
মানবজীবন ও পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার অন্যতম মাধ্যম হলো বৃষ্টি। শুষ্ক মাটি যখন পানিশূন্য হয়ে পড়ে, তখন আসমান থেকে নেমে আসা ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি তাকে পুনরায় সজীব করে তোলে। ফসল ফলে, সবুজে আচ্ছাদিত হয় জমিন, প্রাণ ফিরে পায় জীবজন্তু ও মানুষ। এ বৃষ্টিই আল্লাহ তাআলার এক অপার রহমত ও নেয়ামত, যার মাধ্যমে তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য জীবিকার ব্যবস্থা করেন।
পবিত্র কোরআনের বহু স্থানে বৃষ্টির কথা এসেছে- কোথাও তা আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন হিসেবে, কোথাও বান্দাদের জন্য রহমত ও বরকত হিসেবে, আবার কোথাও শাস্তি স্বরূপ। এসব আয়াত আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে আসমান থেকে ঝরা প্রতি ফোঁটা বৃষ্টি মহান আল্লাহর এক অনন্য দান, যা আমাদেরকে কৃতজ্ঞ হতে শেখায় এবং তাঁর অসীম ক্ষমতার দিকে দৃষ্টি ফেরায়। বাংলাদেশের খবরের পাঠকদের জন্য বৃষ্টি সম্পর্কিত এমন ৫ টি আয়াত নিম্নে তুলে ধরা হল-
১. فَلْیَنْظُرِ الْاِنْسَانُ اِلٰى طَعَامِهٖۤ، اَنَّا صَبَبْنَا الْمَاءَ صَبًّا، ثُمَّ شَقَقْنَا الْاَرْضَ شَقًّا، فَاَنْۢبَتْنَا فِیْهَا حَبًّا،وَّ عِنَبًا وَّ قَضْبًا،وَّزَیْتُوْنًا وَّ نَخْلًا،وَّ حَدَآىِٕقَ غُلْبًا،وَّ فَاكِهَةً وَّاَبًّا،مَّتَاعًا لَّكُمْ وَلِاَنْعَامِكُمْ
অর্থ : ‘মানুষ যেন তার খাবারের প্রতি লক্ষ করে। আমি উপর থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করেছি। তারপর ভূমিকে বিস্ময়করভাবে বিদীর্ণ করেছি। তারপর আমি তাতে উৎপন্ন করেছি শস্য, আঙ্গুর, শাকসবজি, জয়তুন, খেজুর, নিবিড় ঘন বাগান এবং ফলমূল ও ঘাসপাতা। তোমাদের নিজেদের ও তোমাদের গবাদি পশুর ভোগের জন্য।’ (সুরা আবাসা: ২৪-৩২)
২. وَنَزَّلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً مُّبٰرَكًا فَاَنْۢبَتْنَا بِهٖ جَنّٰتٍ وَّحَبَّ الْحَصِیْدِ،وَ النَّخْلَ بٰسِقٰتٍ لَّهَا طَلْعٌ نَّضِیْدٌ،رِّزْقًا لِّلْعِبَادِ وَاَحْیَیْنَا بِهٖ بَلْدَةً مَّیْتًا
অর্থ : ‘আমি আকাশ থেকে বর্ষণ করি বরকতপূর্ণ পানি, তারপর তার মাধ্যমে উদগত করি উদ্যানরাজি ও এমন শস্য, যা কাটা হয়ে থাকে। এবং সৃষ্টি করি এমন উঁচু উঁচু খেজুর গাছ, যাতে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ দানা। (এসব) বান্দাদের জীবিকাস্বরূপ এবং (এমনিভাবে) আমি সেই পানি দিয়ে এক মৃত নগরকে সঞ্জীবিত করেছি।’ (সুরা কাফ: ৪৫)
৩. اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَسَالَتْ اَوْدِیَةٌۢ بِقَدَرِهَا فَاحْتَمَلَ السَّیْلُ زَبَدًا رَّابِیًا وَمِمَّا یُوْقِدُوْنَ عَلَیْهِ فِی النَّارِ ابْتِغَآءَ حِلْیَةٍ اَوْ مَتَاعٍ زَبَدٌ مِّثْلُهٗ كَذٰلِكَ یَضْرِبُ اللهُ الْحَقَّ وَ الْبَاطِلَ فَاَمَّا الزَّبَدُ فَیَذْهَبُ جُفَآءً وَاَمَّا مَا یَنْفَعُ النَّاسَ فَیَمْكُثُ فِی الْاَرْضِ كَذٰلِكَ یَضْرِبُ اللهُ الْاَمْثَالَ
অর্থ : ‘তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন। ফলে নদীনালা নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী প্লাবিত হয়েছে, তারপর পানির ধারা স্ফীত ফেনাগুলোকে উপরিভাগে তুলে এনেছে। এ রকমের ফেনা তখনও ওঠে, যখন লোকেরা অলংকার বা পাত্র তৈরির উদ্দেশ্যে আগুনে ধাতু উত্তপ্ত করে। আল্লাহ এভাবেই সত্য ও মিথ্যার দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন যে, (উভয় প্রকারে) যা ফেনা, তা তো বাইরে পড়ে নিঃশেষ হয়ে যায় আর যা মানুষের উপকারে আসে তা জমিতে থেকে যায়। এ রকমেরই দৃষ্টান্ত আল্লাহ বর্ণনা করে থাকেন।’ (সুরা রাদ: ১৭)
৪. اِنَّ اللهَ عِنْدَهٗ عِلْمُ السَّاعَةِ وَ یُنَزِّلُ الْغَیْثَ وَ یَعْلَمُ مَا فِی الْاَرْحَامِ وَمَا تَدْرِیْ نَفْسٌ مَّا ذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِیْ نَفْسٌۢ بِاَیِّ اَرْضٍ تَمُوْتُ اِنَّ اللهَ عَلِیْمٌ خَبِیْرٌ
অর্থ : ‘সন্দেহ নেই, আল্লাহর কাছেই রয়েছে কেয়ামতের ইলম। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন। মাতৃগর্ভে যা আছে, তা কেবল তিনিই জানেন। কেউ জানে না- আগামীকাল সে কী করবে এবং কেউ জানে না- সে কোথায় মারা যাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত।’ (সুরা লুকমান: ৩৪)
৫. وَمِنْ اٰیٰتِهٖۤ اَنْ یُّرْسِلَ الرِّیَاحَ مُبَشِّرٰتٍ وَّ لِیُذِیْقَكُمْ مِّنْ رَّحْمَتِهٖ
অর্থ : ‘তাঁর অন্যতম নিদর্শন- তিনি বাতাস পাঠান, যেন তা (বৃষ্টির) সুসংবাদ দিতে পারে এবং তিনি তোমাদেরকে স্বীয় রহমতের স্বাদ আস্বাদন করাতে পারেন।’ (সুরা রুম: ৪৬)
আইএইচ/