-68b65da495862.png)
একজন বান্দা যখন আল্লাহর নিকট কায়মনোবাক্যে দোয়া করে তখন সেটি একটি ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়। যে ব্যক্তি নিজের প্রয়োজন ও আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মহান আল্লাহর কাছে হাত তোলে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি খুশি হন। আর যদি কেউ তাঁর কাছে দোয়া না করে, তবে তিনি অসন্তুষ্ট হন। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করে না, আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।’ (তিরমিজি: ৩৩৭৩)
তবে অনেকে অনেক দোয়া করেও তা কবুল হতে দেখে না। এর পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। দোয়া কবুল হওয়ার জন্য যেমন সঠিকভাবে চাইতে হয়, তেমনি চাইবার উপযুক্ত অবস্থায় থাকা জরুরি।
দোয়া কবুল না হওয়ার কারণসমূহ
১. হারাম উপার্জন ও হারাম পানাহার
হারাম উপার্জন, হারাম খাদ্য ও পোশাক দোয়া কবুলের পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়। রাসূল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ পবিত্র; তিনি কেবল পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন। … একজন মানুষ সফরে থাকে, এলোমেলো চুল, ধুলোমাখা দেহ, সে হাত আকাশের দিকে তুলে বলে, ‘হে আমার রব, হে আমার রব!’ অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং সে হারাম দ্বারা লালিত। এমন অবস্থায় তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে?’ (সহিহ মুসলিম: ১০১৫)
আরেক হাদিসে এসেছে, ‘মানুষের ওপর এমন এক যুগ আসবে, যখন তারা পরোয়া করবে না, হালাল উপায়ে নাকি হারাম উপায়ে সম্পদ অর্জন করেছে।’ (বুখারি: ২০৮৩)
এছাড়া রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ পবিত্র, তিনি হালাল ও পবিত্র ছাড়া আর কিছু গ্রহণ করেন না।’ (মুসলিম: ২২৩৬)
২. দোয়ায় ইখলাসের অভাব
দোয়া একটি ইবাদত। আর ইবাদতের মূল শর্ত হলো একমাত্র আল্লাহর জন্য ইখলাস সহকারে দোয়া করা। রাসূল (সা.) বলেন, ‘দোয়া হলো ইবাদত।’ (আবু দাউদ: ১৪৭৯) ইখলাসহীন দোয়া অনেক সময় কবুল হয় না।
৩. গুনাহ বা আত্মীয়তা ছিন্ন করার দোয়া
গুনাহর কাজে কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে করা দোয়া কবুল হয় না। রাসূল (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে দোয়া করে, যদি তা গুনাহ বা আত্মীয়তা ছিন্ন করার বিষয় না হয়, তবে আল্লাহ তাকে তিনটির যেকোনো একটির মাধ্যমে তা কবুল করবেন। ১) তাৎক্ষণিকভাবে কাঙ্ক্ষিত জিনিস দেন। ২) আখিরাতের জন্য সঞ্চিত রাখেন। ৩) অথবা দোয়ার বিনিময়ে কোনো বিপদ দূর করে দেন।’ (আত-তারগিব: ১৬৩৩)
৪. গুনাহে অবিচল থাকা
যে ব্যক্তি গুনাহ থেকে বিরত হয় না, তার দোয়া কবুলে অন্তরায় সৃষ্টি হয়। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে।’ (সুরা রা‘দ: আয়াত ১১)
৫. দোয়ায় অমনোযোগী হওয়া
মনোযোগ ও পূর্ণ বিশ্বাস ছাড়া দোয়া কবুল হয় না। রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা পূর্ণ আস্থার সঙ্গে আল্লাহর কাছে দোয়া করো। জেনে রাখো, আল্লাহ অমনোযোগী ও অসাড় হৃদয়ের দোয়া কবুল করেন না।’ (তিরমিজি: ৩৪৭৯)
৬. তাড়াহুড়া করা
দোয়া কবুলে তাড়াহুড়া করলে কবুল হওয়ার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের দোয়া কবুল হয়, যতক্ষণ না কেউ তাড়াহুড়া করে বলে- ‘আমি দোয়া করলাম, কিন্তু কবুল হলো না।’ (বুখারি: ৬৩৪০)
৭. সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ না করা
মুসলিম সমাজে নেক কাজের প্রচার ও অন্যায় প্রতিরোধ না করলে দোয়া কবুল হয় না। রাসূল (সা.) বলেন, ‘শপথ সেই সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই সৎকাজের নির্দেশ দিবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে, নতুবা আল্লাহ তোমাদের ওপর শাস্তি পাঠাবেন। এরপর তোমরা দোয়া করবে, কিন্তু তোমাদের দোয়া কবুল হবে না।’ (তিরমিজি: ২১৬৯)
৮. দ্রুত ফল না পাওয়ায় দোয়া ছেড়ে দেওয়া
যারা অস্থির হয়ে দোয়া বন্ধ করে দেয়, তাদের দোয়া থেকে বরকত উঠে যায়। রাসূল (সা.) বলেন, ‘বান্দা আল্লাহকে ডাকলে তাঁর ডাকে সাড়া দেওয়া হয়, যতক্ষণ না সে বলে- ‘ডাকলাম তো, কিন্তু সাড়া পেলাম না।’ (বুখারি: ৬৩৪০)
৯. আল্লাহর প্রজ্ঞা
অনেক সময় আল্লাহ তাৎক্ষণিকভাবে দোয়া কবুল না করে বান্দার জন্য আরও উত্তম কিছু সংরক্ষণ করে রাখেন। রাসূল (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলিম যদি পাপ বা আত্মীয়তা ছিন্ন করা ছাড়া অন্য বিষয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ তিনভাবে তা কবুল করেন- ১) তাকে চাওয়া জিনিস দেন। ২) আখিরাতের জন্য সঞ্চিত রাখেন। ৩) অথবা সমপরিমাণ বিপদ দূর করেন।’ (তিরমিজি: ৫/৫৬৬; আহমাদ: ৩/১৮)
বান্দার জন্য দোয়া হলো আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মাধ্যম। তাই দোয়া কবুলে বাধা সৃষ্টি করে এমন কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে দোয়া কবুলে অন্তরায় সৃষ্টিকারী অভ্যাসগুলো ত্যাগ করার তাওফিক দিন এবং সঠিকভাবে দোয়া করার সুযোগ দান করুন, আমিন।
আইএইচ/