Logo

ধর্ম

বিপদের সময় দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যে চারটি আমল করবেন

Icon

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১০:১৫

বিপদের সময় দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যে চারটি আমল করবেন

মানুষের জীবনে কখনোই সবসময় সহজ পথ মেলে না। পারিবারিক সংকট, আর্থিক টানাপোড়েন, শারীরিক অসুস্থতা কিংবা নানা নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিপদ- এসবের মুখোমুখি আমাদের হতেই হয়। নারী বা পুরুষ- যেই হোন না কেন, যখন মনে হবে আপনার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, তখন কী করবেন?

এ ব্যাপারে প্রখ্যাত স্কলার ও ইসলামী চিন্তাবিদ শায়খ আহমাদুল্লাহ কিছু আমল করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অনেকেই এমন কঠিন সময়ে আল্লাহর কাছে ফিরে গেছেন, করেছেন কিছু বিশেষ আমল এবং আশ্চর্যজনকভাবে উপকৃত হয়েছেন। আমরা অনেক সময় ভাবি, আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করছেন না। অথচ হতে পারে- আমাদের দোয়ায় বা আমলে ঘাটতি আছে, কিংবা আল্লাহ এই বিপদের মধ্যেই আমাদের জন্য কল্যাণ রেখেছেন।’

১. ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা)

বিপদের মুহূর্তে প্রথম কাজ হলো আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। আল্লাহর হাদিসে কুদসিতে তিনি বলেন, ‘যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব। যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দেব।’

ইস্তিগফার দোয়া কবুল হওয়ার দরজা খুলে দেয়। সারাক্ষণ ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ পড়তে পারেন- এটি যে কোনো সময়, যে কোনো জায়গায় পড়া যায়। বিশেষত ঘুমানোর আগে ও ফজরের পর বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়লে অন্তরে প্রশান্তি আসে এবং আল্লাহর রহমতে বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

২. নবী করিম (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ

দরুদ শরীফ হলো এমন এক আমল, যা আল্লাহর রহমত ও প্রশান্তি ডেকে আনে। এটি দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম মাধ্যম এবং কিয়ামতের দিন নবী (সা.)-এর সুপারিশ লাভের সুযোগ দেয়।

এক সাহাবি নবীজিকে (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমি দোয়ার মাঝে কতটুকু সময় দরুদ পড়ব?’ নবীজী উত্তর দিলেন, ‘যত বেশি পড়বে, তত ভালো।’ সাহাবি বললেন, ‘তাহলে আমি শুধু দরুদই পাঠ করব।’ তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘তাহলে তোমার সব চিন্তা-দুশ্চিন্তা দূর করে দেওয়া হবে।’

তাই দিনে অন্তত ১০০ বার দরুদ ইব্রাহিম বা সংক্ষিপ্ত দরুদ- ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’-পড়া উচিত। নিয়মিত দরুদ পড়লে মুমিন বিপদের মাঝেও শান্তি ও সান্ত্বনা লাভ করেন।

৩. দোয়া ইউনুস পড়া

নবী ইউনুস (আ.) যখন মাছের পেটে বন্দি হয়েছিলেন, তখন তিনি যে দোয়া করেছিলেন, সেটিই তার মুক্তির কারণ হয়েছিল।

দোয়া :

 لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

বাংলা উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৭ )

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আপনি পবিত্র, আমি তো ছিলাম জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘এই দোয়াটি কোনো মুসলিম বিপদে পড়ে পড়লে, আল্লাহ অবশ্যই তাকে মুক্তি দেবেন।’ (তিরমিজী)

তাই দুশ্চিন্তা, কষ্ট বা ভয়- যে অবস্থায়ই থাকুন না কেন, নিয়মিত এই দোয়া পড়ুন। এটি অন্তরে প্রশান্তি আনে এবং বিপদ থেকে মুক্তির শক্তিশালী মাধ্যম।

৪. ইসমে আজমের দোয়া

কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর কাছে তাঁর গুণাবলি স্মরণ করে সাহায্য চাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় আল্লাহকে ডাকতে পারেন এভাবে-

দোয়া :

وَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ

উচ্চারণ : ওয়া ইলাহুকুম ইলাহু ওয়াহিদ, লা ইলাহা ইল্লা হুয়ার রাহমানুর রাহিম।

অর্থ : আর তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য (আল্লাহ)। তিনি ব্যতিত আর কোনো (সত্যিকার) উপাস্য নেই, তিনি পরম করুণাময়, অতিশয় দয়ালু। (সুরা বাকারা : ১৬৩)

اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۙ الۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ (সুনানে আবি দাউদ ১৪৯৬)

উচ্চারণ : আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহহুয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ুম।

অর্থ : আল্লাহ তিনিই, যিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, (সমগ্র জগতের) নিয়ন্ত্রক।

রাসুলুল্লাহ (সা.) এ নামগুলোকে দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে শিখিয়েছেন। নিয়মিত এ দোয়া করলে আল্লাহর রহমতে কঠিন সময়ও সহজ হয়ে যায়।

সুতরাং, বিপদে পড়ে হতাশ হওয়া উচিত নয়। মহান আল্লাহ আমাদের জন্য সবসময় উত্তম পরিকল্পনা করেন। তাই জীবনের দুঃসময়গুলোতে ইস্তিগফার, দরুদ পাঠ, ইউনুস (আ.)-এর দোয়া এবং আল্লাহর জালাল স্মরণ করার মাধ্যমে তাঁর কাছে সাহায্য চাইলে আল্লাহ অবশ্যই আমাদের উপর রহমত বর্ষণ করবেন।

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর