Logo

রাজনীতি

তারেক রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আজ

Icon

এম. ইসলাম

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৯

তারেক রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আজ

১৭ বছরের দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁকে 'ঐতিহাসিক ও রাজকীয় সংবর্ধনা' দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বিএনপি। আজ বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার। ঢাকায় পৌছানোর পর রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় তাঁকে সংবর্ধনা দিতে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে।

তারেক রহমান এমন সময় দেশে ফিরছেন যখন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একেবারে দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। তাঁর মা বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। এ ছাড়া দেশে বেশ অস্থিরতা চলছে। সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতা শরিফ ওসমান হাদি নির্মমভাবে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে দৈনিক প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট, উদীচীসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে।

এমন প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের কাছ থেকে দেশকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যশা করছেন অন্যান্য দলের রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা।

এদিকে, দীর্ঘ সময় পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে আসার খবরে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র- সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছে।

দুদিন আগে থেকেই ঢাকায় সংবর্ধন্য স্থলে আসতে শুরু করেছেন জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা। বিএনপি তৃণমূলের এই ঢাকামুখী জনস্রোতকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য শৃঙ্খলা কমিটি ও স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করেছে।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্বাগত মিছিল ও প্রস্তুতিসভা করা হয়েছে। কয়েকদিন আগে থেকেই। বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে ১০টি রুটে। দলটির লক্ষ্য, বিমানবন্দরসহ গোটা ঢাকা জনসমুদ্রে পরিণত করা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ দৈনিক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, 'দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

তাঁর সংবর্ধনায় লাখ লাখ মানুষের মহামিলন হবে। তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটবে। স্বাভাবিকভাবেই নেতাকর্মীরা এখন আরও বেশি উচ্ছ্বসিত এবং উদ্দীপ্ত।

যাত্রা ও সফরসঙ্গী: সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল গণমাধ্যমকে জানান, তারেক রহমানের ফ্লাইট বুধবার দিবাগত মধ্য রাতে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হবে। দলের স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বাংলাদেশ বিমানের এই নিয়মিত ফ্লাইটে তারেকের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্যরাও থাকছেন। তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কমিটির আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, 'আমাদের নেতা বাংলাদেশ বিমানের এক নিয়মিত ফ্লাইটে লন্ডন থেকে বাংলাদেশ সময় বুধবার মধ্যরাতে হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করে বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটে যাত্রা বিরতির পর বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করবেন ইনশাল্লাহ।'

ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অভ্যর্থনা জানাবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এরপর সড়ক পথে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন তিনি। যাওয়ার পথে তিনি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেস ওয়ে অর্থাৎ ৩০০ ফিটে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে বিএনপি।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, 'এটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান হবে। সেখানে তিনি দেশবাসীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবেন এবং মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করবেন।'

এরপর তিনি চলে যাবেন এভারকেয়ার হাসপাতালে। সেখান থেকে তারেক রহমান গুলশান অ্যাভিনিউতে ১৯৬ নম্বর বাসায় যাবেন। এই বাসায় তারেক রহমান থাকবেন।

তাঁর সফরসঙ্গী থাকছেন, সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান, কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, দলের মিডিয়া টিমের প্রধান আবু আবদুল্লাহ সালেহ, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবদুর রহমান সানি ও তাবাসসুম ফারহানা।

নিরাপত্তা ও যানবাহন: বিএনপি তারেক রহমানের নিরাপত্তার জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনা হয়েছে যা ইতোমধ্যে দেশে পৌঁছেছে। এ ছাড়া টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার প্রাডো এলসি ২৫০ মডেল গাড়ি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে এবং বাংলাদেশে নিবন্ধিত হয়েছে।

নিরাপত্তার জন্য একাধিক আগ্নেয়াস্ত্রের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। তারেক রহমান বিমানবন্দর থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার সময় পাবেন পুলিশ প্রটেকশনসহ বিশেষ নিরাপত্তা। এ ছাড়া তারেক রহমানের বাসভবন ও অফিসেও থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। নিরাপত্তা ছাড়পত্র ছাড়া কাউকে তাঁর ধারে-কাছে ভিড়তে দেবে না

