
আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে পুরুষ ও নারী- এই দুই রূপে সৃষ্টি করেছেন। কাকে পুত্র, কাকে কন্যা, কাকে উভয় এবং কাকে সন্তানহীন রাখবেন- তা তাঁর অসীম হিকমত ও ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। সেজন্যই কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন, যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন, অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই, আর যাকে ইচ্ছা তাকে করে দেন বন্ধ্যা।’ (সূরা শুরা, আয়াত: ৪৯-৫০)
পুত্র বা কন্যা- দু’টিই আল্লাহর নেয়ামত। কিন্তু কিছু মানুষ কন্যা সন্তান জন্ম হলে অসন্তুষ্ট হয়, স্বামী স্ত্রীর প্রতি রাগ প্রকাশ করে, এমনকি তালাকের হুমকি দেয়- যা ইসলাম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে। পুত্র বা কন্যা- কোনোটিই মানুষের ইচ্ছায় হয় না, বরং এ সবকিছুই আল্লাহর ফয়সালা।
ইসলাম-পূর্ব আরবে কন্যা সন্তান জন্ম হওয়াকে অপমান মনে করে জীবিত কবর দেওয়ার মতো ভয়ংকর কাজ প্রচলিত ছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘তাদের কাউকে যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনোস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। তাকে যে সুসংবাদ দেয়া হয়, তার গ্লানী হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত্মগোপন করে; সে চিন্তা করে যে, হীনতা সত্ত্বেও সে তাকে রেখে দিবে, না মাটিতে পুঁতে দিবে। লক্ষ্য কর, সে কত নিকৃষ্ট সিদ্ধান্ত স্থির করেছিল।’ (সূরা নাহল, আয়াত: ৫৮-৫৯)
এখানে লক্ষ্যণীয়, আল্লাহ কন্যা সন্তান জন্মের সংবাদকে ‘সুসংবাদ’ বলেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) কন্যাদের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মানের বাস্তব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর চার কন্যা- ফাতিমা, যয়নব, রুকাইয়া ও উম্মে কুলসুম (রা.)- কে তিনি বিশেষ স্নেহ ও যত্ন করতেন।
রাসূলুল্লাহ সা. কন্যা সন্তান লালনপালনের জন্য অনন্য পুরষ্কার ঘোষণা করেছেন, পুত্র সন্তানের ক্ষেত্রে যদিও এত বেশি করেননি। হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- ‘যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান বা তিনজন বোন আছে। আর সে তাদের সাথে উত্তম আচরণ করেছে এবং তাদেরকে নিজের জন্য অসম্মানের কারণ মনে করেনি, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯১২)
অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন- ‘যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান বা তিনজন বোন আছে অথবা দু’জন কন্যা সন্তান বা বোন আছে। সে তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করেছে এবং তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করেছে। তার জন্য রয়েছে জান্নাত।’ -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯১৬
হযরত আয়েশা রাযিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তিকে কন্যা সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সে ধৈর্যের সাথে তা সম্পাদন করেছে, সেই কন্যা সন্তান তার জন্য জাহান্নাম থেকে আড় হবে।’ -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯১৩
হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- ‘যে ব্যক্তি দুইজন কন্যা সন্তানকে লালনপালন ও দেখাশুনা করল [বিয়ের সময় হলে ভাল পাত্রের কাছে বিবাহ দিল] সে এবং আমি জান্নাতে এরূপ একসাথে প্রবেশ করব যেরূপ এ দুটি আঙুল। এরপর তিনি নিজের দুই আঙুল মিলিয়ে দেখালেন।’ -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯১৪
এই হাদীসগুলোতে পুত্র সন্তান প্রতিপালনের জন্য এমন ফযীলত উল্লেখ করা হয়নি- তাতেই বোঝা যায় কন্যা সন্তানের মর্যাদা কত বেশি!
কন্যা সন্তান জন্ম হলে করণীয়:
১। আনন্দ প্রকাশ: কন্যা সন্তান জন্ম হলে যেমন খুশি হওয়া উচিত, তেমনি প্রকাশও করতে হবে, যাতে জাহেলী মনোভাবের বিপরীতে ইসলামী সংস্কৃতি দৃঢ় হয়।
২। সমান আচরণ: ভালবাসা, যত্ন, সুযোগ-সুবিধা ও উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ের মধ্যে বৈষম্য করা যাবে না।
৩। আর্থিক হক: বিয়েতে খরচ করা বা যৌতুক দেওয়ার দ্বারা মেয়ের মীরাসের অধিকার শেষ হয়ে যায় না। জীবদ্দশায় কিছু দিলে সমানভাবে দিতে হবে। প্রয়োজনভিত্তিক ব্যয় আলাদা বিষয়।
সুতরাং, কন্যা সন্তানকে অমঙ্গল বা অপমান মনে করা ইসলামী শিক্ষা বিরোধী, বরং তারা আল্লাহর রহমত, জান্নাতের চাবি এবং নবীর সঙ্গ লাভের মাধ্যম। প্রত্যেক মুসলমানের উচিত পরিপূর্ণ খুশি ও তৃপ্তি নিয়ে কন্যাদের লালনপালন করা, তাদের প্রতি ভালোবাসা, ন্যায় ও সম্মান বজায় রাখা।
আইএইচ/