-68b0381327e05.png)
পবিত্র কাবা ঘরের ইমাম শায়খ আব্দুর রহমান আস-সুদাইস হলেন ইসলাম ধর্মের কণ্ঠস্বর। তার সুমধুর কোরআন তেলাওয়াত বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। শিশু বয়সে কোরআন মুখস্থকারী থেকে ধর্মীয় নেতৃত্বের শীর্ষে পৌঁছানোর তার এই যাত্রা নিষ্ঠা, পাণ্ডিত্য এবং বিশ্বাসের উপর ভিত্তি হয়ে আছে।
তিনি সৌদি আরবের আল-ক্বাসীম এলাকার বুকাইরিয়া শহরে ১৩৮২ হিজরীতে অর্থাৎ ১৯৬১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ছোট বেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী শায়খ সুদাইস মাত্র ১২ বছর বয়সে পুরো পবিত্র কোরআন হিফজ (মুখস্থ) সম্পন্ন করেন। শিক্ষা জীবনে তিনি পড়াশোনা করেছেন রিয়াদে। ১৯৯৫ সালে মক্কার উম্মুল ক্বুরা বিশ্ববিদ্যালয়-এর শরিয়া ফ্যাকাল্টি থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। এছাড়া বিএ (শরিয়াহ) ইমাম মুহাম্মদ ইবন সৌদ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, এমএ (শরিয়াহ) ইমাম মুহাম্মদ ইবন সৌদ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইমাম মুহাম্মদ ইবন সৌদ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর উচ্চশিক্ষা শুরু করেন এবং সেখানে শরিয়াহ বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
কোনো এক অনুষ্ঠানে তিনি ছোট বেলার একটি ঘটনা বলতে গিয়ে খুব আবেগী হয়ে যান। তিনি বলেন, ছোট বেলায় কি একটা দুষ্টুমি করেছিলেন ফলে তার মা তার ওপর রেগে যান। রেগে গিয়ে বলেন, তুই ঘর থেকে বের হয়ে যা, গিয়ে হারামাইনের ‘ইমাম’ হ।
আল্লাহ তাআলা তার মায়ের এই দোয়া কবুল করেছেন। তিনি কা’বা শরীফের ইমাম হওয়ার আগে অনেক ছোট বড় মসজিদের ইমামও ছিলেন।
তিনি উম্মুল ক্বুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর। এর আগে তিনি শরীয়া কোর্টের বিচারপতিও ছিলেন। তার এই গুরু দায়িত্বের পাশাপাশি তিনি সব সময় শিক্ষকতার পেশাকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে পালন করেছেন।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস তার চাচাতো বোন ফাতিমা বিনতে আলি আস-সুদাইসকে বিয়ে করেন। তাদের নয়টি সন্তান রয়েছে- চার ছেলে ও পাঁচ মেয়ে।
যদিও শায়খ তার ব্যক্তিগত পারিবারিক জীবন গোপন রাখেন, তবে জানা যায় যে, তার সন্তানরা ইসলামি আদর্শ ও জ্ঞানচর্চার মধ্যেই বেড়ে উঠছে।
১৯৮৪ সালে তাকে পবিত্র মক্কার মসজিদুল হারামের ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এটি ছিল বিশাল মর্যাদা ও দায়িত্বের পদ, যা তিনি ৪২ বছর ধরে পালন করে আসছেন।
শুধু ইমামতির দায়িত্ব নয়, বর্তমানে তিনি মক্কা ও মদিনার প্রধান দুই মসজিদ বিষয়ক প্রেসিডেন্ট হিসেবেও কাজ করছেন। এই পদে থেকে তিনি মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর ব্যবস্থাপনা, সেবা, সম্প্রসারণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের দেখভাল করেন, যাতে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ হাজী নির্বিঘ্নে ইবাদত করতে পারেন।
মসজিদুল হারামের প্রধান ইমাম ও খতীব হিসেবে তিনি রমজানে তারাবিহর নামাজে ইমামতি করেন এবং জুমার খুতবা দেন, যা সারা বিশ্বে সম্প্রচারিত হয়। তার তিলাওয়াত অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী, আবেগ, স্বচ্ছ উচ্চারণ ও গভীর প্রভাবের জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মুসলমান তাঁর কণ্ঠে কুরআন শুনে আপ্লুত হন।
তিনি খুবই বিনয়ী। সব সময় সাধারণ মানুষদের কাছে থাকতে ভালোবাসেন। কাবা শরীফ ও মসজিদে নববীর প্রধান ইমাম হওয়া সত্বেও এখনো তিনি ক্লিনারদের সাথে বসে ইফতার করতে ও খাবার খেতে পছন্দ করেন। তিনি সব সময় হাস্যোজ্জ্বল থাকেন এবং সবার সাথে হাসি মুখে মন খুলে কথা বলেন।