পুলিশ। ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও ছদ্মবেশে গোয়েন্দারা তারেক রহমানের নিরাপত্তার দিকটি দেখভাল করবেন। পাশাপাশি বিমান বন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত দলের পক্ষ থেকে তারেক রহমানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার নেতৃত্বে চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্সসহ একাধিক টিম কাজ করবে। এ ছাড়া দলের বিশ্বস্ত নেতাকর্মীদের সমন্বয়েও একটি টিম গঠন করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রেড, ইয়েলো ও হোয়াইট-এই তিন জোনে ভাগ করে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তার ছক। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)।

দলীয় সূত্র জানায়, নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। বিমান বন্দর থেকে গুলশানের বাসা পর্যন্ত তারেক রহমানকে কয়েকস্তরের নিরাপত্তা দিতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে কড়াকড়ি। তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ। কেবল যাত্রীরাই এই সময়ে প্রবেশ করতে পারবেন।

সংবর্ধনার মঞ্চ: বিশ্বরোড থেকে পূর্বাচলমুখী ৩০০ ফিট সড়কের একটি অংশজুড়ে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। ৪৮ ফুট দীর্ঘ, ৩৬ ফুট প্রসস্ত ও সড়ক থেকে আট ফুট উঁচুতে এ মঞ্চ। প্রায় ৯০০ মাইক লাগানো হবে রাজধানীতে। এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে আবদুল্লাহপুর, বিশ্বরোড, বনানী হয়ে মহাখালী, যমুনা ফিউচার পার্ক, ৩০০ ফিটের রাস্তা ধরে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত লাগানো হচ্ছে এসব মাইক। পুরা এলাকার সিসি টিভির নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

তারেক রহমানের সংবর্ধনার মঞ্চে সঙ্গে থাকবেন তার সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান, একমাত্র সন্তান ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা, যুগপৎ আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা ও দেশে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

ইতিবাচক অন্য রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষকরা: তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, শিক্ষাবিদ ও অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের অভিমত-তারেক রহমানের দেশে ফেরা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধার এবং জাতীয় ঐক্যের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, 'তারেক রহমানের দেশে ফেরা দেশের জন্য খুব ইতিবাচক। কারণ, দেশ আসলে এ মুহূর্তে আসলে নেতৃত্ব শূন্যতায় রয়েছে। তিনি এসে যদি জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন তাহলে এবং তাঁর দলের নেতাকর্মীদের যদি মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারেন তাহলে তিনি জাতীয় নেতার আসন পাবেন। এ ছাড়া জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী বাংলাদেশে তরুণদের চাওয়াকে বিশেষ প্রধান্য তাকে দিতে হবে।'

তবে, সঠিকভাবে দল নিয়ন্ত্রণ বা জাতীয় ঐক্য গড়তে না পারলে বিপরীতটা হওয়ার আশঙ্কাও করছেন অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী বলেন, 'তারেক রহমানের আগমন দেশের জন্য ভালো বার্তা। তার প্রত্যাবর্তনের ফলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। 'তিনি বলেন, 'আগামী ফেব্রুয়ারিতে যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, সেখানে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে দেশের বর্তমান এলোমেলো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। সেজন্য তারেক রহমান ক্যারিশমাটিক নেতৃত্ব দেখাতে হবে।'

আগমনের পর দুই দিনের কর্মসূচি: বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, শুক্র ও শনিবার তারেক রহমানের কর্মসূচি রয়েছে। শুক্রবার জুমার নামাজের পরে জিয়াউর রহমানের মাজারে যাবেন তারেক রহমান। সেখান থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন তিনি। পরদিন শনিবার ভোটার তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে যাবেন নির্বাচন ভবনে এবং জুলাই আন্দোলনে আহতদের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন পঙ্গু হাসপাতালে। সেদিন ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করতেও যাবেন তারেক রহমান।

কবে দেশ ছেড়েছিলেন ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তারেক রহমান প্রায় ১৮ মাস কারাভোগ করেন। ২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়ার পর ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি সপরিবারে যুক্তরাজ্যে চলে যান। সেখানে তিনি প্রথমে চিকিৎসার জন্য গেলেও পরবর্তীতে সেখানে বসবাস করতে শুরু করেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তার নামে একাধিক মামলা দেওয়া হয়।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের পর তারেক দেশে ফিরছেন এবং আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন।

আইএইএইচ/

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

তারেক রহমান বিএনপি

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর