মুফতী খোরশেদ আলম কাসেমী
কোরবানি বিষয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর
প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৫, ১০:১৩

কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিয়মিত আমল। কোরবানির মৌসুমে মুসলমানদের মনে নানা প্রশ্ন উদিত হয়—কার ওপর কোরবানি ফরজ, কোন পশু দিয়ে কোরবানি হবে, কোন পদ্ধতিতে অংশীদারিত্ব হবে ইত্যাদি। এসব বিষয়ে জানতে আমরা কথা বলেছি বাংলাদেশ জাতীয় মুফতি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও রাজধানীর প্রসিদ্ধ কওমি মাদ্রাসা জামিয়া রহীমিয়ার (মোহাম্মদপুর) শাইখুল হাদিস মুফতী খোরশেদ আলম কাসেমীর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলাদেশের খবরের রিলিজিয়াস এডিটর বেলায়েত হুসাইন।
বাংলাদেশের খবর : কার ওপর কোরবানি ওয়াজিব?
মুফতী খোরশেদ আলম কাসেমী : কোরবানি সুন্নাতে মুয়াক্কাদা হলেও সামর্থ্যবানদের জন্য এটি ওয়াজিব। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ একজন মুসলমান, বালেগ, মুকিম (অর্থাৎ মুসাফির নয়) এবং নিজ মালিকানায় নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়। নিসাব হলো—বছর পূর্ণ হওয়ার শর্ত ছাড়াই, প্রয়োজনের অতিরিক্ত ৭.৫ তোলা সোনা বা ৫২.৫ তোলা রুপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ।
বাংলাদেশের খবর : কোন কোন পশু কোরবানির জন্য বৈধ?
মুফতী খোরশেদ আলম কাসেমী : কোরবানির জন্য গরু, উট, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি পশু বৈধ। তবে এগুলোর নির্দিষ্ট বয়স পূর্ণ হওয়া আবশ্যক। উট কমপক্ষে ৫ বছর। গরু/মহিষ কমপক্ষে ২ বছর এবং ছাগল/দুম্বা/ভেড়া কমপক্ষে ১ বছর (তবে এর চেয়ে কম বয়সী ভেড়া বা দুম্বা দেখতে যদি এক বছর বয়সীর মতো হয়, তবে সেটিও বৈধ)। পাশাপাশি পশু সুস্থ হওয়া ও অঙ্গহীন না হওয়া আবশ্যক। চোখ কানা, পা খোঁড়া, খুব রুগ্ন, দাঁত ভাঙা বা কান কাটা পশু কোরবানির উপযোগী নয়।
বাংলাদেশের খবর : গরু বা উটে কয়জন পর্যন্ত অংশ নিতে পারেন?
মুফতী খোরশেদ আলম কাসেমী : হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, ‘আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে হজের ইহরাম বেঁধে রওনা হলাম। এরপর তিনি উট ও গরুতে আমাদের মধ্যে সাতজন করে শরিক হওয়ার (কোরবানি করার) নির্দেশ দিলেন।’ (সহিহ মুসলিম : ১৩১৮, ৩০৪৯) অতএব, গরু বা উটে সর্বোচ্চ সাতজন অংশ নিতে পারেন। তবে প্রতিটি অংশগ্রহণকারীর নিয়ত বিশুদ্ধ হতে হবে। কারও নিয়ত যদি কেবল গোশত নেওয়া হয়, ইবাদতের উদ্দেশ্যে না হয়, তাহলে সেই পশুর কোরবানি সহিহ হবে না এবং অন্যদের কোরবানিও নষ্ট হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের খবর : কোরবানির পশুর মাংস কীভাবে বণ্টন করতে হবে?
মুফতী খোরশেদ আলম কাসেমী : এক্ষেত্রে মুস্তাহাব হলো—কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করা—এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়াপড়শির জন্য, এক ভাগ গরিব-মিসকিনদের জন্য এবং এক ভাগ নিজের পরিবারের জন্য। তবে, কেউ চাইলে সম্পূর্ণটাই নিজেরা খেতে পারে বা গরিবদের দান করতেও পারে—কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, তবে উত্তম হলো তিন ভাগ করা।
বাংলাদেশের খবর : নারীদের ওপর কি কোরবানি ওয়াজিব হয়?
মুফতী খোরশেদ আলম কাসেমী : হ্যাঁ, যদি কোনো নারী মুসলিম, বালেগ, মুকিম এবং তার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তবে তার ওপরও কোরবানি ওয়াজিব হবে। অনেকেই ভুল করে কেবল পুরুষদের দায়িত্ব মনে করেন, অথচ ইসলামে নারীদের ওপরও ইবাদতের দায়িত্বসমূহ রয়েছে, যদি তারা শর্ত পূরণ করেন।
বিএইচ/