উন্নত চিকিৎসার জন্য
আজ লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০৪
মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত থাকায় কাতার থেকে পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় পৌঁছামাত্রই আজ যেকোনো সময় লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, কাতার আমির প্রদত্ত বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে ঢাকায় পৌঁছাতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। প্রয়োজনে বিকল্প আরও দু-তিনটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। এদিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমান শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছাচ্ছেন। তিনি খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হয়ে লন্ডনে যাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে এসএসএফের নিরাপত্তায় হেলিকপ্টারে খালেদা জিয়াকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেওয়া হবে। সেখান থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে যাত্রা করবেন তিনি। ইতোমধ্যে বিমানবন্দর এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সময়মতো এলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দুই পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান, ছয়জন চিকিৎসক, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ১৫ জন সফরসঙ্গী হবেন। লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে তাদের গ্রহণ করবেন তারেক রহমান। প্রায় সাত মাস পর মায়ের সঙ্গে তারেক রহমানের দেখা হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা করে আজ দেশের সব মসজিদে বাদ জুমা দোয়া এবং মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় প্রার্থনার আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এভারকেয়ার হাসপাতালের বাইরে সংবাদ ব্রিফিংয়ে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বোর্ড লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। কাতার রয়্যাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর অথবা শুক্রবার সকালেই তাকে লন্ডনের নির্দিষ্ট হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
জানা যায়, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় লন্ডন ও চীন থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ঢাকায় এসে মেডিকেল বোর্ডে যোগ দিয়েছেন। তার ফুসফুসের সংক্রমণ কিছুটা উন্নতি হলেও হৃদযন্ত্রে জটিলতা রয়ে গেছে। লিভার সিরোসিসসহ অন্যান্য সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
গত ২৩ নভেম্বর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে এসডিইউ থেকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। ১৩ দিন ধরে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিদেশে যাচ্ছেন মোট ১৫ সদস্যের দল— ডা. জোবাইদা রহমান, সৈয়দা শর্মিলা রহমান, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকি, ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, ডা. নূরউদ্দিন আহমদ, ডা. জাফর ইকবাল, ডা. মোহাম্মদ আল মামুন, এসএসএফ সদস্য হাসান শাহরিয়ার ইকবাল ও সৈয়দ সামিন মাহফুজ, সহকারী মো. আবদুল হাই মল্লিক, ব্যক্তিগত সচিব মো. মাসুদুর রহমান এবং গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম ও রূপা শিকদার।
চিকিৎসা শেষে তিনি দেশে ফিরতে পারবেন কি না— এ নিয়ে চিকিৎসকেরা এখনো কোনো সময়সূচি দিতে পারেননি। ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হওয়ার পর প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন খালেদা জিয়া। পরে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে তার সাজা স্থগিত করা হয়। তবে গত কয়েক বছর ধরেই বেশির ভাগ সময় তাকে হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে।

