-68209a1ab13fb.jpg)
মায়ের চেয়ে আপন আর কেউ নেই। পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর শব্দটি হচ্ছে মা। কবির ভাষায়, ‘যেখানে দেখি যাহা, মায়ের মতো আহা, একটি কথায় এতো শুধা মেশা নাই।’
জগৎসংসারের শত দুঃখ-কষ্টের মাঝে যে মানুষটির একটু সান্ত্বনা আর স্নেহ-ভালোবাসা আমাদের সব বেদনা দূর করে দেয়, তিনি হলেন মা। প্রতিটি মানুষ পৃথিবীতে আসা এবং বেড়ে ওঠার পেছনে প্রধান ভূমিকা একমাত্র মায়ের। মায়ের তুলনা অন্য কারো সঙ্গে চলে না।
ইসলাম মাতা-পিতাকে সর্বোচ্চ অধিকার ও সম্মান দিয়েছে। ইসলামের বিধানমতে, আল্লাহ তায়ালার পরেই মাতা-পিতার স্থান।
এ প্রসঙ্গে মহাগ্রন্থ আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তাঁর ইবাদাত ছাড়া অন্য কারোর ইবাদাত কর না, পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার কর৷ যদি তোমাদের কাছে তাদের কোনো একজন বা উভয় বৃদ্ধ অবস্থায় থাকে, তাহলে তাদেরকে “উহ্” পর্যন্তও বল না এবং তাদেরকে ধমকের সুরে জবাব দিও না; বরং তাদের সাথে সম্মান ও মর্যাদার সাথে কথা বল।’ (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত : ২৩)।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের অন্যত্র ঘোষণা করেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করো।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৩৬)
আল্লাহ ফায়সালা করে দিয়েছেন এবং পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘আর আমি (আল্লাহ) মানবজাতিকে নির্দেশ দিয়েছি তারা যেন তাদের পিতা-মাতার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করে; তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছেন ও অতিকষ্টে প্রসব করেছেন এবং লালন পালন করেছেন।’ (সুরা আহকাফ, আয়াত : ১৫)
পিতা-মাতার অধিকার সম্পর্কে হাদিসে বহু জায়গায় বর্ণনা এসেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসুল! কে আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার বেশি হকদার? তিনি বললেন ‘তোমার মা’; সে বলল, ‘তারপর কে? তিনি বললেন, ‘তোমার মা’; সে আবারও বলল, ‘তারপর কে? তিনি বললেন, ‘তোমার মা’। সে পুনরায় বলল, ‘এরপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার পিতা’। (বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফ)।
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আরও এরশাদ করেন, ‘জান্নাত মায়ের পদতলে।’ (মুসলিম)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, তিন রকম দোয়া নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট কবুল হয়। মজলুমের দোয়া, মুসাফিরের দোয়া আর সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া। (তিরমিযী)।
আল্লাহর রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘মা-বাবাই হলো তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২১)।
হাদিসে আরও বলা হয়েছে, ‘যখন কোনো অনুগত সন্তান নিজের মা-বাবার দিকে অনুগ্রহের নজরে দেখে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সওয়াব দান করেন।’ (সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ৪২১)।
আর দয়া ও কোমলতা সহকারে পিতা-মাতার সামনে বিনম্র থাকো এবং দোয়া করতে থাকো এই বলে- ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার পিতা-মাতার প্রতি দয়া কর, যেমন তারা দয়া, মায়া, মমতা সহকারে শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।’ (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত : ২৪)।
মায়ের সঙ্গে সন্তানের নাড়ির সম্পর্ক; যা একটুখানি আঘাত পেলেই সবাই ‘মা’ বলে চিৎকার করে জানান দিয়ে থাকে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার কাছে তার মা অতি মূল্যবান হয়ে থাকে। শুধু মানুষ কেনো? পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণিই তার মায়ের কাছে ঋণী। সে ঋণ শোধ করার কোনো যথাযথ উপকরণ আল্লাহ তাআলা দুনিয়ায় সৃষ্টি করেননি।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকেই বাবা-মায়ের উত্তম সন্তান হওয়ার তাওফিক দান করুন। পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসা রইল। আমিন।
লেখক: বিবিএস (অনার্স) ফার্স্ট ক্লাস, এমবিএস (মাস্টারর্স) ফার্স্ট ক্লাস, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
- বাংলাদেশের খবরের ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠান এই মেইলে- bkislamic247@gmail.com
ডিআর/বিএইচ