Logo

ধর্ম

কোরআনে বর্ণিত যে ৬টি গুণ থাকলে বুঝবেন আপনি জান্নাতি

Icon

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০৯:০৯

কোরআনে বর্ণিত যে ৬টি গুণ থাকলে বুঝবেন আপনি জান্নাতি

জান্নাত হলো মহান আল্লাহ তাআলার অনুগত ও প্রিয় বান্দাদের জন্য প্রস্তুতকৃত চিরস্থায়ী আবাস। এটি এমন এক সুখের ঠিকানা, যেখানে মানুষের কোনো চাওয়া-প্রত্যাশা অপূর্ণ থাকবে না। মুমিনের জীবনের সবচেয়ে বড় কামনা ও স্বপ্ন হলো সেই জান্নাত লাভ করা। 

তবে ঈমান ও আমলের ভিন্নতার কারণে মুমিনরা জান্নাতে বিভিন্ন স্তরের মর্যাদা ও সৌন্দর্য লাভ করবেন। আর সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ জান্নাত হলো জান্নাতুল ফেরদাউস। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা সেখানে পৌঁছানোর জন্য মুমিনদের কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই মুমিনরা সফলকাম হয়েছে। যারা তাদের নামাজে বিনয়াবনত। যারা অনর্থক বিষয় থেকে বিরত থাকে। যারা জাকাত প্রদানে সক্রিয় থাকে। যারা লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। …আর যারা নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা নিজেদের নামাজে যত্নবান থাকে। তারাই উত্তরাধিকার লাভ করবে। তারা শীতল ছায়াময় জান্নাতুল ফেরদাউসের উত্তরাধিকারী হবে, যাতে তারা হবে স্থায়ী অবস্থানকারী।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ১-১১)

এ আয়াতগুলো থেকে মুমিনদের ছয়টি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, যা অর্জন করলে একজন বান্দা জান্নাতুল ফেরদাউসের উত্তরাধিকারী হতে পারে।

১. নামাজে বিনয়াবনত হওয়া

নামাজ মুমিন জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। তবে শুধু নামাজ পড়াই যথেষ্ট নয়; পড়তে হবে একনিষ্ঠভাবে, বিনয়-নম্রতা ও খুশু-খুজুর সঙ্গে। আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘অনেকেই আছে যারা নামাজ পড়ে, কিন্তু রুকন-শর্ত যথাযথভাবে পালন না করায় এবং একাগ্রতা না থাকার কারণে পূর্ণ সওয়াব পায় না। বরং তাদের কারো সওয়াব হয় দশ ভাগের এক ভাগ, নয় ভাগের এক ভাগ, আট ভাগের এক ভাগ, সাত ভাগের এক ভাগ, ছয় ভাগের এক ভাগ, পাঁচ ভাগের এক ভাগ, চার ভাগের এক ভাগ, তিন ভাগের এক ভাগ কিংবা অর্ধেক।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৭৯৬)

২. অনর্থক বিষয় থেকে বিরত থাকা

অর্থহীন কাজ, নিরর্থক কথা ও গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা একজন মুমিনের সৌন্দর্য। কারণ এসব বিষয় শুধু সময় নষ্টই নয়, বরং ঝগড়া-বিবাদ ও দোষচর্চার পথ তৈরি করে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ভালো মুসলিম হওয়ার নিদর্শন হলো, অর্থহীন কাজ পরিত্যাগ করা।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৩১৭)

৩. জাকাত আদায়ে সচেষ্ট থাকা

কোরআন-সুন্নাহতে নামাজের পাশাপাশি বারবার জাকাতের উল্লেখ এসেছে। এটি শুধু একটি ফরজ আমল নয়, বরং সমাজে সম্পদের ভারসাম্য, দারিদ্র্য বিমোচন ও আত্মার পরিশুদ্ধতার মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো, জাকাত দাও, রাসুলের আনুগত্য করো; যাতে তোমরা আল্লাহর রহমত পেতে পারো।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৫৬)

অন্যত্র তিনি বলেন, ‘তোমরা নামাজ আদায় করো ও জাকাত প্রদান করো এবং তোমরা যে নেক আমল নিজেদের জন্য আগে পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা করো আল্লাহ তা দেখেছেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১১০)

৪. লজ্জাস্থানের হেফাজত করা

শরীর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মহান আল্লাহর অমূল্য নিয়ামত। সেগুলোর সঠিক ব্যবহার ও পবিত্রতা রক্ষা করা মুমিনের দায়িত্ব। বিশেষ করে মুখ ও লজ্জাস্থান সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করা হলো-,  ‘কোন কাজ মানুষকে সবচেয়ে বেশি জান্নাতে নিয়ে যায়?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহভীতি, উত্তম চরিত্র ও সদাচার।’ আবার জিজ্ঞেস করা হলো, ‘কোন কাজ মানুষকে সবচেয়ে বেশি জাহান্নামে নিয়ে যায়?’ তিনি বললেন, ‘মুখ ও লজ্জাস্থান।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২০০৪)

৫. আমানত রক্ষা ও অঙ্গীকার পূর্ণ করা

সততা, বিশ্বস্ততা, আমানতদারি ও প্রতিশ্রুতি পালন মুমিন চরিত্রের গুরুত্বপূর্ণ দিক। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রায় প্রতিটি খুতবায় এ কথা বলতেন, ‘যার আমানতদারি নেই, তার ঈমান নেই। আর যে অঙ্গীকার পূর্ণ করে না, তার মধ্যে দ্বিন নেই।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১২৬০৭)

৬. নামাজে যত্নবান হওয়া

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের ওপর ফরজ। মুমিনের জন্য নামাজ অবহেলার সুযোগ নেই। খলিফা ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) তাঁর গভর্নরদের উদ্দেশে লিখেছিলেন, ‘আমার কাছে তোমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো নামাজ। যে নামাজের হেফাজত করল, সে ইসলামকে হেফাজত করল। আর যে নামাজকে নষ্ট করল, সে দ্বীনের অন্যান্য বিষয় আরও বেশি নষ্ট করবে।’ (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদিস : ০৬)

সুতরাং, একজন প্রকৃত মুমিন যদি এ ছয়টি বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে সক্ষম হয় তাহলে সে আল্লাহর অঙ্গীকার অনুযায়ী জান্নাতুল ফেরদাউসের উত্তরাধিকারী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে। 

আইএইচ/

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর