-68b069a561033.png)
মানবজীবন টিকিয়ে রাখতে ও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য রিজিকের গুরুত্ব অপরিসীম। সেজন্য আল্লাহ তায়ালা মানুষকে হালাল উপায়ে রিজিক অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর যখন জুমার নামাজ শেষ হয়ে যাবে, তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান কর। আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ (সূরা জুমু’আহ, আয়াত: ১০)
মানুষ রিজিকের জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে, আবার রিজিক নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়ে। অথচ আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে আগত প্রতিটি জীবের রিজিক নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কোরআনে এসেছে, ‘পৃথিবীর প্রত্যেক জীবের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর। তিনি জানেন, তারা কোথায় অবস্থান করে এবং কোথায় সমাপ্ত হবে। সবকিছুই এক সুবিন্যস্ত কিতাবে (লওহে মাহফুজে) লিপিবদ্ধ রয়েছে।’ (সূরা হুদ, আয়াত: ৬)
আরও বলা হয়েছে, ‘আকাশেই রয়েছে তোমাদের রিজিক এবং প্রতিশ্রুত সব কিছু।’ (সূরা যারিয়াত, আয়াত: ২২)
রিজিকের জন্য চেষ্টা-সাধনা করা মানুষের স্বাভাবিক দায়িত্ব। তবে প্রকৃত রিজিকদাতা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। যেমন কোরআনে আছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহই হলেন রিজিকদাতা, মহাশক্তিধর ও মহাপরাক্রমশালী।’ (সূরা যারিয়াত, আয়াত: ৫৮)
মানুষের চেষ্টা-সাধনার পরও কখনো রিজিকে প্রাচুর্য আসে, আবার কখনো সংকীর্ণতা দেখা দেয়। এটিই মূলত আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। তিনি বলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কখনো ভয়ভীতি, কখনো অনাহার দিয়ে, আবার কখনো জানমাল ও ফসলাদির ক্ষতির মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫)
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘তোমার রব যাকে ইচ্ছা তার জন্য রিজিক প্রশস্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সংকীর্ণ করে দেন। তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত ও প্রত্যক্ষদর্শী।’ (সূরা বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৩০)
মানুষ সাধারণত রিজিক নিয়ে টেনশন করে থাকে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে আশ্বাস দিয়েছেন, ‘তিনি তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিক দান করেন, যার ধারণাও সে করতে পারে না। আর যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট।’ (সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত: ৩)
আরও বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ব্যতীত এমন কে আছে, যে তোমাদের রিজিক দিতে পারে? যদি তিনি তাঁর রিজিক বন্ধ করে দেন?’ (সূরা মুলক, আয়াত: ২১)
তবে রিজিক মানে যে শুধুই খাদ্য বা সম্পদ ব্যাপারটি এমনও নয়, বরং মানুষের জীবনধারণের প্রয়োজনীয় সবকিছুই রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। সবাইকে সমান রিজিকও দেওয়া হয়নি। কোরআনে এসেছে, ‘যদি আল্লাহ তাঁর সব বান্দাদের প্রচুর রিজিক দান করতেন, তবে তারা পৃথিবীতে সীমালঙ্ঘন করত। তাই তিনি নির্দিষ্ট পরিমাণে যা ইচ্ছা তা-ই নাজিল করেন।’ (সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ২৭)
তাই মানুষের দায়িত্ব হলো হালাল উপায়ে চেষ্টা করা এবং সাথে সাথে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা। কেননা নির্ধারিত রিজিক অবশ্যই বান্দার কাছে পৌঁছাবে। এ বিষয়ে প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘হে মানুষ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং ধন-সম্পদ সংগ্রহে উত্তম পন্থা অবলম্বন করো। কেননা, কারো মৃত্যু হবে না যতক্ষণ না তার জন্য নির্ধারিত রিজিক পূর্ণ হয়। যদিও তা পেতে দেরি হয়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, কেননা আল্লাহ তাঁর নেয়ামত থেকে তোমাদের রিজিক প্রদান করেছেন। আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে আমাকে (রসুলকে) ভালোবাস আর আমার ভালোবাসা পেতে হলে আমার আহলে বাইতকে (আনুগত্যকে) ভালোবাস। ’ (তিরমিজি শরিফ)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর ওপর যথাযথ ভরসা করতে, তবে আল্লাহতায়ালা তোমাদের পাখির ন্যায় রিজিক দান করতেন। পাখি সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় বাসা থেকে বের হয়ে যায় এবং সন্ধ্যায় উদরপূর্তি করে ফিরে আসে।’ (মুসনাদে আহমদ, ১/৩০, তিরমিজি, ২৩৪৪)।