সপ্তাহের যে ২ দিন রোজা রাখার জন্য রাসূল (সা.) অপেক্ষা করতেন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১৯:৪৪
-68af0bb20267f.png)
রোজা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যেমন উত্তম, তেমন শারীরিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি মাধ্যম। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে দুইদিন পরিমিত খাবার আহরণ করেন এবং অতি ভোজন এড়িয়ে চলে রোজা রাখেন, তারা শারীরিক ও মানসিকভাবেও প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা অনুভব করতে থাকেন।
প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সপ্তাহের দু’টি দিন- সোমবার ও বৃহস্পতিবারে রোজা রাখতেন। এ ব্যাপারে তিনি (সা.) বলেছেন, ‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার দিন বান্দার আমলসমূহ মহান আল্লাহর সামনে হাজির করা হয়। আর রোজা থাকা অবস্থায় আমার আমল আল্লাহর সামনে পেশ করা হোক- এটাই আমি পছন্দ করি। (মুসলিম)।
বিশ্বজগতের মহান চিকিৎসক হজরত মোহাম্মদ মুস্তফা (সা.) আরও বলেছেন, প্রতিটি বস্তুর জাকাত আছে; শরীরের জাকাত রোজা। অতএব, আমাদের শরীরের জাকাত আদায়ের জন্য হলেও রোজা রাখা উচিত।
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে অসময়ে, অসম ভক্ষণ, হজম প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ জন্যই শরীরের অধিকাংশ রোগ সৃষ্টি হয় অস্বাভাবিক খাদ্য গ্রহণের কারণে। তাই ভোজন রসিক বাঙালীদের জন্য সপ্তাহে দুইদিন অর্থাৎ সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা অত্যন্ত জরুরি। এই দুইদিন রোজা রাখার ফলে যেমনিভাবে আমরা আমলের দিক থেকে উপকৃত হবো তেমনি শারীরিক ও মানসিকভাবেও সুস্থ ও সবল থাকতে পারবো।
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের মতে ১৬-১৭ ঘণ্টা ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত থাকার ফলে শরীরের অঙ্গগুলো স্বাভাবিক হতে থাকে এবং পাচনতন্ত্রের উন্নতি হয় এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগ, যেমন- গ্যাস, বদহজম, লিভারের রোগ, জয়েন্টে ব্যথার ঝুঁকি ইত্যাদি কমে যায়। সুতরাং সপ্তাহের পাঁচ দিন যদি আমরা কিছুটা অনিয়ন্ত্রিত খাবার গ্রহণ করেও ফেলি তারপরও এই দুইদিন রোজা রাখার কারণে আমাদের শারীরিক রোগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।
আশ্চর্যের বিষয় হল, এই রোগের উপসর্গ ও কারণগুলো নবীজী (সা.) ১৪০০ বছর পূর্বেই বলে গেছেন।
সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার ৭টি ফজিলত
১। পবিত্র কুরআনে মহান রাব্বুল আলামিন বলেছেন, রোজা আমার এবং আমিই এর প্রতিদান দেব।
২। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) সোমবার এবং বৃহস্পতিবারের রোজার জন্য অপেক্ষা করতেন। (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, নাসাঈ)।
৩। রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা জাহান্নামকে তার থেকে ১০০ বছরের দূরত্বে সরিয়ে রাখবেন। (আস সিলসিলাতুস সহিহাহ: খন্ড-৬, হাদিস নম্বর: ২৫৬৫)।
৪। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা তার এবং জাহান্নামের মাঝে আসমান ও জমীনের দূরত্ব সমপরিমাণ খন্দক তৈরি করে দেবেন। (আস সিলসিলাতুস সহিহাহ: খন্ড-২, হাদিস নম্বর: ৫৬৩)।
৫। রাসূল (সা.) বলেছেন, রোজা এবং কোরআন কেয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা আল্লাহ তাআলা বলবে, হে আমার রব! সে রোজা রাখার জন্য নিজেকে আহার এবং স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত রেখেছিল সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। রাসূল সাঃ বলেন, তখন তার সুপারিশ কবুল করা হবে। (আহমদ: খন্ড-২, হাদিস নম্বর: ১৭৪)।
৬। রাসূল (সা.) বলেন, নিশ্চয় জান্নাতের রাইয়ান নামের একটি দরজা আছে, কেয়ামতের দিন সেখান দিয়ে রোজাদারগণ প্রবেশ করবে। (বুখারী: হাদিস নম্বর: ১৮৯৬, মুসলিম: হাদিস নম্বর: ১১৫২)।
৭। রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, যে রোজা অবস্থায় ইন্তেকাল করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহিহ আল জামে: হাদিস নম্বর: ৬২২৪)।
রোজা যেহেতু আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। তাই ফরজ রোজা ছাড়াও প্রিয়নবী (সা.) ঘোষিত বিশেষ বিশেষ দিনে রোজা রাখার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে আমাদের অগ্রগামী হওয়া খুবই জরুরি। কারণ কোন উসিলায় আল্লাহ আমাদের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন তা আমরা জানি না। তাই সপ্তাহে দু'দিন রোজা রাখার নিয়মিত আমল করলে এমনও হতে পারে তা আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যাবে আর আমরা অনন্তকালের সুখ-শান্তিতে ভরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবো। কেননা আল্লাহর নিকট দীর্ঘ আমলের চেয়ে নিয়মিত আমল বেশি পছন্দ, যদিও তা অল্প হয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রতি সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার এবং সিয়াম-সাধনায় গোনাহ মুক্ত জীবন লাভের তাওফিক দান করুন, আমিন।
আইএইচ/