-68ad1a7f2e467.png)
দোয়া হলো মুমিনের হাতিয়ার, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের এক মহামূল্যবান মাধ্যম। বান্দা যখন দোয়ার মাধ্যমে তার প্রভুর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তখন আল্লাহ তাআলা তার আহ্বান শুনেন। আল্লাহর দরবারে এমন কোনো দোয়া নেই যা অকার্যকর হয়, তবে এর কিছু শর্ত ও শিষ্টাচার রয়েছে। আলোচ্য হাদিসে আল্লাহর অপার রহমত ও ক্ষমার ঘোষণা বর্ণিত হয়েছে, যাতে বান্দা হতাশ না হয়ে সর্বদা আশাবাদী থাকে।
হাদিসের বাণী, আনাস (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে, মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান, তুমি যত দিন পর্যন্ত আমার কাছে দোয়া করতে থাকবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে, আমি তত দিন তোমার গুনাহ মাফ করতে থাকব, তুমি যা-ই করে থাক, আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না। হে আদম সন্তান, তোমার গুনাহ যদি আকাশের উচ্চতা পর্যন্তও পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও তবু আমি তোমাকে ক্ষমা করব, আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না। হে আদম সন্তান, তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাকো, তাহলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪০)
এই হাদিস থেকে শিক্ষা পাওয়া যায় যে, বান্দা যত বড় গুনাহ করুক না কেন, যদি সে আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং শিরক থেকে দূরে থাকে, তবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন।
যে পদ্ধতিতে দোয়া করবেন-
১. নিবিষ্ট মনে দোয়া করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কবুলের দৃঢ় প্রত্যয় রেখে তোমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করবে। জেনে রেখো, উদাসীন ও অমনোযোগী মনের দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করেন না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৭৯)
২. তাড়াহুড়া না করা
মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের দোয়া কবুল করা হয় যতক্ষণ সে তাড়াহুড়া না করে। যেমন সে বলল, আমি দোয়া করলাম কিন্তু তা কবুল হলো না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৮৭)
৩. আশা নিয়ে দোয়া করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন দোয়া করে তখন এভাবে বলা উচিত নয় যে, হে আল্লাহ, আপনি আমাকে ক্ষমা করেন যদি আপনার ইচ্ছা হয়। বরং বড় আকাঙ্ক্ষা পোষণ করবে। কেননা তিনি এমন এক সত্তা, যেকোনো কিছুই দান করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৯৮৮)
৪. অশ্রুসিক্ত হয়ে দোয়া করা
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রভুর প্রার্থনা করো গোপনে অশ্রুসিক্ত হয়ে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৫)
৫. আল্লাহর গুণবাচক নাম নিয়ে দোয়া করা
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। সুতরাং তোমরা তাঁকে সে নামেই ডাকবে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৮০)
মুমিনের দোয়া কখনো ব্যর্থ হয় না
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলমান যখন কোনো দোয়া করে, যাতে কোনো গুনাহের কাজ অথবা আত্মীয়তার বন্ধন ছেদের কথা নেই, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে এ তিনটির যেকোনো একটি দান করেন। হয়তো তাকে তার প্রার্থিত বস্তু দুনিয়াতে দান করেন, অথবা তা তার আখিরাতের জন্য জমা রাখেন, অথবা তার অনুরূপ কোনো অমঙ্গলকে তার থেকে দূরে রাখেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১১১৩৩)
দোয়া হলো বান্দার অন্তরের প্রকাশ এবং আল্লাহর দরবারে নিবেদিত আকুল প্রার্থনা। আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়া কখনো বৃথা যেতে দেন না। তাই দোয়া করার সময় শিষ্টাচারগুলো মেনে, আশা ও দৃঢ় বিশ্বাস রেখে, অশ্রুশিক্ত হয়ে এবং আল্লাহর সুন্দর নামগুলো ব্যবহার করে দোয়া করলে তা অবশ্যই কবুল হবে ইনশাআল্লাহ।
আইএইচ/