
ইসলাম মুসলমানদের পূতঃপবিত্র জীবনযাপনের নির্দেশ দিয়েছে। এ লক্ষ্যে মুসলিমরা বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে বাধ্যতামূলকভাবে অজু ও গোসল করে থাকে। অজু যেমন বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতা অর্জনের মাধ্যম, ঠিক তেমনি এর মাধ্যমে আত্মিক পবিত্রতাও অর্জিত হয়। হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন কাজ জানাব না, যা করলে আল্লাহ (বান্দার) পাপগুলো দূর করে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি বলুন। তিনি বললেন, (তা হলো) অসুবিধা ও কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণরূপে অজু করা।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৭৫)
আল্লাহর রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘কোনো মুসলিম কিংবা মুমিন বান্দা যখন অজুর সময় মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলে তখন তার চোখ দিয়ে অর্জিত গোনাহ পানির সঙ্গে বা পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে বের হয়ে যায়। যখন সে দুই হাত ধৌত করে তখন তার দুই হাতের স্পর্শের মাধ্যমে সব গোনাহ পানির অথবা পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে ঝরে যায়। অতঃপর যখন সে দুই পা ধৌত করে, তখন তার দুই পা দিয়ে হাঁটার মাধ্যমে অর্জিত সব গোনাহ পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে ঝরে যায়, এমনকি সে যাবতীয় গোনাহ থেকে মুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৬৫)
এ ছাড়াও অজুর আরও অসংখ্য ফজিলত ও উপকারিতা বর্ণিত রয়েছে। পাশাপাশি অজু একজন মুমিন বান্দার ঈমানের পূর্ণতা। কেননা, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘পবিত্রতা (অজু, গোসল, তায়াম্মুম) ঈমানের অর্ধেক।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪২২) এজন্য আমাদের উচিৎ সর্বাবস্থায় অজুর সঙ্গে থাকা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে- অজু ভাঙার একাধিক কারণের একটি হচ্ছে শরীর ছেড়ে ঘুমানো। তাহলে গাড়ির সিটে বসে ঘুমালে কি অজু ভাঙবে? এই প্রশ্নের উত্তর হলো- গাড়ির সিটে যদি মোটামুটি সোজা হয়ে বসা হয় এবং নিতম্ব সিটের সাথে এঁটে থাকে তাহলে এ অবস্থায় ঘুমালে অজু নষ্ট হবে না। এরকম ঘুমানোর পর নামাজ পড়া সহিহ হবে।
তবে গাড়ি যদি চেয়ার কোচ হয়, যার সিট বাঁকালে তার ওপর অনেকটাই বিছানার মতো শোয়া যায় কিংবা স্লিপিং সিট হয়, যার ওপর একেবারে সোজা হয়ে ঘুমানো যায়, এরূপ সিটে ঘুমালে অজু নষ্ট হয়ে যাবে। এবং এমন অবস্থায় ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় সহিহ হবে না। কেননা, এক্ষেত্রে নিতম্ব সিটের সাথে এঁটে থাকে না; বরং খুব সহজেই পেট থেকে বায়ু বের হতে পারে। (রদ্দুল মুহতার: ১/১৪; বাদায়েউস সানায়ে: ১/১৩৫; খুলাসাতুল ফতোয়া: ১/১৯)
আইএইচ/