-68ae7885c2b27.png)
ইসলামে বৈরাগ্যের (সন্ন্যাস বা স্বভাববিরোধী জীবনযাপন) কোনো সুযোগ নেই। কারণ ইসলাম হলো ফিতরতের ধর্ম-যা মানুষের স্বভাব-প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই ইসলাম অতিরিক্ত উৎসাহে ধর্মের নামে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক বা স্বভাববিরোধী জীবনযাপনকে সমর্থন করে না।
বরং ইসলামে বিয়ের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিয়ে না করাকে তিরস্কার করা হয়েছে। এ বিষয়ে সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, তিনজন যুবক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রীদের কাছে এসে তাঁর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তাঁদের কাছে বর্ণনা শোনার পর তারা নিজেদের আমলকে তুচ্ছ জ্ঞান করে বলল, ‘আমাদের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তুলনা কী! আল্লাহ তো তাঁর পূর্বাপর সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন।’ তখন একজন বলল, ‘আমি সারারাত জেগে নামাজ পড়ব।’ অন্যজন বলল, ‘আমি সারাজীবন রোজা রাখব, কখনো ভাঙব না।’ তৃতীয়জন বলল, ‘আমি কখনো নারীর কাছে যাব না, সারা জীবন বিয়ে করব না।’
এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের বললেন, ‘তোমরা কি এমন কথা বলেছ? জেনে রাখো! আল্লাহকে ভয় করার ক্ষেত্রে আমি তোমাদের চেয়ে অগ্রগণ্য। তবুও আমি রোজা রাখি এবং ইফতারও করি, নামাজ পড়ি ও ঘুমাই এবং বিয়েও করি। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে বিমুখ হবে, সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (সহিহ বোখারি, হাদিস : ৫০৬৩)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘হে যুবকদল! তোমাদের মধ্যে যে সামর্থ্যবান, সে যেন বিবাহ করে নেয়। কেননা বিবাহ দৃষ্টি সংযত রাখে, লজ্জাস্থান হেফাজত করে। আর যার বিয়ের সামর্থ্য নেই, সে যেন রোজা রাখে। কারণ রোজা রিপুকে দমনকারী।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪০০)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা এমন নারীদের বিবাহ করো, যারা অধিক সন্তান জন্মদানে সক্ষম এবং স্বামীর প্রতি ভালোবাসাপূর্ণ। কেননা আমি কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের সংখ্যাধিক্যে গর্ব করব।’ (সুনান আবু দাউদ, হাদিস : ২০৫০)
চিরকুমার জীবন ইসলামে নিন্দিত
পুরুষ বা নারী যদি পারিবারিক জীবনে একে অপরের হক আদায়ে সক্ষম হয়, তবে ইচ্ছাকৃতভাবে অবিবাহিত জীবন যাপন করার অনুমতি শরিয়তে নেই। হাদিসে এসেছে, উসমান ইবনে মাজউন (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট চিরকুমার থাকার অনুমতি চাইলে, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। (সুনান তিরমিজি, হাদিস : ১০৮৩)
তবে যদি বিবাহের কারণে আল্লাহর ফরজ ও ওয়াজিব আদায় ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, কিংবা স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার পালনে অক্ষমতা স্পষ্ট হয়, তাহলে বিয়ে না করেও থাকা যেতে পারে। (আল-বাহরুর রায়েক : ৩/৮০)
সুতরাং, উপরোল্লিখিত হাদিস থেকে বোঝা গেল যে, ইসলামের দৃষ্টিতে চিরকুমার বা সন্ন্যাসী জীবন গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা হলো- সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবন, যেখানে ইবাদত, দাম্পত্য, পারিবারিক ও সামাজিক অধিকার- সবকিছু যথাস্থানে পরিপূর্ণভাবে পালন করা হয়।
আইএইচ/