রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার
ঐক্যের সরকার গঠনের জন্য প্রস্তুত জামায়াত : ডা. শফিকুর রহমান
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:৩৪
আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের পর সম্ভাব্য ঐক্যের সরকারে জামায়াতে ইসলামী যোগ দিতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। বুধবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, দেশকে অন্তত পাঁচ বছর স্থিতিশীল রাখতে দলগুলো একসঙ্গে সরকার গঠনে রাজি হলে জামায়াত তাতে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা করেছেও বলে জানিয়েছেন তিনি।
নির্বাচনের আগে সাম্প্রতি বিভিন্ন জনমত জরিপে দেখা যায়, প্রায় ১৭ বছরের মধ্যে অনুষ্ঠেয় প্রথম নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কাছাকাছি দ্বিতীয় স্থানে থাকবে জামায়াতে ইসলামী। এতে ১৭ কোটি ৫০ লাখ মুসলিম জনসংখ্যার এই দেশে দলটির মূলধারার রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে। সর্বশেষ ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে জোট সরকারে ছিল জামায়াত।
ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘‘আমরা অন্তত পাঁচ বছরের জন্য একটি স্থিতিশীল দেশ চাই। দলগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে আমরা একসঙ্গেই সরকার পরিচালনা করব।
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ঢাকার একটি আবাসিক এলাকায় তার অফিসে রয়টার্সকে ওই সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। জেন-জিদের একটি দলের সঙ্গে নির্বাচনী জোট করে দলটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেওয়ার কয়েকদিন পর এই সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি।
দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান
জামায়াত শরিয়া-ভিত্তিক শাসনব্যবস্থার পক্ষে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে দলটি রক্ষণশীলতা থেকে বেরিয়ে নিজেদের আহ্বানের ক্ষেত্র বিস্তৃত করার চেষ্টা করছে। শফিকুর রহমান বলেন, যেকোনও ঐক্যের সরকারের জন্য দুর্নীতিবিরোধী কর্মসূচি অবশ্যই একটি অভিন্ন লক্ষ্য হতে হবে।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি আসন জয়ী দল থেকেই প্রধানমন্ত্রী হবেন। যদি জামায়াত সবচেয়ে বেশি আসন জিততে পারে, তাহলে তিনি প্রার্থী হবেন কি না, সেটি দলই সিদ্ধান্ত নেবে।
গত বছরের আগস্টে তরুণদের নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানে দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর জামায়াতের রাজনৈতিক পুনরুত্থান ঘটে। আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ক্ষমতায় থাকাকালীন জামায়াতে ইসলামীর কট্টর সমালোচক ছিলেন হাসিনা। তার শাসনামলে দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন।
জামায়াতের সনদ দেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান লঙ্ঘন করেছে বলে ২০১৩ সালে আদালত এক রায় দেওয়ার পর থেকে দলটিকে নির্বাচনে নিষিদ্ধ করা হয়। পরে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৪ সালের আগস্টে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক
শফিকুর রহমান বলেন, ঢাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। তার পতনের পর দুই দেশের সম্পর্ক কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্নে পৌঁছেছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ভারত শেখ হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কর্মসম্পর্ক গড়ে তুলেছিল; যার ফলে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ব্যবসা ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারনে সহায়তা করেছিল।
বাংলাদেশে পরবর্তী সরকার গঠন করতে পারে; নয়াদিল্লি এমন সব দলের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। দিল্লির এই তৎপরতার মাঝেই চলতি বছরের শুরুর দিকে জামায়াতের আমীর ভারতীয় একজন কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক করেন বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশের কূটনীতিকরা যেখানে প্রকাশ্যেই তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, সেখানে ওই ভারতীয় কর্মকর্তা বৈঠকটি গোপন রাখার অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সবার সঙ্গে এবং নিজেদের মধ্যেও উন্মুক্ত সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সম্পর্ক উন্নয়নের কোনও বিকল্প নেই।’’
ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। তবে ভারত সরকারের একটি সূত্র বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে জামায়াতের ঐতিহাসিক ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে জানতে চাইলে শফিকুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা সবার সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখি। আমরা কখনোই কোনও একটি দেশের দিকে ঝুঁকতে আগ্রহী নই। বরং আমরা সবাইকে সম্মান করি এবং দেশগুলোর মাঝে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক চাই।’’
তিনি বলেন, জামায়াতকে অন্তর্ভুক্ত করে গঠিত কোনও সরকারই রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনকে নিয়ে ‘‘স্বস্তিবোধ করবে না’’। ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন শাহাবুদ্দিন। দেশের আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান শাহাবুদ্দিন নিজেও চলতি মাসের শুরুর দিকে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, মেয়াদের মাঝপথে পদত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন তিনি।
তবে বুধবার রয়টার্সের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে জামায়াত আমীরের ওই অবস্থান নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন। এ বিষয়ে কথা বলে তিনি বিষয়টিকে আর জটিল করতে চান না বলে জানিয়েছেন।
সূত্র : রয়টার্স

