Logo

ধর্ম

মসজিদে বিশ্রাম নেওয়া প্রসঙ্গে যা বলছেন আলেমরা

বেলায়েত হুসাইন

বেলায়েত হুসাইন

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫, ১৯:৪৩

মসজিদে বিশ্রাম নেওয়া প্রসঙ্গে যা বলছেন আলেমরা

তীব্র তাপপ্রবাহে পথচারীদের বিশ্রামের জন্য মসজিদ খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানিয়েছেন, বেলা ১১টা থেকে মাগরিব পর্যন্ত পথচারীরা বিশ্রামের জন্য মসজিদে আশ্রয় নিতে পারবেন। তিনি বলেছেন, তীব্র তাপপ্রবাহে আশ্রয়ের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন অঞ্চলে সকাল থেকে মাগরিব পর্যন্ত মসজিদ ও অজুখানা খোলা থাকবে। তবে, প্রশ্ন হচ্ছে- মসজিদ মুসলমানদের প্রধানতম ইবাদতস্থল, এখানে কি ইবাদতের নিয়ত ব্যতীত শুধুমাত্র বিশ্রামের সুযোগ আছে?  

এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম দেশের ঐতিহ্যবাহী কওমি মাদ্রাসা জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম খাদেমুল ইসলামের (গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা) মুহাদ্দিস মুফতী সৈয়দ মাকসূদুল হকের কাছে। তিনি বলেন, মুসল্লিদের নামাজ পড়তে এসে ক্লান্তির কারণে মসজিদে বিশ্রাম নেওয়া-শোয়া নাজায়েয নয়। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, যেন কোনো নামাজি কিংবা ইবাদতকারীর অসুবিধা না হয়। এ ছাড়া মসজিদ ইবাদতের জায়গা, ঘুমানোর জায়গা নয়। তাই মসজিদকে নিয়মিত বিশ্রাম ও শোয়ার স্থান বানানো যাবে না। এই একই মত ব্যক্ত করেছেন 

তরুণ মেধাবী আলেম ও নদওয়াতুল হানাফিয়া বাংলাদেশের পরিচালক শায়খ ইবনুল কালামও। 

আলেম লেখক ও অর্পণ প্রকাশনের প্রকাশক মাওলানা তাকি হাসান মসজিদে বিশ্রাম প্রসঙ্গে আরও একটু সহজ মতামত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসলামে মসজিদ কেবল নামাজ আদায়ের স্থান নয়; বরং এটি ছিল প্রাথমিক যুগে মুসলমানদের সমাজিক, শিক্ষামূলক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে সাহাবিরা মসজিদে সময় কাটাতেন, ইলম শিখতেন, বিশ্রামও নিতেন। ‘আহলে সুফফা’ নামে একদল সাহাবি ছিলেন যারা স্থায়ীভাবে মসজিদের পাশে থাকতেন এবং সেখানেই ঘুমাতেন, বিশ্রাম নিতেন।

তবে তিনি মসজিদে বিশ্রামের ক্ষেত্রে কিছুটা সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মসজিদে বিশ্রাম গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত ও আদব (শিষ্টাচার) রয়েছে। পবিত্র থাকা, মসজিদকে অপবিত্র না করা, অন্যদের ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি না করা- এসব মূলনীতি মেনে চলতে হয়। ইতিকাফ অবস্থায় বা সফরে থাকলে মসজিদে রাত যাপন করাও জায়েজ। অনেক ফকিহ আলেম মসজিদে স্বল্প সময় বিশ্রামকে অনুমোদন দিয়েছেন, যদি তা ইবাদত ও মসজিদের মর্যাদার পরিপন্থী না হয়। অতএব, প্রয়োজনে ও যথাযথ শিষ্টাচার মেনে মসজিদে বিশ্রাম নেওয়া ইসলামে অনুমোদিত, তবে সেটিকে অভ্যাস বা অলসতা প্রদর্শনের মাধ্যম করা উচিত নয়। মূল উদ্দেশ্য যেন হয় আল্লাহর ঘরের সম্মান রক্ষা এবং নিজের শারীরিক ও আত্মিক কল্যাণ অর্জন।

উপরোল্লিখত বিষয়টি বোঝাতে হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে দারুণ একটি ঘটনার অবতারণা করেছেন রাজধানীর হাতিরপুলে অবস্থিত ইস্টার্ন প্লাজা জামে মসজিদের খতিব ও জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুফতি নিজাম বিন মুহিব। তিনি বলেন, একবার প্রিয় নবীজী (সা.) তাঁর কলিজার টুকরা কন্যা ফাতেমা (রা.)-এর ঘরে এসে হজরত আলী (রা.)-কে পাননি। জিজ্ঞেস করলেন, আলী কোথায়? ফাতেমা (রাঃ) বললেন, আমাদের দুজনের মধ্যে সামান্য মনোমালিন্য হয়েছে। ফলে তিনি রাগ করে বাইরে চলে গেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) একজনকে বললেন, আলী কোথায় একটু খুঁজে দেখো তো! লোকটি এসে জানালো আপনার জামাতা আলী (রা.) মসজিদে নববীতে ঘুমিয়ে আছেন। নবীজী (সা.) এসে দেখলেন আলী শুয়ে আছেন, আর তার গায়ে ধুলো-বালি লেগে রয়েছে। নবীজী (সা.) তাঁর গায়ের বালি ঝেড়ে দিচ্ছেন আর বলছেন, ‘ইয়া আবা তোরাব কুম কুম (হে মাটির বাবা, ওঠ ওঠ)।’

মুফতি নিজাম বিন মুহিব বলেন, বুখারি শরিফের এই হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, ঘর-বাড়িহীন দরিদ্র ও ভিনদেশী মুসাফির তো বটেই, স্থানীয়দের জন্যও মসজিদে ঘুমানো জায়েজ। অনুরূপ মসজিদে কাইলূলা (দিবসকালীন বিশ্রাম) করাও জায়েজ। কারণ, জায়েজ বলেই হজরত আলী (রা.) ফাতেমা (রা.)-এর ঘরে বিশ্রাম না করে মসজিদে গিয়ে ঘুমিয়েছিলেন। 

তরুণ এ আলেম আরও বলেন, ইমাম আবু নু‘আইম ইসফাহানী (রহ.) ‘কিতাবুল মাসাজিদে’ হজরত জুবাইর ইবনে মুতইম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী (সা.) বলেন, মেহমান বা স্থানীয় যে কেউ মসজিদে বিশ্রাম নিতে আসলে তাকে বাধা দিও না। অতএব, আমাদের মসজিদগুলো প্রযুক্তির সহায়তায় খোলা রাখা যেতে পারে। তবে, অবশ্যই মসজিদে গমনকারী প্রতিটি ব্যাক্তির কাছে মসজিদটি থাকবে আমানত। মসজিদের কোনো একটি জিনিস যেন খোয়া না যায় বা চুরি না হয়- সেই দিকে আমাদের সবার খেয়াল রাখা এবং সকলের মাঝে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি।

ডিআর/বিএইচ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর