-6808efc174203.jpg)
অপরাধীর কোনো ধর্ম নেই। অপরাধের পক্ষে সাফাই গাওয়া প্রকৃত মানুষের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। কিন্তু কখনো কখনো কিছু অপরাধ অতি মানবাধিকার সচেতন মানুষরূপী কিছু ভণ্ডের চিন্তার অসুস্থতা প্রকাশ করে দেয়।
তেমনই একটি সাম্প্রতিক আলোচিত কাশ্মিরের ঘটনাটি; হিন্দু হওয়ায় সেখানে নাকি ২০-এর অধিক পর্যটককে হত্যা করেছে মুসলিম পরিচয় দানকারী স্থানীয় যোদ্ধারা (স্বাধীনতাকামীরা)।
এরই মধ্যে ঘটনাটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে অসংখ্য মানুষ। এবং তাদের সন্দেহ যে, অমূলক নয়, তারও একাধিক যৌক্তিক ব্যাখ্যা রয়েছে। কিন্তু মূল সমস্যা হলো- প্রচারিত খবরে বলা হয়েছে, 'মুসলিম সন্ত্রাসীরা হিন্দু পর্যটকদের হত্যা করেছে'। ব্যস, এতেই মুসলিম ও ইসলাম ধর্মের প্রতি মনের বিষাক্ত খেদ ঝাড়ছেন অসংখ্য মানুষ। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো- এদের মধ্যে বিরাট সংখ্যক 'মুসলিম' পরিচয়ধারী।
স্বল্প হলেও বয়সের অভিজ্ঞতা আমাকে স্পষ্ট করেছে যে, বাস্তবে পৃথিবীতে নিঃস্বার্থ কোনো সংগঠন ও মহামানব নেই। যদি মানবকল্যাণজনক ও নিঃস্বার্থ কিছু থাকে, সেটা ইসলাম ও এই ধর্মের অনুসারীরা। কারণ, মুসলিম পরিচয়ধারী যারা কাশ্মিরের ঘটনায় উদ্বিগ্ন, তারা পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো দলিল দেখাতে পারবে না যে, মুসলিমরা ধর্মীয়ভাবে ভিন্ন কোনো সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপকভাবে নিপীড়ন চালিয়েছে। (যদিও মুসলিমরা পরস্পরে একাধিক জঘন্য যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। এটা তাদের ব্যর্থতা, কিন্তু ধর্মের নামে অন্যদের তারা কখনো হত্যা করেনি)
ওইসব অতি মানবদরদী মুসলিমদের কাছে আমার প্রশ্ন- ফিলিস্তিনে মুসলিম হওয়ার অপরাধে ইহুদিরা কী নৃশংসতা চালাচ্ছে, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ভয়াবহতা সকলেরই জানা, সেটিও ধর্মীয়ভাবে ঘটানো হয়েছে, আর স্বয়ং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন সেখানে মুসলিমদের ওপর যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলেন, সেটিও নির্যাতিত মুসলিম জাতির এক করুন ইতিহাস। সে সব ঘটনাও কি আপনাদের একইভাবে ব্যথিত করে!?
মুসলিম ঐতিহ্যের দেশ ভারতে ওয়াকফ বিল সংশোধনের নামে শত শত বছরের সম্পত্তি থেকে মুসলিমদের বঞ্চিত করার যে ষড়যন্ত্র করছে উগ্র হিন্দু সন্ত্রাসীরা, এটা কি কখনো আপনার বিবেককে নাড়া দিয়েছে? অত দূরে নয়; মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের ফরিদপুরের মধুখালীতে মুসলিম হওয়ার অপরাধে কয়েকজন তরুণকে হিন্দুরা পিটিয়ে হত্যা করল, তখন কি তাদের উগ্রবাদী ও জঙ্গি মনে হলো না!? বিশ্বব্যাপী বিচ্ছিন্ন এবং বেশিরভাগ সাজানো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই আপনাদের 'মানবতা' কেঁদে ওঠে!?
আরে ভাই/বোন! কাশ্মিরের মতো ঘটনায় হিন্দুরা প্রতিবাদ জানাবে- এটা খুবই স্বাভাবিক। মানুষ হিসেবে অন্যায়ের প্রতিবাদ আপনিও করবেন, এতেও কারো আপত্তি নেই, কিন্তু যখন নিজ জাতি ও ধর্মের ওপর কোনো আঘাত আসে, তখন তো তা একটু যাচাই করে নেবেন! এবং ঘটনা যদি সত্যিই হয় (এমন ঘটনা বিরল), তাহলে তো তার লজ্জার ভাগীদার আপনিও। এরূপ ইস্যুতে সমালোচনা করলে অন্তত ইনসাফ বজায় রাখা তো আপনার আত্মমর্যাদার দাবি। অতি প্রগতিশীল সাজার জন্য নিজের ধর্ম ও জাতিকেই ক্ষতির মুখে ফেলছেন। মনে রাখবেন- যদি এমন সময় আসে (আল্লাহ না করুন) ভারতের মতো ফ্রিজে গরুর মাংস রাখার অপরাধে মুসলিম হত্যা করা হবে, তাহলে আপনিও রেহাই পাবেন না। কারণ, আপনার নামের সঙ্গেও 'মোহাম্মদ', 'হাসান' 'হোসেন', 'আহমেদ' ইত্যাদি শব্দ আছে, নাম শুনলেই তারা বুঝে যাবে- 'আপনি মুসলমান'। আপনার মুসলমান নামের কারণেই আপনি নিহত হবেন। তারা দেখবে না যে, আপনার হৃদয়ে ঈমান আছে কি নেই!?