Logo

ধর্ম

সুন্দর সমাজ গঠনের স্বপ্নদ্রষ্টা আল্লামা আকরাম আলী

Icon

মুফতী খায়রুল হাসান বিন মুজাহিদ

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১৪:৩৯

সুন্দর সমাজ গঠনের স্বপ্নদ্রষ্টা আল্লামা আকরাম আলী

পৃথিবীর ইতিহাসে জন্ম নিয়েছেন অসংখ্য মনীষী। কেউ সভ্যতার পথ দেখিয়েছেন, কেউ আবার উম্মাহকে শিখিয়েছেন আলোকিত জীবনের কৌশল। নবী করিম (সা.)-এর আদর্শকে পূর্ণাঙ্গভাবে তুলে ধরেছেন এমন মহাপুরুষদেরই একজন- ফরিদপুরের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা আকরাম আলী। 

ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ইসলামিয়া আজিজিয়া বাহিরদিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম। ১৯৪৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি জন্ম নেন ফরিদপুরের নগরকান্দা থানার বড় বাহিরদিয়া গ্রামে। বাবা খন্দকার আবদুল মালেক, দাদা খন্দকার ছদরউদ্দিন (রহ.)। ১২ ভাইবোনের সংসারে বেড়ে ওঠা এই মানুষ ছয় ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয়। তাঁর বড় ভাই ছিলেন জেলার প্রখ্যাত আলেম ও বাহিরদিয়া মাদ্রাসার সাবেক মুহতামিম মাওলানা আশরাফ আলী (রহ.)।

২০২২ সালের ১৮ মার্চ। শবে বরাতের রোজা রেখেছিলেন তিনি। সারাদিন সিয়াম সাধনার পর অংশ নিলেন এক মাহফিলে। রাত গভীর হলে আমরা ফেরার পথে। ময়েনদিয়া বাজার পেরিয়ে হঠাৎ গাড়ি নষ্ট হয়ে গেল। চারপাশে নিস্তব্ধতা। বহু চেষ্টা করেও চালু হলো না। তখন হুজুর বললেন, ‘চল, সবাই মিলে ঠেলে নিই।’ আমরা বারবার অনুরোধ করলাম তিনি যেন বসে থাকেন। কিন্তু আশির কোঠায় পৌঁছে যাওয়া বয়সী এই মানুষ, যিনি সারাদিন রোজা রেখে রাত গভীরেও ক্লান্ত হননি, নিজেই নেমে পড়লেন। আমাদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে গাড়ি ঠেলতে লাগলেন। সেই দৃশ্য আজও মনে গেঁথে আছে। মনে হয়েছিল, সত্যিই তিনি আকাবিরদের একজন উজ্জ্বল প্রতিনিধি।

আমার সৌভাগ্য, ২০২০ সালে হবিগঞ্জ থেকে বদলি হয়ে ফরিদপুরের বাহিরদিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দিই। সেখানেই প্রথম তাঁর সঙ্গে দেখা। প্রথম দেখাতেই তাঁর গম্ভীরতা, কথার মাধুর্য আর আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করে।

একদিন স্নেহভরে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘এই মাদ্রাসায় কেমন লাগে?’ আমি উত্তর দিয়েছিলাম, ‘হুজুর, আপনার মতো ব্যক্তিত্বকে কাছে পেয়ে সব কষ্ট ভুলে গেছি। দোয়া করবেন।’ আজও সেই মুহূর্ত হৃদয়ে গেঁথে আছে।

সফরে সঙ্গী হিসেবে সবসময় আমাকে সাথে নিতেন তিনি। শুক্রবারের সফরে তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘ছোট হুজুরকে ডাক দাও।’ সেই সফরগুলো হয়ে উঠত আমাদের জন্য শিক্ষণীয় অধ্যায়।

নামাজের সময় হলে যে মসজিদ সামনে পেতেন, সেখানেই গিয়ে সুন্নত-নফলসহ পূর্ণাঙ্গ নামাজ আদায় করতেন। নামাজ নিয়ে কখনোই তাকে গাফিলতি করতে দেখিনি। 

উস্তাদদের সন্তানদের প্রতিও তাঁর ছিল বিশেষ শ্রদ্ধা। মাওলানা মামুনুল হক ও মাওলানা মাহফুজুল হকের সামনে হাঁটু গেড়ে বসা কিংবা সবার সামনে টুপি খুলে দোয়া চাওয়া- এসব দৃশ্য আজও চোখে ভাসে। এমনকি অবুঝ প্রাণীদের প্রতিও ছিল মমতা। মাহফিলে গেলে বিড়ালের জন্য খাবার নিয়ে যেতেন।

অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে আসা এই মানুষ আলোকিত করছেন প্রজন্মের পর প্রজন্মকে। তাঁর জীবনধারা, বিনয় ও খোদাভীরুতা আমাদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। নিঃসন্দেহে তিনি আমাদের সময়ের জীবন্ত কিংবদন্তি।

সম্প্রতি সংবাদপত্রে পড়লাম, তিনি সালথা–নগরকান্দা আসনে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। খোদাভীরু, সৎ ও ন্যায়পরায়ণ এই মানুষকে জনগণ নিশ্চয়ই বরণ করে নেবে- এমন বিশ্বাস আমার দৃঢ়।

লেখক : সাবেক শিক্ষক বাহিরদিয়া মাদ্রাসা

আইএইচ/ 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর