জান্নাতুল বাকি : মদিনার পবিত্র কবরস্থানের ইতিহাস ও ফজিলত

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১১:০২

মদিনা শহরের পবিত্র ও ঐতিহাসিক কবরস্থান হলো জান্নাতুল বাকি। এর প্রাচীন নাম ছিলো ‘বাকিউল গারকাদ’। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুধভাই হজরত উসমান ইবনে মযঊন (রা.) ইন্তেকালের পর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়, তাকে কোথায় দাফন করা হবে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমাকে আদেশ দেওয়া হয়েছে তাকে বাকিউল গারকাদে দাফন করতে।’ (মুসতাদরাকে হাকিম, খ.১১, পৃ.১৯৩)। এভাবেই আল্লাহর হুকুমে জায়গাটি চিরকালের জন্য কবরস্থানে পরিণত হয়।
সর্বপ্রথম এখানে দাফন হন হজরত উসমান ইবনে মযঊন (রা.)। এরপর হুজুর (সা.)-এর চাচি ফাতেমা বিনতে আসাদ, পুত্র হজরত ইবরাহিম (রা.), এবং তিন কন্যা- হজরত রুকাইয়া (রা.), হজরত যয়নাব (রা.) ও হজরত উম্মে কুলসুম (রা.)। প্রায় সব উম্মাহাতুল মুমিনিনকে জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়েছে। শুধু হজরত খাদিজা (রা.) মক্কার জান্নাতুল মুআল্লায় এবং হজরত মায়মুনা (রা.) মক্কার বাইরে সরাফ এলাকায় শায়িত আছেন।
এখানেই শুয়ে আছেন হজরত ওসমান (রা.), হুজুর (সা.)-এর দুধমা হালিমা সাদিয়া (রা.), সাহাবায়ে কেরাম, আহলে বাইত ও বহু তাবেয়িন। এই কবরস্থানে ইমাম মালিক (রহ.)-এর কবরও অবস্থিত।
বর্তমানে মসজিদে নববির পূর্বদিকে বিস্তৃত জান্নাতুল বাকি উচ্চ বাউন্ডারিতে ঘেরা। ফজর ও আসরের পর নির্দিষ্ট সময়ে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। তবে ভেতরে কড়া নজরদারি থাকে যেন কোনো বেদআতি কাজ না ঘটে।
সৌদি সরকার দুই দফায় কবরস্থান সংস্কার করেছে- শাহ ফয়সাল (রহ.) এবং শাহ ফাহাদের আমলে। দেয়ালে সাদা মার্বেল ও কালো লোহার জালি বসানো হয়েছে। মৃতদেহ গোসল ও কাফনের জন্য আলাদা স্থাপনাও রয়েছে।
ফজিলত ও হাদিসসমূহ
এই কবরস্থানের বিশেষ মর্যাদা নিয়ে বহু হাদিস পাওয়া যায়। যেমন হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘এক রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) চুপিসারে ঘর থেকে বের হলেন। আমি তাঁর পিছু নিলাম। দেখি তিনি জান্নাতুল বাকিতে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় হাত তুলে দোয়া করছেন। পরে তিনি বললেন, হে আয়েশা! জিবরাইল আমার কাছে এসে আদেশ দিয়েছিলেন, বাকিবাসীদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ৯৭৩)
আরেক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মুমিনদের আবাসস্থলবাসীগণ! তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। তোমরা অচিরেই তোমাদের প্রতিশ্রুত পুরস্কার পাবে। ইনশাআল্লাহ আমরা-ও শিগগিরই তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবো।’
হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম আমার কবর ফাটবে। তারপর আবু বকর (রা.), ওমর (রা.), এরপর আহলে বাইতদের। আমি তাঁদের পাশে এসে একত্র করবো।’ (তিরমিজি, ৩৬২৫; মুসতাদরাকে হাকিম, ৩৬৯১)
হজরত উম্মে কায়েস বিনতে মুহসিন (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামতের দিন সত্তর হাজার মানুষ তাঁদের কবর থেকে এমনভাবে উঠবে যে, তাঁদের চেহারা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল। তাঁরা বিনা হিসাবেই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস ৭০৩৫)
জান্নাতুল বাকি সাধারণ কোনো কবরস্থান নয়। এটি মদিনার ইতিহাস ও ইসলামের মহিমার জীবন্ত দলিল। এখানে শায়িত আছেন নবিজি (সা.)-এর পরিবার, সাহাবায়ে কেরাম ও অসংখ্য অলোকিত ব্যক্তিত্ব। তাই মুসলমানদের জন্য এ স্থান শুধু স্মৃতিবিজড়িত স্থানের পাশাপাশি ঈমানি আবেগ ও দোয়ার পবিত্র ঠিকানা।
আইএইচ/