Logo

ধর্ম

ইহতেসাব কী, দায়িত্বশীল মুমিন হওয়ার জন্য কেন এটা জরুরি?

Icon

রাইহান উদ্দিন

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ০৯:০২

ইহতেসাব কী, দায়িত্বশীল মুমিন হওয়ার জন্য কেন এটা জরুরি?

আমরা প্রত্যেকেই কখনো না কখনো ভুল করে থাকি। হতে পারে তা নিজে জেনে শুনে করেছি, আবার কখনো নিজের অজান্তেও তা হতে পারে। জীবনে কখনো ভুল করেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। আমাদের অসচেতনতার কারণে নিজের চোখে নিজের ভুল খুব কমই ধরা পড়ে। তবে অন্য মানুষের চোখে তা খুব সুষ্পষ্টভাবেই ধরা পড়ে। তাইতো রাসুলুল্লাহ (সা.) একজন মুমিনকে অপর মুমিনের আয়না বলে ঘোষণা করেছেন। এজন্য কোনো মুমিনের দৃষ্টিতে অপর মুমিনের দোষ-ত্রুটি ধরা পড়লে তার নৈতিক দায়িত্ব হলো তাকে সংশোধনের চেষ্টা করা। ইসলামে এই সংশোধনের পদ্ধতিকেই ইহতেসাব বলে। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়- ‘অপরের কল্যাণ কামনায় তার ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে পারস্পরিক সংশোধন পদ্ধতিকে ইহতেসাব বলে।’

আমরা সাধারণত কারো ভুল দেখলে তাকে অন্যের উপস্থিতিতে সামনাসামনি কটাক্ষ করে কথা বলি কিংবা তার অনুপস্থিতিতে অন্যের কাছে সমালোচনা করি। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে এর কোনোটিই সঠিক নয়। এই দুই উপায়ে মানুষকে সংশোধন করতে চাইলে এর সফলতা লাভের সম্ভাবনা খুবই কম। বরং তা পারস্পরিক মনোমালিন্য ও শত্রুতা সৃষ্টির কারণ হতে পারে।

তাই এ দুই পদ্ধতিই ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। উভয়টার জন্যই পবিত্র কোরআনে সতর্ক করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এ দুই শ্রেণির লোকদের ব্যাপারে বলেন, ‘ধ্বংস হোক ওইসব লোক যারা মানুষকে কটাক্ষ করে কথা বলে এবং ওইসব লোক যারা মানুষের অনুপস্থিতিতে তার নিন্দা করে।’ (সুরা হুমাযাহ, আয়াত : ১)

ইসলাম কীভাবে সংশোধন করার কথা বলেছে এ বিষয়ে আমরা স্পষ্ট ধারণা পেতে পারি পবিত্র তোরআন থেকে। আল্লাহ তায়ালা হজরত মুসা (আ.) এবং হারুন (আ.)-কে যখন ফেরাউনের কাছে পাঠানোর পূর্বে তাদেরকে নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, ‘অতঃপর তোমরা তাকে নম্র কথা বল, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভীত হবে।’ (সুরা ত্বহা, আয়াত : ৪৪)

যে ফেরাউন আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলো। নিজেকে খোদা বলে দাবি করেছিল, তার সাথে নম্র ভাষায় কথা বলার জন্য আল্লাহ তায়ালা দু’জন মহাসম্মানিত নবীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে এটা স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, ব্যক্তি যতই খারাপ হোক না কেন, তাকে ভুল থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য তাকে নম্র ভাষায় বোঝাতে হবে। তার দোষ-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার সময় তাকে ভুলের জন্য কঠোর ভাষায় শাসন বা বকাঝকা করা যাবে না। আমরা অনেকে অপর মুসলমান ভাইয়ের সামান্য ভুল-ত্রুটি পেলেই অকথ্য ভাষায় তাকে বকাঝকা ও গালিগালাজ করি। অথচ একজন সর্বনিকৃষ্ট পর্যায়ের মুসলমানও ফেরাউনের চেয়ে অনেক গুণে উত্তম। কেননা, ফেরাউন আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকার করেই ক্ষান্ত হয়নি। বরং নিজেকেও খোদা বলে দাবি করেছিল।

আমাদের সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের মন-মানসিকতা সমান নয়। প্রত্যেকের অবস্থা বিবেচনা করে তার ভুল সংশোধনের জন্য চেষ্টা করতে হবে।

কিছু মানুষকে ভুলের ব্যাপারে সতর্ক করা হলে তারা তা বুঝতে পেরে অকপটে স্বীকার করে তাদের ভুল সংশোধন করে নেয়। এ ধরনের লোকদের কোনো ভুল হয়ে গেলে তাদেরকে একাকী গোপনে নম্র ভাষায় সে ভুলের ব্যাপারে সতর্ক করা উচিত। তা না করে সকলের সামনে তিরস্কার করে তাদেরকে লজ্জা দেওয়া অথবা অন্যের কাছে তাদের দোষ প্রকাশ করা খুব অন্যায়। এটা তাদের ইজ্জতের ওপর আঘাত হানার সমতুল্য গোনাহ। আর কোনো মুসলমানের ইজ্জতে আঘাত হানা ইসলামের দৃষ্টিতে মারাত্মক গোনাহের কাজ।

আবার কিছু মানুষ আছে যাদেরকে ভুলের ব্যাপারে সতর্ক করা হলেও তারা ভুল স্বীকার করে না। বরং ভুলের পক্ষে খোঁড়া যুক্তি দেয়। এ ধরনের লোকদের সামনে হিকমতের সাথে অকাট্য যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করে তাদের যুক্তি খণ্ডন করে তাদেরকে লাজওয়াব করার চেষ্টা করা যেতে পারে। এতে তারা যদি তাদের ভুল বুঝতে পেরে সংশোধিত হয় তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ। যদি সত্যকে গ্রহণ করার মানসিকতা তাদের না থাকে তাহলে তাদের সাথে অযথা তর্কে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। তবে তাদের ভুলের দ্বারা যদি অন্য কারো বিভ্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে তাদের ব্যাপারে প্রকাশ্যে সকলকে সতর্ক করা উচিত। এক্ষেত্রেও সীমালঙ্ঘন করা ঠিক নয়। শুধুমাত্র তাদের ভুলের ব্যাপারে উপযুক্ত দলীল-প্রমাণ পেশ করে সকলের সামনে সঠিক তথ্য প্রকাশ করাই কাম্য।

সুতরাং ইহতেসাব বা অপরের কল্যাণ কামনায় তার ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে পারস্পরিক সংশোধনের সুযোগ করে দেওয়া আমাদের সকলের উচিত। এতে অপর ব্যক্তি যেমন ভুল থেকে ফিরে আসার সুযোগ পাবে তেমনি আমাদের অপরের ভুলের ব্যাপারে সতর্ক করার নৈতিক দায়িত্বও পালন করা হবে।

লেখক রাইহান উদ্দিন ।  ছবি : সংগৃহীত

লেখক : শিক্ষার্থী, আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ- তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা, টঙ্গী, গাজীপুর।
মেইল : smraihanuddin550@gmail.com

  • বাংলাদেশের খবরের ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠান এই মেইলে- bkislamic247@gmail.com 

বিএইচ/

 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর