, কিছুটা হলেও পাস করতে ছোট দলের প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।’
স্থানীয় বিএনপির সহযোগিতা বিষয়ে তিনি বলেন- ‘দলের হাইকমান্ড শক্ত অবস্থানে থাকলে আশা করি সমস্যা হবে না।’
বিকেপি/এমএইচএস

