মাহফিলকে নেতা ও বিত্তশালীদের প্রভাবমুক্ত করতে হবে : আফেন্দি
মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:৪১
একটি মুসলিম প্রধান রাষ্ট্র হিসেবে আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের শহরে-গ্রামে শীত মৌসুমে ওয়াজ মাহফিল, তাফসীর মাহফিল, ইসলামী জলসা-সম্মেলনের ধারা চলে আসছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা খুব আগ্রহ নিয়ে এ সব দ্বীনি মাহফিলে অংশগ্রহণ করে থাকেন। ওয়ায়েজীনে কেরামের মুখ থেকে ধর্মীয় ওয়াজ ও আলোচনা শ্রবণ করে অসংখ্য মানুষ পরিবর্তনের পথে আসে। মুসলিম হয়েও ইসলামী শরীয়ত মেনে চলে না এমন অনেক শ্রোতার জীবনে এ সব মাহফিলের কল্যাণে পরিবর্তন সূচিত হওয়ার অগণিত প্রমাণও রয়েছে।
ইদানীংকালে মাহফিল ও শ্রোতার সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেলেও জৌলুস ও স্বকীয়তা যেন হৃাস পেয়েছে। সম্মানিত আলোচকগণের ঈমান-আমল যত ভালো হয় তাদের বয়ানের প্রভাবটাও সমাজে তত বেশি পড়ে। আয়োজক ও আলোচকবৃন্দের কাছে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য তথা ইখলাস যে মাত্রায় থাকে, শ্রোতামণ্ডলীর মনোজগতে প্রভাবও ঐ মাত্রায় হয়।
বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন মাহফিলে রাষ্ট্রের কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, রাজনৈতিক কোন নেতা কিংবা বিশেষ কোন ব্যবসায়ীকে অতিথি করার একটা কালচার ব্যাপকভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে। এটা দোষের কোন বিষয় নয়। মাহফিলের ব্যয়ভার বহন করার ক্ষেত্রে কারো অনুদান পাওয়া অথবা কোন বিশেষ ব্যক্তিকে অতিথি করে সম্মানিত করার ইতিবাচক অনেক দিকই থাকতে পারে। তবে তাদের কোন প্রকার অন্যায় হস্তক্ষেপ, অসদাচরণ ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য যে কোন মাহফিলের ভাবগাম্ভীর্যকে সন্দেহাতীত ভাবে বিনষ্ট করে, যেমনি ভাবে বক্তাদের কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করলে আয়োজনটি ক্ষতির মুখে পড়ে।
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যমণ্ডিত এ মাহফিলগুলোতে কখনো কখনো এমন অতিথিবৃন্দ আগমন করেন যারা পুরো সময়টা গভীর মনোযোগ দিয়ে আলোচনা শুনেন এবং এতে সামিল হতে পেরে নিজেদেরকে গর্বিত মনে করেন। নিঃসন্দেহে এটা প্রশংসনীয়। বিপরীতে কোথাও কোথাও এমন অতিথিও আসেন যাকে আসা মাত্রই বক্তব্যের সুযোগ দিতে হয়। কখনো বা একজন বক্তার চলমান আলোচনাকে মাঝপথে থামিয়ে দিতেও দেখা যায়।
এতে করে শুধু যে আলোচনার ছন্দপতন ঘটে তা নয়, বরং পুরো আয়োজনটাই তার সৌন্দর্য হারায়। এ ধরণের আচরণ সাধারণত দ্বীনি মাহফিলের কালচারের সাথে যায় না। হ্যাঁ! আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দের কেউ যদি এমন পর্যায়ের হন যিনি দীর্ঘ সময় থাকতে পারবেন না, তাহলে কর্তৃপক্ষের উচিত সময়টাকে ঐ ভাবেই মেইনটেইন করা, যেন প্রোগ্রামে তার কোন প্রভাব না পড়ে।
সম্মানিত বক্তাসমাজের উচিত স্থানকাল ও পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনা করা এবং অযথা বিতর্কের সৃষ্টি হয় এমন কথা না বলা। অপরদিকে অতিথি হয়ে যারা আসেন তাদেরও কর্তব্য অহমিকাপূর্ণ বক্তব্য না দেওয়া এবং অন্যায় হস্তক্ষেপ ও সকল প্রকার অসদাচরণ থেকে বিরত থাকা।
শ্রোতাদেরও দায়িত্ব হল একটা মাহফিলকে শতভাগ সফল করার জন্য শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ আন্তরিক সহযোগিতা করা। এক কথায় আয়োজক, আলোচক, অতিথি ও শ্রোতা এই চার স্তরের প্রত্যেককেই নিজ নিজ জায়গা থেকে আন্তরিকতাসহ এগিয়ে আসতে হবে যেন এই মাহফিলগুলো অধিকতর কামিয়াব হয় এবং আমাদের কারো ভুলে যেন এ সব ধর্মীয় প্রোগ্রামের আবেদন ও সার্বজনীনতা নষ্ট না হয়।
আইএইচ/

