বন্ধু নির্বাচনে ইসলামী নির্দেশনা ও আদর্শ বন্ধুর গুণাবলি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১০:১৭

ইসলাম শুধুই যে ইবাদতের সীমাবদ্ধ বিধান ব্যাপারটি এমন নয়; বরং এই ধর্ম মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা দিয়েছে। ব্যক্তিগত আচার-আচরণ, লেনদেন, রাজনীতি, পারিবারিক সম্পর্ক কিংবা বন্ধুত্ব- সব ক্ষেত্রেই ইসলাম কল্যাণমুখী ও ভারসাম্যপূর্ণ শিক্ষা দিয়েছে। মানুষের জীবনে বন্ধুত্ব একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। কারণ মানুষ সামাজিক জীব, আর সে একা বাঁচতে পারে না। তাই কাকে বন্ধু করা হবে এবং কার সঙ্গ এড়িয়ে চলা হবে- এ ব্যাপারে ইসলাম সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বারবার সতর্ক করেছেন এমন বন্ধুত্ব থেকে, যা মুমিনের ঈমান ও চরিত্র নষ্ট করতে পারে। আল্লাহ এরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না’ (সূরা মুমতাহিনা: ১)। এ আয়াতের মাধ্যমে বন্ধুত্বের সীমারেখা নির্ধারণ করা হয়েছে। যে বন্ধুত্ব ঈমান ও তাকওয়ার ভিত্তিতে দাঁড়ায় এবং নৈতিক উন্নতির মাধ্যম হয়, সেটিই গ্রহণযোগ্য। অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘সেদিন সব বন্ধু একে অপরের শত্রু হয়ে যাবে, তবে মুত্তাকিরা ব্যতিক্রম।’ (সূরা যুখরুফ: ৬৭) অর্থাৎ আখিরাতে কেবল আল্লাহভীতির ওপর দাঁড়ানো সম্পর্কই টিকে থাকবে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের ওপর থাকে। তাই তোমাদের প্রত্যেককে দেখা উচিত সে কাকে বন্ধু বানাচ্ছে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩৭৮) এ হাদিসে স্পষ্ট হয়েছে যে, মানুষের চরিত্র, আচরণ ও আমল তার বন্ধুর দ্বারা প্রভাবিত হয়। সুতরাং মুমিনের উচিত এমন বন্ধুকে বেছে নেওয়া, যার সান্নিধ্যে চরিত্র উন্নত হবে, চিন্তা পরিশুদ্ধ হবে এবং আমল নেক হবে।
নিম্নে ইসলামে আদর্শ বন্ধুর কিছু গুণাবলি উল্লেখ করা হলো-
১. দ্বীনদার ও হালাল-হারামের পার্থক্য বোঝে।
২. সত্যবাদী, সৎ ও বিশ্বস্ত।
৩. গোনাহ থেকে বিরত রাখে এবং নেক আমলে উদ্বুদ্ধ করে।
৪. যার সাথে বসলে আল্লাহর কথা মনে পড়ে ও ঈমান বৃদ্ধি পায়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- ‘তোমার বন্ধু যেন সে-ই হয়, যে তোমাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করায় এবং যার সঙ্গে বসলে তোমার ঈমান বৃদ্ধি পায়।’ (মুসনাদে আহমদ)
এ থেকেই বোঝা যায় যে, সৎ বন্ধু নীরব শিক্ষক, যিনি অজান্তেই আমাদের উন্নতির পথে এগিয়ে দেন। অন্যদিকে খারাপ বন্ধু ধীরে ধীরে মানুষকে গোনাহে প্রবৃত্ত করে। তাই কুরআনে বলা হয়েছে, ‘হায় আফসোস! যদি অমুককে বন্ধু না বানাতাম! সে তো আমাকে পথভ্রষ্ট করেছিল।’ (সূরা ফুরকান: ২৮-২৯)
নবী করিম (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের সম্পর্ক ছিল এই আদর্শ বন্ধুত্বের বাস্তব উদাহরণ। হিজরতের সময় হযরত আবু বকর (রা.) নবীজীর গুহার সঙ্গী ছিলেন; তাঁর সেই সম্পর্ক ছিল বিশ্বাস, তাকওয়া ও আখিরাতমুখী ভালোবাসার দৃষ্টান্ত।
সুতরাং বন্ধু নির্বাচন জীবনের একটি গুরুতর সিদ্ধান্ত। কারণ বন্ধুত্ব আমাদের চরিত্র, আচরণ, চিন্তা ও পরকালের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। ইসলাম আমাদের সেই সুযোগ দিয়েছে, যেন আমরা সঠিক বন্ধু বেছে নিয়ে জান্নাতের পথে একে অপরের সহযাত্রী হতে পারি।
আইএইচ/