Logo

খবর

ক্ষেতলালের হিন্দা শাহী মসজিদ

নিভৃত পল্লীতে নির্মাণশৈলীর অনন্য নিদর্শন

Icon

মতলুব হোসেন

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:০৮

নিভৃত পল্লীতে নির্মাণশৈলীর অনন্য নিদর্শন

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার নিভৃত পল্লী গ্রাম হিন্দা কসবায় অবস্থিত ঐতিহাসিক হিন্দা শাহী জামে মসজিদটি স্থাপত্যের সুনিপুণ নির্মানশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন। মুঘল স্থাপত্যের অনুকরণে তৈরি এই মসজিদটি আজও সবার কাছে দৃষ্টিনন্দন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।  এ ছাড়া মসজিদের দেয়ালে বিভিন্ন রংয়ের কাঁচ, মার্বেল পাথর ও সিরামিকের টুকরো বসিয়ে অলংকরণ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

জানা গেছে, এ মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা হলেন চিশতীয়া তরিকার অন্যতম পীরে অলীয়ে কামেল হয়রত খাজা শাহ মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল গফুর চিশতী (রহ.)। তিনি সদুর কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার পীর কাশিমপুর গ্রাম থেকে ষাটের দশকে অত্র এলাকায় চিশতিয়া তরিকার প্রচারের জন্য আস্তানা গড়ে তোলেন। সেই সময় অত্র এলাকায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ দলে দলে তাঁর অনুসারী হতে থাকেন। তখন তিনি ওই এলাকায় একটি মসজিদ নির্মানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। যার ফলে তিনি তার আস্থাভাজন খলিফা আব্দুল খালেককে সাথে নিয়ে বাংলা ১৩৬২ সনে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন।

মসজিদ নির্মাণের পুরোকাজ তদারকি করার দায়িত্ব দেন ঐ খলিফাকে। পুরো ৩ বছর বছর লেগে যায় সম্পূর্ণ মসজিদটির নির্মাণ কাজে। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪৯.৫ ফুট, প্রস্থ্য ২২.৫ ফুট। ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের সঙ্গে মিল রেখে, পাঁচটি গম্বুজ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মসজিদটি। বড় গম্বুজটি রয়েছে মাঝখানে, বাকি চারটি গম্বুজ রয়েছে চার কোনায়, যা বড় গম্বুজটির সঙ্গে সংযুক্ত।

মসজিদটির ছাদ পাঁচটি গম্বুজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হলেও লক্ষ্যণীয় যে, এগুলো নির্মাণে কোনো লোহার রড ব্যবহার করা হয়নি। মাঝখানের বড় গম্বুজের ভেতরের অংশে ‘আয়াতুল কুরসি’ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লেখা রয়েছে। মসজিদটির উত্তর-পূর্ব কোণে রয়েছে চারতলা বিশিষ্ঠ ৪০ ফুট সুউচ্চ একটি মিনার।

মসজিদটির পাশে চির নিন্দ্রায় শায়িত আছেন ‘শাহ্ এলেমজি (রহঃ)’ ও ‘শাহ্ কালেমজি (রহ.)’। প্রতি বছর রবিউল আউয়াল চাঁদের ৯ তারিখে মসজিদ চত্বরে পবিত্র ওরশ মোবারক উপলক্ষ্যে হালকায়ে জিকির অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানে উপজেলা ও জেলার বাইরে থেকে আসা প্রায় ২০/২৫ হাজার লোকের সমাগম ঘটে। 

জয়পুরহাট জেলাসহ উত্তরবঙ্গে এ মসজিদটি একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। জেলার বিভিন্ন গ্রাম ও বাইরের জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক নারী-পুরুষ প্রতিদিন মসজিদটি দর্শন করতে আসে। তবে এক্ষেত্রে মসজিদ দর্শনে এসে যাতায়াত সমস্যায়ও পড়ে লোকজন।

ভারী যানবাহন না থাকায় উপজেলা সদর থেকে ৮-১০ কিলোমিটার রাস্তা রিক্সা-ভ্যান ও অটো যোগে আর্কষণীয় এ মসজিদ দেখার জন্য আসতে হয়। এছাড়া নিভৃত পল্লীতে অবস্থিত হওয়ায় থাকা-খাওয়ার সমস্যায়ও পড়তে হয় দর্শনার্থীদের। দূরের কোনো দর্শনার্থী এলে তাকে জয়পুরহাট শহরে রাত যাপন করতে হয়। এজন্য এলাকাবাসী দীর্ঘদিন থেকে ক্ষেতলাল উপজেলা সদরে একটি মান সম্পন্ন ডাকবাংলো গড়ে তোলার দাবি জানিয়ে আসছেন। আর ডাক বাংলো স্থাপন করতে পারলে একদিকে দর্শনার্থীদের ভোগান্তি কিছুটা লাঘব হবে, অন্যদিকে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হবে হিন্দা শাহী জামে মসজিদটি এবং বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে অবদান রাখবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।

মসজিদের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই মসজিদটি দেখতে এসে অনেকে এর নির্মাণ কৌশল দেখে অভিভূত হন। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দর্শনার্থীর সংখ্যা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা করেন।

লেখক : জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক বাংলাদেশের খবর

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ইসলাম ধর্ম

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর